ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী বা সংবিধান সংশোধন করে দুভাবেই নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে বলে মনে করে বিএনপি। এ দুটি দিক মাথায় রেখে ‘নির্বাচনকালীন সরকারের’ দুটি ফর্মুলার খসড়া চূড়ান্ত করেছে দলটি।
দুই প্রস্তাবেই বলা হয়েছে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী অথবা প্রধান উপদেষ্টা এবং এর ১০ উপদেষ্টার অরাজনৈতিক এবং আস্থাভাজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি হতে হবে।
তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না কিন্তু সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। বিএনপি ও ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত দলগুলোর একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিএনপির এই নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাবটি অনেকটাই বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মতো। এতে প্রধান উপদেষ্টা ও দশ উপদেষ্টার সবাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ হন। তারা নির্বাচনে প্রার্থিতাও করেন না। ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনটি সাধারণ নির্বাচন ওই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। পরে ২০১১ সালের জুনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ওই ব্যবস্থা বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার।
‘নির্বাচনকালীন সরকারের’ রূপরেখা প্রণয়ন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে এর যে কোনো একটির মাধ্যমে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে বলে মনে করছেন দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘চলতি মাসেই রূপরেখা দেওয়ার চেষ্টা করব। কীভাবে এই নির্বাচনকালীন সরকার হওয়া উচিত এ নিয়ে আমাদের প্রস্তাবনা দেব।’
জানা গেছে, বছর দুয়েক ধরে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন বিএনপির কয়েকজন অভিজ্ঞ নেতা ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ। ইতোমধ্যে দুটি ফর্মুলা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে সংবিধান অনুযায়ী একটি ফর্মুলা এবং সংবিধান সংশোধন করে আরেকটি ফর্মুলা তৈরি করা হয়েছে। উভয় খসড়া এখন দলের স্থায়ী কমিটির নেতাদের পাশাপাশি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নেতাদেরও মতামত নেওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগেই রূপরেখা নিয়ে কাজ শুরু হয়। উপযুক্ত সময়ে ফর্মুলাটি দেওয়া হবে বলে জানিয়ে আসছিল দলটি। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া যুক্ত হওয়ার পর বিএনপি চাইছে, বৃহৎ জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে এ ফর্মুলা উত্থাপন করে জনমত গড়ে তুলতে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শিগগিরই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আমরা একটি গাইডলাইন দেব। সেটিই হবে নির্বাচনকালীন সরকারে রূপরেখা। এটি উত্থাপন করার আগে সবার মতামত নেওয়া হবে।’
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, বৃহৎ জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে ফর্মুলাটি দেওয়া হলে দেশে-বিদেশে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হবে, যা সরকারকে চাপে ফেলবে। প্রস্তাবগুলো জাতির সামনে তুলে ধরার পর বিভিন্ন দাতাসংস্থা ও বিদেশিদেরও এ নিয়ে ব্রিফ করতে পারে দলটি। অথবা সংবাদ সম্মেলনে বিদেশিদের আমন্ত্রণ করে তাদের হাতে প্রস্তাবটি দেওয়া হতে পারে।
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে হলে যে ফর্মুলাঃ
এক. রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। ২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক উন্মুক্ত আদালতে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত রায়ের আলোকে কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতিদের নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।
দুই. সংবিধানের ৫৭ (২) অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙে দেওয়ার জন্য লিখিত পরামর্শ দান করবেন এবং রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেবেন। সংবিধানের ৫৮ (৪) অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন এবং তার পদত্যাগের পর পরই মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত বিবেচিত হবে।
অথবা সংবিধানের ১২৩(৩)(খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সংসদ ভেঙে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ প্রদান করবেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে মেয়াদপূর্তির আগেই রাষ্ট্রপতি দশম সংসদ ভেঙে দেবেন। সংবিধানের ৫৭(১)(খ)/৫৮(৪) অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন। তার পদত্যাগের পরপরই মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত বিবেচিত হবে।
বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদটি নিম্নরূপ : ১২৩(৩)(ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে; এবং (খ) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে; তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্য রূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।
তিন. প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদ প্রয়োগ না করে সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একজন প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের একক সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন।
চার (ক). সংবিধানের ৫৬(২) এর ধারা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীসহ এক-দশমাংশ মন্ত্রী অনির্বাচিতদের মধ্য থেকে মনোনীত হতে পারবেন, তবে তাকে অবশ্যই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে। সংবিধানের এই বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সবার কাছে আস্থাভাজন একজন বিশিষ্ট নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। তবে শর্ত থাকে, রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য, কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা এর অঙ্গ-সংগঠনের সদস্য বা সম্পৃক্ত নন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী নন বা প্রার্থী হবেন না এমন একজন ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন।
খ) রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ১০ জন উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। তবে শর্ত থাকে, রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য, কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা এর অঙ্গ-সংগঠনের সদস্য বা সম্পৃক্ত নন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী নন বা প্রার্থী হবেন না এমন একজন ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করিবেন। তারা যেহেতু মন্ত্রী থাকবেন না, তাই তাদের শপথ গ্রহণের প্রয়োজন পড়বে না।
