DMCA.com Protection Status
title="৭

ভোট কেন্দ্র দখল ও ভোট কারচুপি ঠেকানো গেলেই বিএনপি জিতবেঃ বিএনপি

 

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  কেন্দ্র দখল ও ভোট কারচুপি ঠেকানো গেলেই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত বলে মনে করছেন দলটির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা। তাঁরা দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভোটের দিন কেন্দ্র দখল ও ভোট কারচুপি ঠেকানোর নির্দেশ দিয়েছেন। নেতা-কর্মী ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্র পাহারা দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

গতকাল সোমবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারের সময় এ নির্দেশ দেওয়া হয়। গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গতকাল দ্বিতীয় দিন বরিশাল বিভাগের ২১ আসন এবং খুলনা বিভাগের ৩৬ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গতকালও সাক্ষাৎকারে যুক্ত হন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

প্রতিটি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাই একসঙ্গে মনোনয়ন বোর্ডের কাছে সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকার দেওয়া ১৫ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। ‍তাঁরা জানান, ভোটের দিন কেন্দ্র দখল এবং ব্যালটে সিল মারা ঠেকানো গেলে প্রায় সব আসনে বিএনপির প্রার্থীরা জিতবেন বলে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা মনে করছেন। কিছু ক্ষেত্রে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা বলেছেন, খুলনা, বরিশাল, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেন্দ্র দখল করে কারচুপির উৎসব করেছে সরকারি দল। সংসদ নির্বাচনে সে সুযোগ দেওয়া যাবে না। নেতা-কর্মী ও জনগণকে নিয়ে কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে লড়াই করে মাঠে টিকে থাকতে হবে। মাঠ ছেড়ে দেওয়া যাবে না।

খুলনা-১ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমির এজাজ খান  বলেন, সরকার একতরফা নির্বাচন করে যেন কেন্দ্র দখলে নিতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। ভোট কারচুপি ঠেকাতে নেতা-কর্মীদের নিয়ে কেন্দ্র পাহারা দিতে বলা হয়েছে।

পিরোজপুর-৩ থেকে আসা মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন  বলেন, ‘এবারের ভোটকে আন্দোলন হিসেবে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে বলা হয়েছে। মাঠে থেকে ভোট কারচুপি প্রতিহত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ যেন ভোট নিয়ে অপচেষ্টা না করতে পারে।’

দুপুরের বিরতির আগে বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভোলা, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী জেলার ২১টি আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শেষ হয়। বিরতির পর খুলনা বিভাগের মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলার ৩৬টি আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শুরু হয়। চলে রাত পর্যন্ত।

মনোনয়ন বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

কেন মনোনয়ন দেওয়া হবে, গত ১২ বছরে প্রার্থীর ভূমিকা এবং তৃণমূলে প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু ইত্যাদি বিষয়ে প্রার্থীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকতে পারবেন কি না, প্রার্থীর অবস্থান কতটা শক্তিশালী—এসব বিষয়েও জানতে চান বোর্ডের সদস্যরা।

ভালো প্রার্থীদের জামিন বিলম্বিতঃ

বিরতির ফাঁকে কার্যালয়ের ভেতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ এখনো সবার জন্য সমান নয়। সরকার এখনো কর্তৃত্ব করছে, নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে। বিরোধী দলের কোনো দাবি গ্রাহ্য করেনি। প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছিলেন, তফসিল ঘোষণার পরও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হবে না। কিন্তু গ্রেপ্তার, হয়রানি অব্যাহত রয়েছে।

বিএনপির সম্ভাব্য ভালো প্রার্থীদের মামলায় জামিন না দিয়ে জামিন শুনানিকে বিলম্বিত করে নির্বাচনের পর নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এটি সরকারের নতুন কৌশল। নিম্ন আদালতকে ব্যবহার করে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছে। সরকার, নির্বাচন কমিশনের গোচরে আনা হলেও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে তাদের আগ্রহ দেখা যায়নি। এই অবস্থায় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হবে বলে আমরা মনে করি না।’

খালেদা জিয়া প্রার্থী হতে পারবেনঃ

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাদের চাওয়া-পাওয়ার ওপর খুব বেশি কিছু নির্ভর করে না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রার্থী হওয়া নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। তিনি এখন পর্যন্ত নির্বাচন করার যোগ্য আছেন। খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন বলেই আমরা বিশ্বাস করি।’

কোন্দল থেকে দূরে থাকার নির্দেশঃ

দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এলাকায় যেন কোনো কোন্দল না হয়, সে বিষয়ে কড়া নির্দেশ দেন মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা। প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দেন, দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে, তাঁর পক্ষে তাঁরা সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন।

পটুয়াখালী-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বাউফল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির  বলেন, এই নির্বাচন আন্দোলনের অংশ। ঐক্যবদ্ধ না থাকলে লড়াইয়ে জেতা যাবে না। কোনোভাবেই যেন স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যে ফাটল না ধরে, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনকে চূড়ান্ত আন্দোলনের পথ হিসেবে নিয়েছেন নেতা-কর্মীরা। দলীয় কোনো কোন্দলের শঙ্কা নেই। সবাই দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন।

 কার্যালয়ের বাইরের চিত্রঃ

সাক্ষাৎকারের কারণে গতকালও গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কের দুই পাশে ছিল পুলিশের নিরাপত্তাবেষ্টনী। আগের দিন পথচারীদের ওই সড়কে প্রবেশে কোনো বাধা দেয়নি পুলিশ। তবে গতকাল সাধারণ পথচারীদের প্রবেশে বাধা দিয়েছে। নাম, পরিচয়, কী উদ্দেশ্যে সড়কে প্রবেশ করতে চান, জেনেই সড়কে ঢোকার অনুমতি মিলে। এ ছাড়া ৮৬ নম্বর সড়কে ঢোকার আরেকটি পথ ৯২ নম্বর সড়কের প্রবেশমুখেও যানবাহন প্রবেশ বন্ধ করে দেয় পুলিশ।

বিএন​পির কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়া নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দিতে তৎপর ছিলেন কার্যালয়ের লোকজন। কিছুক্ষণ পরপর মাইকে নেতা-কর্মীদের সড়ক থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। একবার মির্জা ফখরুল নিজে মাইকে বলেন, ‘আমি দলের মহাসচিব বলছি, রাস্তা ছেড়ে দিন। মনোনয়নপ্রত্যাশী কেউ নেতা-কর্মী সঙ্গে আনবেন না।’

সূচি অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা এবং আগামীকাল বুধবার ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!