ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অতি আশাবাদীদের কেউ কেউ মুখ ফুটে বলতে চাইবেন যে দ্বিতীয় ইনিংসে উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের, প্রথম ইনিংসে করা ১৪৩ রানকে তো টপকেছে। অনেকে আবার বড্ড বেশি ইতিবাচক হয়ে উদাহরণ হিসেবে টানবেন তাইজুলের দুই ইনিংসের বোলিং ও অভিষিক্ত আরিফুল হকের দুই ইনিংসের লড়াকু ব্যাটিংকে।
কিন্তু বৃহত্তর অর্থে তাকালে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রাপ্তির খাতাটা শূন্যই বলা চলে। ফেবারিটের তকমা নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশ হার মেনেছে ১৫১ রানের বিশাল ব্যবধানে। অভিষিক্ত পেস বোলিং অলরাউন্ডার আরিফুল দুই ইনিংসেই ঢাল না হলেও পরাজয়ের ব্যবধানটা আরও বড় হতে পারতো।
টাইগারদের এ পরাজয়ের গ্লানি কিংবা হতাশা আরও বেড়ে যাবে যখন জানা যাবে প্রতিপক্ষ দল মাঝের পাঁচ বছর এবং ১৩টি টেস্ট ম্যাচে জিততে পারেনি। এমনকি মুখোমুখি লড়াইয়েও গত পাঁচ বছরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারেনি বাংলাদেশ। এসময়ে দুই দলের মধ্যকার হওয়া চার ম্যাচের সবকটিতেই জিতেছিল টাইগাররা।
অথচ ঘরের মাঠে ফেবারিটের তকমা নিয়ে খেলতে নেমেই হলো গলদঘর্ম। দুই ইনিংসেই ব্যাটসম্যানদের চরম ব্যর্থতাপূর্ণ ও হতশ্রী ব্যাটিংয়ের মাশুল দিতে হয়েছে জিম্বাবুয়ের পাঁচ বছরের জয়খরা কাটিয়ে দেয়ার মাধ্যমে।
ওয়ানডে সিরিজে ধবলদোলাই হওয়া জিম্বাবুয়েই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে এক অর্থে উড়িয়েই দিলো বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের টেস্ট ইতিহাসে এটি কেবল দ্বাদশ জয়। এর মধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষেই তারা জিতেছে সাত বার। আর ঘরের বাইরে এ নিয়ে মাত্র তৃতীয়বার জিতলো জিম্বাবুয়ে। সবশেষ ২০০১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষেই বিদেশের মাটিতে জিতেছিল তারা।
চতুর্থ দিন সকালে পুরো দশ উইকেট হাতে রেখে ২৯৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমেছিল বাংলাদেশ। দিনের শুরুটা ছিলো গুরুত্বপূর্ণ। সে সময়টুকু কোনোভাবে কাটিয়ে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস। গড়েছিলেন ম্যাচে টাইগারদের সর্বোচ্চ ৫৬ রানের জুটি।
ইনিংসের ২৩তম ও দিনের ১৩তম ওভারে লিটন সাজঘরে ফেরার পরেই শুরু হয় ব্যাটসম্যানদের যাওয়া আসার পালা। ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৩ রান আসে ইমরুলের ব্যাট থেকে। এছাড়া অভিষিক্ত আরিফুল ব্যতীত বাকি সবাই যেনো করেন প্রথম ইনিংসের পুনরাবৃত্তি।
শেষদিকে ৪ চার ও ২ ছক্কার মারে আরিফুল হকের ৩৮ রানের ইনিংসটি কেবল পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছে এবং সিলেটে উপস্থিত দর্শকদের দিয়েছে খানিক আনন্দের খোরাক। প্রথম ইনিংসে ৪১ রানে অপরাজিত থাকা আরিফুল, দ্বিতীয় ইনিংসে সাজঘরে ফিরেছেন দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ইনিংসে মোড়ক লাগিয়েছিলেন দুই অভিজ্ঞ বোলার সিকান্দার রাজা এবং টেন্ডাই চাতারা। দ্বিতীয় ইনিংসে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা নাকাল হয়েছেন দুই অভিষিক্ত স্পিনার ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ও ব্রেন্ডন মাভুতার বোলিংয়ে। মাভুতা ৪, ওয়েলিংটন ২, রাজা ৩ ও অন্য উইকেট নেন জার্ভিস।
দুই ইনিংসেই জিম্বাবুয়েকে নিরাপদ সংগ্রহে পৌঁছে দেয়া ব্যাটিং করে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার জিতেছেন জিম্বাবুয়ের বাঁহাতি ব্যাটসম্যান শন উইলিয়ামস। প্রথম ইনিংসে ৮৮ রানের ইনিংস খেলার পরে দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি করেন ২০ রান। এছাড়া প্রথম ইনিংসে ১টি উইকেটও নিয়েছেন তিনি।