গ) প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এবং অপর ১০ জন উপদেষ্টার সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার গঠিত হবে।
ঘ) এভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী সংবিধান প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা এবং পারিশ্রমিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। উপদেষ্টারা মন্ত্রীর পদমর্যাদা এবং পারিশ্রমিক ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন।
ঙ) রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে নিজ হাতে লিখিত ও নিজের স্বাক্ষরযুক্ত পত্রের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বা যে কোনো উপদেষ্টা পদত্যাগ করতে পারবেন।
পাঁচ. নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার অনধিক ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবে।
ছয়. নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার নির্বাচনকালীন কেবল রাষ্ট্রের দৈনন্দিন রুটিন কার্যাবলী দেখাশোনা করবে। এ সরকার অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করবে। এই সরকার কোনোরূপ নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না।
সাত. বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগসমূহের সর্বাধিনায়কতা বিষয়ে সংবিধানের ৬১ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে যে, ‘বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগসমূহের সর্বাধিনায়কতা রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত হইবে এবং আইনের দ্বারা তাহার প্রয়োগ নিয়ন্ত্রিত হইবে’। সংবিধানের ৬১ অনুচ্ছেদের ‘নিয়ন্ত্রিত হইবে’ শব্দগুলির পরিবর্তে ‘নিয়ন্ত্রিত হইবে এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার বলবৎ থাকাকালীন মেয়াদে উক্ত আইন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পরিচালিত হইবে’ শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে।
আট. নতুন সংসদ গঠিত হওয়ার পর নতুন প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে তার পদের কার্যভার গ্রহণ করেন সে তারিখে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার বিলুপ্ত হবে। (* যেহেতু মেয়াদ অবসানের পূর্বেই সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে, সেহেতু নতুন করে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত প্রধানমন্ত্রীর আস্থা ভোটের প্রয়োজন হবে না। * সংবিধানের ১২৩ (৩) (খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। * সংবিধানের ৫৭(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদের সমর্থন হারালে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন। যেহেতু বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থন হারানোর কোনো কারণ ঘটেনি, অপর দিকে সমঝোতার ভিত্তিতে সংবিধানের ১২৩ (৩)(খ) অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করলে সংসদ ভেঙ্গে যাবে, অন্তর্বর্তীকালীন/ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ ঘটবে এবং পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেহেতু ৫৭(২) অনুচ্ছেদ প্রয়োগ না করে ১২৩ (৩)( খ) অনুযায়ী মেয়াদ অবসানের পূর্বেই সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার এবং ৫৭(১) অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের কথা বলা হয়েছে। * সংবিধানের ১২৩ (৩)(খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ ভেঙ্গে গেলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এভাবে সংসদ ভেঙ্গে গেলে বর্তমান সংসদের সংসদ সদস্যদের তাদের মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সংসদ সদস্যরূপে বলবৎ থাকার সুযোগ থাকবে না। উল্লেখ্য, যে কেবল ১২৩(৩)(ক) অনুযায়ী মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙ্গে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ, ১২৩ (৩) (ক) উপদফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্যরূপে কার্যভারগ্রহণ করবেন না, অর্থাৎ বর্তমান সংসদ সদস্যগণের সদস্য পদ বলবৎ থাকবে।
নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে কে থাকবেন জানতে চাইলে মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘কে থাকবেন সেটা তো রাষ্ট্রপতিকে আমরা যে রূপরেখা দেব তাতে থাকবে, আমরা উপায় বের করব।’
সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচন করতে হলে যে ফর্মুলাঃ
এক. বর্তমান জাতীয় সংসদ ২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক উন্মুক্ত আদালতে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত রায় এবং পরবর্তীতে প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়কে বিবেচনায় নিয়ে সমঝোতার ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার’ নামে একটি নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার প্রবর্তন করতে পারে এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংশোধিত নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার এর তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হতে পারে। সংবিধানের এই সংশোধনী সুপ্রিমকোর্টের রায়ের চেতনার প্রতিপালন হিসাবেও বিবেচিত হবে।
দুই .সুপ্রিমকোর্টের রায়ের আলোকে কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতিদেরকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। এই নতুন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ওই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন।
তিন. সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের (৩) দফা নিম্নরূপভাবে প্রতিস্থাপিত হবে, যথাঃ ‘(৩) মেয়াদ অবসানের কারনে অথবা মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’
চার. রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেবেন এবং প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদ পদত্যাগ করবেন।
পাঁচ. ক) প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে এবং অপর ১০ জন উপদেষ্টার সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার গঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একজন বিশিষ্ট ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে উক্ত সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য, কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা এর অঙ্গ-সংগঠনের সদস্য বা সম্পৃক্ত নন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী নন কিংবা প্রার্থী হবেন না এবং ৭২/৭৫ বৎসরের অধিক বয়স্ক নন এরূপ ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন। উক্তরূপে যোগ্যতা হারালে তিনি প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে বহাল থাকবেন না। প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে পুনরায় আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে অপর একজন বিশিষ্ট ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে উক্ত সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন।