ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ‘আচ্ছা বিসিবি যে প্রতি মাসে হাজার হাজার ডলার দিয়ে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং (পেস ও স্পিন বোলিং কোচ ভিন্ন) কোচসহ, এক গাদা বিদেশি ট্রেনার, ফিজিও পুষছে- তার কার্যকরিতা কি?’
বিশেষ করে প্রশিক্ষক কোর্টনি ওয়ালশের মতো বিশ্ব মানের ফাস্ট বোলারের পারফরম্যান্স নিয়ে কয়েক বছর ধরেই একটা চাপা- অস্ফুট অভিযোগ-অনুযোগ, ওয়ালশ কি করেন? তার মতো এমন কিংবদন্তিতুল্য ফাস্ট বোলারের অধীনে পেস বোলিং ডিপার্টমেন্টের আয়-উন্নতি কই? বাংলাদেশের পেস বোলিং ডিপার্টমেন্টে ওয়ালশের ছোয়ায় কি এমন উন্নতি হয়েছে?
বাংলাদেশ জাতীয় দল ওয়ানডে ফরম্যাটে ধারাবাহিকভাবে মোটামুটি ভালো খেলে একটা পর্যায়ে যাবার পরও এ প্রশ্ন প্রায়ই শোনা যায় ক্রিকেট অনুরাগীদের মুখে। এবার বাংলাদেশ ভক্ত, সমর্থক ও অনুরারীরা আরও ক্ষুব্ধ, রীতিমতো বিস্ফোরিত।
নাহ এবার আর ওয়ালশের ওপর নয়। সবার লক্ষ্য বস্তু এখন টিম বাংলাদেশের ফিজিও থিহান চন্দ্রমোহন। তার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স শুধু প্রশ্নই জাগায়নি, রীতিমতো ক্ষোভেরও জন্ম দিয়েছে। দেশের ক্রিকেটাঙ্গন এখন রীতিমত বিষ্ফোরনমুখ ছাড়িয়ে রীতিমতো অগ্নি স্ফুলিঙ্গ বের হচ্ছে। সবার ক্ষোভ, অভিযোগ ও অনুযোগের কেন্দ্র বিন্দু এখন বাংলাদেশ জাতীয় দলের শ্রীলঙ্কান ফিজিও থিহান চন্দ্র মোহন।
ভক্ত, সমর্থক ও অনুরাগী সবার মুখে এখন একটাই প্রশ্ন, ‘আচ্ছা বাংলাদেশের ফিজিও থিহান চন্দ্র মোহন কি করেন? সাকিব আল হাসানের মতো শীর্ষ ক্রিকেটার ও অতি গুরুত্বপূর্ণ পারফরমারের বাঁ-হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলের ভিতরে যে এত বড় ইনফেকশন হয়েছে, তিনি কি তা টের পাননি? সে ইনফেকশনের প্রভাবে সাকিবের এশিয়া কাপ খেলা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে এমনকি আঙুল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে- থিহান চন্দ্র মোহন কি তা বোঝেননি? নাকি বুঝেও গ্রাহ্য করেননি?’
যেহেতু ফিজিওর কাজই হচ্ছে , ক্রিকেটারদের দেখভাল করা। তাদের শারীরিক অবস্থা কেমন, কারো কোন ইনজুরি আছে কি-না? থাকলে তার ধরন কেমন? এসব জেনে, খোঁজ নিয়ে তার যথাযথ প্রতিকারের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে এখন সাকিবের বাঁ-হাতের কনিষ্ঠা আঙুলে যে এত বড় ইনফেকশন হয়েছে, তার বড় দায় বর্তায় ফিজিওর ওপর। আর কারো চোখে না পড়ুক, থিহান চন্দ্রমোহনের তো জানা-বোঝার কথা সাকিবের আঙুলে আসলে কি হয়েছে?
