ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এক গণশুনানি অনুষ্ঠানে বাম গণতান্ত্রিক জোট বলেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি কলঙ্কিত নির্বাচন। এমন নির্বাচন দেশের ইতিহাসে আর হয়নি। নজিরবিহীন ভুয়া ভোটের এই নির্বাচনের আগের দিনই বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রশাসনের সহায়তায় ভোট ডাকাতি করে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়েছে। প্রশাসন এসব অনিয়ম ঠেকাতে সক্রিয় ছিল না।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত ‘ভোট ডাকাতি, জবর দখল ও অনিয়মের নানা চিত্র’ শীর্ষক গণশুনানিতে এসব অভিযোগ করেন বাম দলগুলোর প্রার্থীরা। নির্বাচনে অংশ নেয়া বাম দলগুলোর প্রার্থীরা শুনানিতে তাদের অভিজ্ঞতা ও নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। এবার ১৩১টি আসনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ১৪৭ জন প্রার্থী অংশ নেয়। দিনব্যাপী এই গণশুনানিতে বাম দলের ৮০ জন প্রার্থী তাদের নির্বাচনী এলাকায় ভোটের সময়কার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থীরা। তাদের অভিযোগ, ভোট হয়েছে ২৯ ডিসেম্বর রাতেই।
শুনানিতে ১৩১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা তাদের বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন। তারা জানান, ভোটের আগের দিন, ভোটের ও পরের দিন অনেক অনিয়ম হয়েছে। এর পক্ষে সুনির্দিষ্ট ঘটনার উদাহরণও দেন তারা।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ঢাকা-১২ আসন থেকে কোদাল মার্কায় দাঁড়ান। গণশুনানিতে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগের দিন রাতেই কেন্দ্রভেদে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোট সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে ফেলা হয়েছে। আমরা যারা প্রার্থী ভোট দিতে গিয়েছিলাম, দেখেছি, একটা ভোটকেন্দ্রে ভোটারের তেমন কোনো ভিড় নেই অথচ ৯টা বা সাড়ে ৯টার মধ্যেই ব্যালট বাক্স ভরে গেছে।’
তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে এর মতো কলঙ্কজনক নির্বাচন আর নেই। এটা আমাদের উপলব্ধি করার কথা। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে একটা নির্বাচন হলো, কিন্তু সেই নির্বাচনে জনগণকে অংশ নিতে দেয়া হলো না। সম্পূর্ণভাবে প্রশাসনের কর্তৃত্ব কাজ করেছে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের আগে থেকেই একতরফা পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল। বিরোধী প্রার্থীদের ওপর হামলা-মামলা গ্রেফতার করে এই পরিবেশ তৈরি করা হয়। মানুষ যাতে ভোটকেন্দ্রে আসতে না পারে, ভয় পায় সে জন্য আগে থেকেই একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা ছিল। এটাই তাদের লক্ষ্য ছিল।
নরসিংদী-৪ আসনে কাস্তে মার্কা নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন সিপিবির কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন। গণশুনানিতে তিনি অভিযোগ করেন, ‘আমার এলাকায় একটি ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার নির্বাচনের আগের দিন আমার কাছে স্বীকার করেন, প্রশাসনের নির্দেশ ৩৫ শতাংশ ভোটের সিল যেন নির্বাচনের আগের রাতেই দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের চাপে পরে তা ৪৫ শতাংশ হয়ে যায়। সেই প্রিজাইডিং কর্মকর্তা রাতে আমাকে বলছিলেন, ‘এখন আমি কিভাবে এই বাড়তিটুকু ম্যানেজ করব’।
ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী শম্পা বসু মই মার্কায় নির্বাচনে অংশ নেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘সকালে সেগুন বাগিচা হাইস্কুল ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখি, কেন্দ্রে কোনো ভোটার নেই। অথচ ব্যালট বাক্স ভোটে ভর্তি হয়ে আছে। প্রিজাইডিং অফিসারকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন, মাত্র ১০০টি ভোট পড়েছে। কিন্তু ব্যালট বাক্স ভর্তি এত ভোট কোথা থেকে এলো?’
রাজশাহী-১ আসনে সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের প্রার্থী আলফাজ হোসেন বলেন, ভোটের নানা অনিয়মে রিটার্নিং অফিসারসহ প্রশাসনকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেয়া হলেও তার কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
রাঙ্গামাটি জেলা থেকে নির্বাচনের দাঁড়িয়েছিলেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জুঁই চাকমা। তিনি বলেন, ভোটের দিন আমার নির্বাচনী এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা। আমার দলের লোকেরাই ভোট দিতে পারেননি। ভোটকেন্দ্র দখলের প্রতিবাদ করায় উল্টো আমার এজেন্টদের মারধর করা হয়। আমার কোদাল মার্কার এজেন্টরা প্রশাসনের সাহায্য চেয়েও পায়নি। আমি ১৫টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে অনিয়ম পেয়েছি।
সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এ গণশুনানিতে নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, দেশী-বিদেশী নির্বাচন পর্যবেক্ষক, দেশের বিশিষ্টজন ও শ্রেণিপেশার মানুষ ও সংবাদকর্মীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।