ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নতুন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হলেই শুধুমাত্র শেখ হাসিনার সাথে বসতে রাজি আছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, অন্যথায় কেবল শুভেচ্ছাবিনিময় কিংবা চায়ের আমন্ত্রণে গণভবনে যাবে না তারা। ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির নেতারা স্পষ্টভাবেই এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।
ফ্রন্টের নেতারা বলছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবি করা হয়েছে জোটের পক্ষ থেকে। আর সবার অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন। এখন প্রধানমন্ত্রী যদি নতুন নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে চান, তাহলে ঐক্যফ্রন্ট আমন্ত্রণে যেত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শুভেচ্ছাবিনিময় ও চা চক্রের। ফলে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সেই আমন্ত্রণে যাবেন না।
আগামী ২ ফেব্রুয়ারি গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের উদ্দেশে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘শুভেচ্ছাবিনিময় ও চা চক্রে’ অংশগ্রহণের জন্য বেলা সাড়ে ৩টায় এ আমন্ত্রণ জানানো হলো।
ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর দাওয়াতে যাওয়া-না-যাওয়ার বিষয়ে জোটগতভাবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। জোটের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন গতরাতে দেশে ফিরেছেন। শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, এমনিতে জনগণ প্রতারিত হয়েছে। ভোট না দিতে পেরে মানুষ ক্ষুব্ধ। এখন একটা ভোটের দরকার। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের ভোট দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করার সুযোগ চায়। সেটি না হলে এসব চা পান বা শুভেচ্ছা জানানোর জন্য তো দাওয়াতে যাওয়ার কোনো দরকার নেই।
তিনি আরো বলেন, আমরা বলেছিলাম একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জাতীয় সংলাপ দরকার। আর এটিই হচ্ছে এখন জাতীয় ঐক্য। সুতরাং এখন যদি প্রধানমন্ত্রী কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে সেটি হবে নতুন নির্বাচনের জন্য। সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমন্ত্রণে যাওয়ার বিষয়ে পার্টি সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে না যাওয়ার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই চা চক্রের (গণভবনে) আয়োজন করা হয়েছে। এটিই বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ বিশ্বাস করে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, দাওয়াতে যাওয়া-না-যাওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো আলোচনাও হয়নি। আর চায়ের দাওয়াতে যাওয়ার কী আছে।
জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নয়, বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারাও প্রাথমিকভাবে গণভবনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর চায়ের আমন্ত্রণে যেতে জোটের কেউ আগ্রহী নয়। সবার একটিই কথা একাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। এ নির্বাচনের ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানানোর কিছু নেই এবং চা পানেরও দরকার নেই।
প্রসঙ্গত, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সংলাপে অংশ নেয়া ৭৫টি দলের সাথে শুভেচ্ছাবিনিময় করতে গত ২৬ জানুয়ারি এসব দলের নেতাদের চা চক্রের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ২ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টায় গণভবনে এ অনুষ্ঠান হবে।