ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, আগামীতে তাঁর দল পুনর্নির্বাচিত না হলে দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হবে। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে, আর শেখ হাসিনা আজ রোববার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) ৬০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ‘ডেস্টিনেশন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পার্লামেন্টারি ফর্ম অব ডেমোক্রেসিতে আছি। আগামীতে বাংলাদেশের মানুষ যদি ভোট দেয়, তাহলে আমরা আমাদের লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে সক্ষম হব।’ ‘আর যদি না দেয় তাহলেও আমাদের সব সময় একটা প্রচেষ্টা থাকবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। তারপর কী হবে, আমি বলতে পারছি না, ’ যোগ করেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, অর্থ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান এবং এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাশেম খান স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে ‘ভিশনারি লিডারশিপ’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। তখনো বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম, সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছিলাম, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য, যখন আবার ৭–৮ বছর পর সরকার গঠন করলাম তখন দেখলাম, সবকিছু পিছিয়ে গেছে। তিনি সরকার গঠনের পর পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধীরে ধীরে আমরা সবকিছুকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসি এবং দেশটা যাতে এগোতে পারে, সেই ব্যবস্থা করে দেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আজকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এবং আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা বাংলাদেশের প্রশংসা করে যাচ্ছে, আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস বলছে, বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৮তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০৫০ সালের মধ্যে নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াকে অতিক্রম করে বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি চাই আপনারা এটা মাথায় রেখেই ব্যবসা-বাণিজ্য করবেন।’
বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু কৃষির ওপর নির্ভর না করে দেশে শিল্পায়ন যাতে হয়, সেদিকে আমরা দৃষ্টি দিয়েছি। খাদ্যের জোগানে কৃষির প্রয়োজন রয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ারও কাজ করতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা বেসরকারি খাতকে গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ, বেসরকারি খাতই পারে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে, উন্নত করতে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকার অনেক জায়গায় ডিজিটাল টেলিফোন ছিল না। আমরা এসে সব এলাকায় ডিজিটাল টেলিফোনের ব্যবস্থা করি। হেলিকপ্টার, টেলিভিশন, রেডিও এগুলো এখন বেসরকারি খাতে। একটাই উদ্দেশ্য যাতে বেসরকারি খাতে মানুষের কর্মসংস্থান হয়।’
শিল্পকে বহুমুখী করায় তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে দেশব্যাপী এক শ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’ তিনি বলেন, তবে দেখতে হবে কোন অঞ্চলে কোন জিনিসের উৎপাদন বেশি হয় এবং দেশ–বিদেশে তার কেমন চাহিদা রয়েছে। সেটাকে বিবেচনায় নিয়েই আমাদের শিল্পায়ন করতে হবে, উৎপাদন করতে হবে এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে হবে। তাহলেই আমাদের শিল্পের বিকাশ হবে।
রপ্তানি বহুমুখীকরণের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বাঙালিদের অভ্যাস কেউ কোনো একটা জায়গায় সফলতা পেলেই সবাই তাকে অনুসরণ করে সেই কাজে নেমে পড়ে। একটা সময় দেখা যায়, ওই কাজের আর মূল্য থাকছে না। সেটা না করে বহুমুখীকরণে মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ করতে হবে। বিশ্ব চাহিদার চিন্তা মাথায় রেখে নতুনভাবে পরিকল্পনা করে উৎপাদন করতে হবে।’
অর্থনৈতিকভাবে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যা যা করার দরকার, তাঁর সরকার তা করে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, বিনিয়োগের জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। ব্যবসায়ীদের নানা সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার চেষ্টা চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। দেশের রপ্তানি আয় বেড়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও বাড়বে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরে ৮ দশমিক ৫ ভাগ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দেশকে এগিয়ে নিতে সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যকে সম্প্রসারিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সহযোগিতা দরকার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ব্যবসা বুঝি না। আমার কাজ ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া, সম্ভাবনাগুলোকে জাগিয়ে দেওয়া।’ তিনি বলেন, ‘গ্রামের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন যাতে হয়, সে দিকেও আমরা মনোযোগী। ব্যবসা-বাণিজ্য গ্রামপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। গ্রামের তৃণমূল মানুষটা যেন আর্থিকভাবে সক্ষম হয়। শুধু নিজের দেশ না আঞ্চলিক-উপ–আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়টিও মাথায় রেখেছি আমরা।’