ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ‘দেশীয় কোম্পানি ভিটামিন-এ সরবরাহ করতে সক্ষম’ এ কারণ দেখিয়ে অ্যাজটেককে এনওসি (ছাড়পত্র) দেয়নি। তারপরও প্রভাব খাটিয়ে আদালতে মামলা করে ভারতের এই কোম্পানিটি বাংলাদেশে ওষধ সরবরাহ করে। কিন্তু তাদের সরবরাহ করা ভিটামিন খাওয়ার অযোগ্য ও নিম্নমানের হওয়ায় সরকার ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ার কাযক্রম স্থগিত করতে বাধ্য হয়।
দেশীয় কোম্পানির তৈরি ভিটামিন-এ ক্যাপসুল দিয়ে চলতি মাসেই ভিটামিন-এ ক্যাম্পেইন পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। তিনি আরো জানান, তারা দেশীয় কোম্পানি থেকে ভিটামিন-এ সংগ্রহ করবেন এবং এ মাসের মধ্যে শিশুদের খাওয়ানো হবে।
গতকাল শনিবার ভিটামিন-এ ক্যাম্পেইনে ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী এবং ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের ভিটামিন-এ খাওয়ার দিনক্ষণ নির্ধারিত থাকলেও তা করা হয়নি।
মহাপরিচালক জানিয়েছেন, ওই ভারতীয় কোম্পানির সরবরাহকৃত ক্যাপস্যুলে গুণগত মান দেখার জন্য ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত সরবরাহকৃত এসব ক্যাপস্যুল ব্যবহার করা যাবে না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একটি সূত্র জানায়, ভারতীয় একটি কোম্পানির সরবরাহকৃত ভিটামিন-এ ক্যাপস্যুলে সমস্যা থাকায় হঠাৎ করেই ক্যাম্পেইন স্থগিত করে দেয়া হয়। এর আগেই ক্যাপস্যুলগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। ক্যাপস্যুলগুলো একটার সাথে আরেকটি লেগে যায় এবং কোথাও কোথাও দলা পাকিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। ক্যাপস্যুলের এ অবস্থায় মাঠ পর্যায় থেকে রিপোর্ট আসায় গত বৃহস্পতিবারই সিদ্ধান্ত হয় যে ক্যাপস্যুলগুলো পরীক্ষা না করে আপাতত খাওয়ানো হবে না।
ভারতীয় অ্যাজটেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান শনিবারের জন্য নির্ধারিত ভিটামিন-এ ক্যাপস্যুল সরবরাহ করে। এটা ছিল আন্তর্জাতিক একটি দরপত্র। অ্যাজটেক কোম্পানি সর্বনিম্ন দরদাতা বলেই তাদের কার্যাদেশ দেয়া হয় বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে অ্যাজটেককে শর্ত দেয়া হয় যে, তাদের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে অনাপত্তি ছাড়পত্র (এনওসি) নিতে হবে। ওষুধ প্রশাসন ‘দেশীয় কোম্পানি ভিটামিন-এ সরবরাহ করতে সক্ষম’ এ কারণ দেখিয়ে অ্যাজটেককে এনওসি দেয়নি। পরে ওই কোম্পানি আদালতে মামলা করে এনওসি আদায় করে নেয়।
উল্লেখ্য, দেশীয় কোনো ওষুধ কোম্পানি কোনো ওষুধ তৈরি করতে পারলে ওই ধরনের ওষুধ বাইরে থেকে আমদানি করা নিষিদ্ধ।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা: মোরাদ হোসেন গত শুক্রবার জানিয়েছেন, ওই ভারতীয় কোম্পানি মামলা করে ক্যাপস্যুল সরবরাহের ঠিকাদারি নিয়েছিল। ফলে সরকার বাধ্য হয় ওই কোম্পানি থেকে ভিটামিন-এ কিনতে। কিন্তু ভারতীয় ওই কোম্পানির ভিটামিন-এ ক্যাপস্যুলগুলো একটার সাথে আরেকটা লেগে যাওয়ার কারণে গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বাংলাদেশে বিদেশ থেকে আনা ভিটামিন-এ ক্যাপস্যুলে খেয়ে শিশুরা বমি করে, অনেক শিশু গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচির আওতায় প্রতি বছর দুইবার ভিটামিন-এ ক্যাপস্যুল খাওয়ানো ৬ থেকে ৫৯ মাসের শিশুদের। রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যেই এ কর্মসূচি চালানো হচ্ছিল ১৯৯৪ সাল থেকে।