ভিতরে ভিতরে সাকিবের ফ্র্যাকচার হওয়া আঙুলে যে বড় ইনফেকশন হয়েছে ফিজিও নাকি তার কিছুই টেরই পাননি। তাই প্রশ্ন উঠেছে, তার যোগ্যতা, দক্ষতা ও সামর্থ্য এবং মান নিয়ে। সবাই সাকিবের আঙুলের ইনফেকশন গাঢ় হয়ে যাবার জন্য ফিজিওকেই দায়ী করছেন।
জানা গেছে বিসিবিও বিষয়টি খুঁটিয়ে দেখছে। যদিও বিসিবি প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী থিহান চন্দ্রওেমাহনকে আসামীর কাঠগড়ায় দাড় করাতে রাজি নন। দেবাশীষ চৌধুরীর কথা, ‘আমার মনে হয়না সাকিবের ইনফেকশনের জন্য ফিজিওকে সেভাবে দায়ী করা যায়। বরং তিনি খানিক রসিকতার সুরে বলেন, ফিজিওর চেয়ে যে ব্যাকটেরিয়ার কারনে সাকিবের ইনফেকশনটির উৎস বা জন্ম হয়েছে, আমি বরং সেটিকেই দুষতে চাই।’
ডা. দেবাশীষের এ মন্তব্যে একটা অন্তর্নিহিত বার্তা আছে; কোন অযত্ন-অবহেলা কিংবা ফ্র্যাকচার হওয়া আঙুল নিয়ে এশিয়া কাপ খেলার কারণেই শুধু নয়, সাকিবের আঙুলে বড় সড় ইনফেকশন হয়েছে মূলত ব্যাকটেরিয়া থেকে।
যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে ফিজিও কেন তা ধরতে পারলেন না? সাকিবের বাঁ-হাতের কনিষ্ঠা আঙুলের ভিতরে যে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিয়েছে এবং এটা দ্রুত চিকিৎসা না করালে আরও প্রবল হয়ে দেখা দিতে পারে এবং সাকিবের আঙুলের বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে- ফিজিও চন্দ্রমোহন কি তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি? নাকি তার ঐ ব্যাকটেরিয়া বা ইনফেকশন সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই?
ক্রিকেট পাড়ার প্রায় সবার মুখে এ প্রশ্ন। এ বিষয়ে বিসিবির আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা কি? সাকিবের মত এমন একজন ভাইটাল প্লেয়ার, টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের আঙুলের ইনফেকশন হওয়া এবং ফিজিওর ভূমিকা নিয়ে বোর্ডের অভ্যন্তরের প্রতিক্রিয়াই বা কি? তা জানতেও রাজ্যের কৌতূহল-উৎসাহ সবার।
বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খানের কথায় পরিষ্কার , বিসিবি বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছে এবং এ বিষয়ে ফিজিওর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।
‘আমরা বোর্ড থেকে ফিজিওর কাছে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা চাইবো’- সরাসরি এমন মন্তব্য না করলেও আজ (শনিবার) রাতে জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপে বিসিবি ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি প্রধান আকরাম খান পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, ফিজিওর কাছ থেকে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হবে।
সাকিবের মত প্লেয়ারের আঙুলে এমন ইনফেকশন হয়ে গেলো, ফিজিও তা টেরই পেলেন না, বা পেয়ে কোন রকম প্রতিশোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন না কেন? সে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও জানতে চাওয়া হবে।
আকরাম জানান, ‘যেহেতু ফিজিও ছুটিতে দেশে ফিরে গেছেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অনুশীলন শুরুর আগে তিনি আসার পর তার সাথে বসেই এ বিষয়ে কথা বলা হবে। তার কথা শোনা হবে। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নিব কি করবো?’
তার মানে অনানুষ্ঠানিক ভাবে কারন দর্শানো নোটিশই পাচ্ছেন থিহান চন্দ্রমোহন। জানা গেছে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারলে ফিজিও থিহান চন্দ্রমোহনের ভাগ্য ঝুলে যেতে পারে। সামনে কয়েক মাস পর বিশ্বকাপ। তার আগে সাকিবের মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারের ইনজুরি এত ঘোলাটে হয়ে পড়ার পরও যে ফিজিও টের পান না, বুঝতে পারেন না এবং যথাযথ কার্যকর ও প্রতিশোধক ব্যবস্থা নিতে পারেন না- তাকে দায়িত্বে রাখায় আছে রাজ্যের ঝুঁকি। আগামীতে যে এমন ঘটনা আরও ঘটবে না, তাই বা কি করে বলা? তার নিশ্চয়তাও বা কি?
মোদ্দা কথা, চন্দ্রমোহনের সামর্থ্য এবং দায়িত্ব সচেতনতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। তাকে স্বপদে বহাল রাখায় থাকছে বড় ধরনের ঝুঁকি। এখন বোর্ড সে ঝুঁকি নিবে কি-না সেটাই দেখার!