ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ‘আমি বিশ্বাস করি আমার বাবা-মা বেহেশত থেকে আমার সমস্ত কার্যক্রম দেখছেন। তারা বাংলাদেশের আনাচে কানাচের মানুষের অবস্থা দেখছেন। বাবা-মা আমাকে সর্বসময় ছায়া দিয়ে রেখেছেন বলেই আমি দেশের এতো উন্নয়ন করতে পারছি’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বাংলাদেশের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্য বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। দেশের মানুষকে সজাগ থাকতে হবে যেন যুদ্ধাপরাধীরা আর ক্ষমতায় আসতে না পারে।’
বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচন আর ২০০৮ সালের নির্বাচন প্রায় একই রকম হয়েছে। ২০০৮ সালেও ৮৫- ৯০ ভাগ ভোট পড়েছে। দেশের মানুষ বিএনপি জামায়াতকে আর ভোট দেবে না। কারণ তারা সন্ত্রাস, আগুন দিয়ে পুড়ে মানুষ হত্যা এবং দুর্নীতি ছাড়া আর কিছুই বোঝে না।’
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শুধু সন্ত্রাস, লুটপাট, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা এবং ব্যাপক হারে মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে তাদের এই ভরাডুবি। একই আসনের জন্য সকালে একজন, দুপুরে একজন ও বিকেলে একজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়। তাদের অনেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের দুঃখের কথা বলেছেন। একজন তো আমাদের দলে জয়েন করলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির যেসব প্রার্থী উইনেবল ছিল তারা কেউই মনোনয়ন পাননি। টাকা বেশি না দিতে পারায় তারা মনোনয়ন পাননি। সকালে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়, তার চেয়ে বেশি টাকা দেয়ার পর দুপুরে আরেকজন মনোনয়ন পান। বিকেলে তার চেয়ে বেশি টাকায় পাওয়ায় সকাল ও দুপুরের প্রার্থী মনোনয়ন থেকে আউট হয়ে যান। এভাবে যে দল মনোনয়ন দেয় তাদের জনগণ কেন ভোট দেবে?
জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যে আশা নিয়ে আপনারা নৌকায় ভোট দিয়েছেন, যে আশা নিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করেছেন, আমরা তার প্রতিদান দেব, তাদের আশা পূরণ করব- ইনশাআল্লাহ।
শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা তৈরি করতে চেয়েছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন দেশের মানুষের জন্য কাজ করার। সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ গড়তে যেভাবে তিনি কাজ শুরু করেছিলেন তাতে আর ১০ বছর দেশ চালাতে পারলে এ দেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হতো। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত তা করতে দেয়নি। তারা ৭৫ এর পর ২৯ বছর দেশ চালায়। এ সময় তারা মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাসকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল। যে কারণে, তারা তখন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ পর্যন্ত বাজাতে দেয়নি। যে ভাষণ তারা বাজাতে দেয়নি সে ভাষণ আজ জাতিসংঘের ইউনেস্কোতে স্থান পেয়েছে। বিশ্বের মানুষ ৭ মার্চের ভাষণ গ্রহণ করলেও বিএনপি-জামায়াত তা পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আদর্শ হলো- দেশের মানুষের জন্য কিছু করা। দেশের মানুষকে যদি উন্নত জীবন দিতে পারি, মানুষকে যদি ভালো রাখতে পারি. এর চেয়ে স্বার্থকতা আর কী হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে বিএনপি জামায়াত চেয়েছিল এ দেশে যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উঠে দাঁড়াতে না পারে। তারা মনগড়া ইতিহাস রচনা করে বঙ্গবন্ধু ও আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার চালিয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণ থেকে মানুষকে বঞ্চিত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘সত্য কখনো মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না। সত্য আপন গতিতে বের হয়ে আসে।’
বিএনপির মনোনয়ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি ভাইয়ার সঙ্গে (তারেক রহমান) কথা বলতে চায় তাহলে তাকে পাউন্ডে পেমেন্ট দিতে হয়। এমনি ভাবে ঢালাও মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণেই বিএনপি জামায়াত জোট ডুবেছে।’
তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালত থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পরও বিএনপি তাদের ২৫ প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। অথচ বিএনপির ভালো প্রার্থী ধামরাইয়ের জিয়াউল হক জিয়া, নারায়ণগঞ্জের তৈমুর আলম খন্দকার, চট্টগ্রামের মোরশেদ খানের মত লোককে তারা মনোনয়ন দেয়নি। তাদের প্রতিপক্ষ বেশি টাকা দিয়েছে বলেই মনোনয়ন পায়নি।’
তিনি বলেন, ‘দেশের জন্য আজকে একটা সুখবর আছে। অর্থনীতির সূচক হিসেবে আরও দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্বাস করে না। তাদের ব্যর্থতার কারণেই তারা এগিয়ে যেতে পারেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা সারা জীবন আন্দোলন করেছেন, দেশ স্বাধীন করেছেন। তার আদর্শকে ধারণ করতে হবে। তাহলেই আমরা তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে পারবো।’
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলামের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি রহমতুল্লাহ ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।