ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃআগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপত্র বৈধতার জন্য আপিলে যেসব প্রার্থী হেরেছেন, তাদের অধিকাংশই নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে কেউ কেউ ইসির দেয়া রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি সংগ্রহ করেছেন।
আজ উচ্চ আদালতে অনেকে আপিল করতে পারেন। তারা বলেন, যে অভিযোগে মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। উচ্চ আদালতে তারা ন্যায়বিচার পাবেন। তাদের শেষ ভরসার স্থল এখন উচ্চ আদালত।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে মোট ৩০৬৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। রিটার্নিং অফিসাররা যাচাই-বাছাই করে তাদের মধ্যে ৭৮৬টি মনোনয়নপত্র অবৈধ বলে ঘোষণা করেন। সোমবার থেকে নির্বাচন কমিশন এসব বাতিল মনোনয়নপত্রের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণ শুরু করেন।
রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৫৪৩ জন আপিল করেন। এসব আবেদন নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে শুনানি শুরু হয়ে শনিবার তা শেষ হয়। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল নামঞ্জুর করেন নির্বাচন কমিশন। ফলে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিলই রয়ে গেল।
এছাড়া ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, সাবেক মন্ত্রী মীর নাছির, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, যশোরের সাবিরা সুলতানা মুন্নী ও পার্বত্য খাগড়াছড়ি আসনের আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন ইসি।
তাদের মনোনয়নপত্র বাতিলের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা হল- তারা ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এ কারণে তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল।
এর আগে খালেদা জিয়ার তিনটি মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তার জমা দেয়া তিনটি আসনের মনোনয়নপত্র বাতিলের কারণ একই হওয়ায় কমিশন একই সঙ্গে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেন।
মনোনয়নপত্র বাতিল করে রিটার্নিং অফিসারদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বুধবার আপিল জমা দেয়ার শেষ দিনে খালেদা জিয়া আপিল করেছিলেন। আপিল শুনানির শেষ দিনে শনিবার কমিশন এগুলোর শুনানি করেন। দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া।
টুকু সিরাজগঞ্জ-২ আসনে, মীর নাছির চট্টগ্রাম-৫, দুলু নাটোর-২, মুন্নী যশোর-২, আমান উল্লাহ আমান ঢাকা-২ এবং আবদুল ওয়াদুদ খাগড়াছড়ি-১ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন।
ফৌজদারি মামলায় দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত তারা। এজন্য যাচাই-বাছাইয়ের সময় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিলেন রিটার্নিং অফিসাররা। তারা সবাই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইসির এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মতে, মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় খালেদা জিয়াসহ সাত জনপ্রিয় নেতা ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। খালেদা জিয়ার তিনটি মনোনয়নপত্রই বাতিল করা হয়েছে।
ইতঃপূর্বে খালেদা জিয়া এসব আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। এবারও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন নেতাকর্মীরা। বিএনপির অন্য নেতারাও নিজ নিজ এলাকায় কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে পরিচিত। শনিবার ইসির সিদ্ধান্তের পর ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার প্রতি ন্যায়বিচার করা হয়নি। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সেটিই ফেয়ার। নির্বাচন কমিশনের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
ইসিতে হেরে যাওয়া বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির বলেন, যে অভিযোগে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে, তা সঠিক হয়নি। আমার বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের দেয়া সাজা হাইকোর্ট বাতিল করেছেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে মামলাটি পুনঃশুনানির জন্য ফের হাইকোর্টে পাঠানো হয়। সেটি এখন শুনানির অপেক্ষায় আছে। তিনি বলেন, একই ধরনের রায় হয়েছিল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাজী সেলিমের ক্ষেত্রে। আসন্ন নির্বাচনে হাজী সেলিম প্রার্থী হয়েছেন। সেটি কীভাবে হল? এসব বিষয়ে আমরা উচ্চ আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রোববার অথবা সোমবার আপিল করব।
এর আগে উচ্চ আদালতে আপিল করার ঘোষণা দিয়ে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেছিলেন, ২০০৮ সালে হাজী সেলিম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, লুৎফুজ্জামান বাবর, মোহাম্মদ নাসিম দুই বছরের বেশি দণ্ড নিয়ে জামিনে নির্বাচন করেছিলেন।
আমি তখন জেলে থাকায় নির্বাচন করতে পারিনি। আমার এ মামলা এক বছর আগে স্থগিত হয়েছে, সেটির বিরুদ্ধে সরকার কোনো আপিল করেনি। একই গ্রাউন্ডে হাজী সেলিম এবারও নির্বাচন করতে পারলে আমি করতে পারব না কেন?
তিনি বলেন, আমাকে আজ পর্যন্ত কেউ নির্বাচনে হারাতে পারেনি। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া খাগড়াছড়ির আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এতে আইনগত কোনো বাধা নেই। তিনি বলেন, যে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি প্রতিকার চেয়ে আদালতে যাবেন, এটা তার সাংবিধানিক অধিকার। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি উপযুক্ত কারণ ব্যাখ্যা করে মনোনয়নপত্র ফিরেও পেতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার।