দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী, সকাল ৯-০৫ ঢাকার বিডিআর সদর দফতর পিলখানার দরবার হলে তিন হাজার বিডিআর জওয়ানদের নিয়ে দরবারে বসেন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, সাথে ১৩২ অফিসার।
৯-২৬ মিনিটে প্রথমে ৪৪ ব্যাটালিয়নের বিডিআর সৈনিকরা বিদ্রোহ করে। এসময় সৈনিকরা দরবার হল ত্যাগ করে, শেষে ৫০ জনের অধিক অফিসার দরবার হলে অবস্খান করছিল।
জেনারেল শাকিল সহ কর্নেল গুলজার, কর্নেল এমদাদ, মেজর জায়েদী এবং আরো কয়েকজন অফিসার সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে সাহায্য চেয়ে ফোন করেন। ডিজি বিডিআর প্রথমেই জানান সেনাপ্রধান জেনারেল মইনকে, এ ছাড়াও এনএসআই প্রধান মে. জেনারেল মুনীর, নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল তারিক সিদ্দিকের মারফত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্রোহের খবর জানতে পারেন।
৯-৪৮ মিনিটে বিডিআর মহাপরিচালক জেনারেল শাকিল নিজে টেলিফোন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সাহায্য পাঠাতে আবেদন করেন। এত আবেদন নিবেদন সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো সাহায্য পাঠাননি।
এরপরে বিদ্রোহীরা অস্ত্রাগার ভেঙ্গে অস্ত্র হাতে পুরো পিলখানায় ছড়িয়ে পড়ে। ১০/১৫ জনের একটি অস্ত্রধারী গ্রুপ দরবার হলের নিকটে এসে গুলি করে ১৩ জন অফিসার হত্যা করে। ১১টার দিকে ডিজি মেজর জেনারেল শাকিল নিহত হন। তবে সেখানে আটক অফিসারদের মধ্যে অনেক কমান্ডো থাকলেও কেউই সশস্ত্র সিপাহীদের সাথে কোনো লড়াইতে অবতীর্ণ হননি, বরং অসহায়ভাবেই নিহত হন। ৪৪ ও ৩৬ বাটালিয়ন এবং আরএসইউর সিপাহীও জেসিওরাই মুলত এ বিদ্রোহ করে। অন্যদিকে পিলখানার অফিসারর্স কোয়ার্টারে একদল সিপাহী হামলা চালায়।
তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেনাসদরে এবং র্যাব হেড কোয়ার্টার্সে সাহায্য চেয়ে যেসব চেষ্টা হয়েছে তার প্রেক্ষিতে ১০:১০ মিনিটে র্যাবের ৩৫০ জন জওয়ান ও অফিসার বিডিআর গেইটে হাজির হয়, যারা ৫ নম্বর গেইট দিয়ে ঢুকলেই খুব অল্প সময়ে বিদ্রোহ দমন করতে পারত। কিন্তু তাদের অনুমতি দেয়া হয়নি।
ব্রিগেডিয়ার হাকিমের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর ৪৬ ব্রিগেডের সৈনিকরা ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সকাল ১০:৫০ ঘটিকার মধ্যে বিডিআর হেডকোয়ার্টোসের চারদিকে অবস্থান নেয়, তাদের সঙ্গে এপিসি ছিল, ট্যাংক যোগ দেয় আরও পরে। তাদেরও অপারেশন চালানোর অনুমতি দেয়া হয়নি।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক চেষ্টায় সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, হুইপ মির্জা আজম, এবং এমপি মাহবুব আরা গিনি ও সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি পিলখানায় প্রবেশ করে। উল্লেখ্য নানকের ক্লাশমেট এই তৌহিদের সঙ্গে আগের দিন ২০৪ মিনিট টেলিফোন আলাপ গোয়েন্দারা রেকর্ড করে! নানক ১৪ জন বিদ্রোহী বিডিআরকে নিয়ে শেখ হাসিনার বাসভবনে যান বিকেল ৩-২৮ মিনিটে। সেখানে তাদেরকে হোটেল শেরাটন থেকে নাশতা এনে আপ্যায়ন করা হয়। যমুনায় ১৫০ মিনিট অবস্থান করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে ডিএডি তৌহিদরা বেরিয়ে যাওয়ার সময় নানক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন প্রেসকে জানান, আলোচনা সফল হয়েছে, বিদ্রোহী বিডিআরদের নিজের সন্তান হিসাবে উল্লেখ করেন সাহারা। অন্যদিকে টিভি স্ক্রলে তখন ভেসে আসে, দাবীর মুখে ডিএডি তৌহিদকে বিডিআরের ভারপ্রাপ্ত ডিজি নিয়োগের খবর!
পিলখানার ঘটনার পরে সকালেই সেনাপ্রধান জেনারেল মইন প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন অস্থায়ী বাসভবন যমুনায় যান (উল্লেখ্য, মাত্র এক সপ্তাহ আগে রহস্যজনক কারণে শেখ হাসিনাকে সুধাসদন থেকে খুব তড়িঘরি করে যমুনায় সরিয়ে নেয়া হয়! কেননা পিলখানার ডেঞ্জার এরিয়ার মধ্যে ছিল ওটা। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার মেরামত কাজ শেষ না হওয়া স্বত্ত্বেও অজ্ঞাত সিগনালে খুব দ্রুততার সাথে হাসিনাকে সুধাসদন থেকে সরানো হয়েছিল। এটা একটা অস্বাভাবিক ঘটনা!) বেলা ১ টার দিকে নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী প্রধানকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন যমুনা’য় ডেকে নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলার পরে তাদেরকে একটি ওয়েটিং রুমে বসতে বলা হয়। জেনারেল মইনের ভাষ্যমতে, ঐ কক্ষ থেকে তাদেরকে আর বের হতে দেয়া হয়নি। কার্যত তারা ছিলেন আটক। তাদের মোবাইল ফোনগুলো গেটে জমা দিয়ে ঢুকতে হয়। পরে তাদের চা-নাশতা দেয়া হয়। তারা শুনতে পান পাশের কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলায় হাস্যরসে ব্যস্ত ছিলেন তাপস, নানক, আজম, সাহারা খাতুন সহ কেবিনেট মেম্বাররা!
এভাবে সময় ক্ষেপণের মাঝখানে বিডিআরের ডিজি জেনারেল শাকিলসহ অফিসারদেকে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয় ড্রেনে বা মাটিতে পুতে ফেলা হয়, সেনা অফিসারদের বাসভবনে হামলা চালিয়ে লুটতরাজ চালায়, এবং নারীদের ওপর অত্যাচার চালায় বিদ্রোহীরা। এর মধ্যে বিডিআর ডিজির স্ত্রী এবং কর্নেল দেলোয়ারের স্ত্রীকে হত্যা করে। ফলপ্রসু আলোচনার (!) সূত্র ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নে শেখ ফজলে নূর তাপসের বরাতে টিভি স্ক্রলে ঘোষণা দিয়ে পিলখানার ৩ কিলোমিটার এলাকা ফাঁকা করে দেয়ার নির্দেশ জারী করা হয়। পরে জানা যায়, এলাকা শূন্য করার মধ্য দিয়ে বিদ্রোহীদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। রাত ১০টার দিকে তিন বাহিনী প্রধান সহ সেনাপ্রধান মইন যমুনা থেকে বের হয়ে এসে প্রেসকে জানান- Army is subservient to the Government!" জেনারেল মইন জানিয়েছেন, বিদ্রোহ দমন করতে সেনা অভিযান চালাতে প্রধানমন্ত্রী অনুমতি দেননি। উপরন্তু প্রধানমন্ত্রী কায়দা করে তিন বাহিনী প্রধানকে তার বাসভবনে ৮ ঘন্টা আটকে রেখে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয়েছিল। গভীর রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা পিলখানায় গিয়ে কিছু বন্দী পরিবার মুক্ত করে আনেন। ঐসময় পিলখানা থেকে কয়েকটি কালো কাঁচের এম্বুলেন্স বের হতে দেখা যায় (পরে জানা যায়, প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা শুটারদের বের করে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল)! তবে পরে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ২৫ তারিখ রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে অস্ত্র সমর্পনের নাটক করা হয়, বাস্তবে পিলখানার বিদ্রোহ দমন হয়নি। অবশ্য রাতের বেলায় অনেক সৈনিক দেয়াল টপকে পিলখানা ছাড়ে। পরের দিন ২৬ তারিখ বিকালে শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্য ভাষণ দেন। ততক্ষণে পিলখানার হত্যাযজ্ঞ শেষ হয়েছে। এরপরে সেখানে সেনা পুলিশ ঢোকে ২৬ তারিখ রাতে। বিডিআর বিদ্রোহীরা বেশীরভাগই পালিয়ে গেলেও হোতা ডিএডি তৌহিদ সহ কিছু অপরাধী আটক হয়। তবে ততক্ষণে ৫৭ সেনা অফিসার ও আরও ২০ জন নিহত, সাথে বিডিআর নামক বাহিনী ধংস হয়ে গেছে।
———————————————————–
বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে দু’টি তদন্ত কমিটি হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব আনিসুজ্জামানের নেতৃত্ব একটি কমিটি, সেনাবাহিনীর এডজুটেন্ট জেনারেল লে. জে. জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে একটি কমিটি। এসব কমিটির রিপোর্ট সরকারী ভাবে প্রকাশ করেনি। কিন্তু বিভিন্নভাবে রিপোর্টের অংশবিশেষ প্রকাশ পায় সামাজিক মিডিয়ায়। তাতে দেখা যায়, শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী, এমপি সহ অনেকের জ্ঞাতসারে বা যোগসাজসেই ঘটেছিল বিডিআর বিদ্রোহ। এরমধ্যে এমপি তাপস, নানক, শেখ সেলিম, মখা আলমগীর, সাহারা খাতুন উল্লেখযোগ্য। এমনকি বিদ্রোহ ও হত্যাকান্ড চলার সময়ে ও আগে মহাজোটের এমপি হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খাদ মেনন, নানক সহ অনেকেই বিদ্রোহীদের নানা রকম বুদ্ধি পরামর্শ দিতে থাকে। এ নিয়ে অনেক রেকর্ড আছে সেনাবাহিনীর কাছে। বিডিআর বিদ্রোহে প্রধানমন্ত্রীর সংশ্লিষ্টতা এবং তাৎক্ষণিকভাবে দমন না করার বিষয় জানতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল সেনাবাহিনী তদন্ত কমিটি, কিন্তু এতে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হন এবং তাদের ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন, বরং ঐ কমিটির সদস্য এক ব্রিগেডিয়ারকে চাকরি থেকে অপসারণ করে। ওই বছরই ২৭শে এপ্রিল ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টির সঙ্গে এক সাক্ষাতের সময় তার কাছে এ তথ্য প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। পরে উইকিলিকস যুক্তরাষ্ট্রের যেসব কূটনৈতিক গোপন তারবার্তা প্রকাশ করেছে তাতে জানা গেছে যে, শেখ হাসিনা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, কিভাবে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়ে সামরিক তদন্তকারীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়? ঐদু’টি তদন্ত কমিটির সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল বানিজ্য মন্ত্রী কর্নেল ফারুককে। তদন্ত হওয়ার আগেই ফারুক বলেন, বিএনপি, জামায়াত ও জঙ্গিরা জড়িত, যার কোনো সত্যতা মেলেনি। বহু ক্রিমিনালদের নাম ছিল দু’টি রিপোর্টের ভেতরে। কিন্তু বিচার হয়নি কারও। মোট কথা, খুব কৌশল করে সবকিছু ধামাচাপা দেয়া হয়েছে।
যদিও বলা হয়ে থাকে অপারেশন ডাল ভাত কর্মসূচির হিসাব নিকাশ নিয়ে গন্ডগোল, এবং সৈনিকদের উপর সেনা অফিসারদের নির্যাতন ও পুঞ্জিভুত ক্ষোভ থেকেই ঐ বিদ্রোহের সূত্রপাত, কিন্তু বিভিন্ন সূত্রে এসব খবর বেরিয়ে আসে যে, ২০০১ সালে পদুয়া এবং রৌমারীতে বিডিআরের সাথে যুদ্ধে কয়েক’শ বিএসএফ নিহত হওয়ার বদলা হিসাবে বিডিআর বাহিনী ধংস করতেই বিদ্রোহের ঐ পরিকল্পনাটি হাতে নেয় ভারত, এজন্য তারা ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল এবং সেদেশ থেকে শুটাররা (মাথায় কমলা ব্যাচ পড়া) এসে আগেই অবস্থান নিয়েছিল পিলখানায়, ঘটনার পরে ২৫ তারিখ রাতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের সাথে ঐ বিদেশী শুটাররা বেরিয়ে যায়, বাংলাদেশ বিমানের দুবাই ফ্লাইট বিলম্ব করে কয়েকজন বিদ্রোহীকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেনা অফিসারদের হত্যা করার জন্য মাথাপিছু ৪ লাখ টাকা করে বিতরণ করা হয় আগে থেকে, অনেকের মধ্যে দুবাইতেও টাকা বিলি করার খবর আছে। বিদ্রোহীরা আগে থেকেই স্থানীয় আ’লীগ এমপি ও শেখ হাসিনার ভাগ্নে শেখ ফজলে নূর তাপসের বাসায় গিয়ে বিদ্রোহ নিয়ে সলাপরামর্শ করে আসে। তাপস নিজেই বিদ্রোহ উস্কে দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমরা এগিয়ে যাও, বাকীটা আমি দেখব!’ বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ১৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে সাত দিনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরও বিদ্রোহে জড়িতরা তাদের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। বৈঠক, লিফলেট বিলি ও সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে বিদ্রোহীরা। বিদ্রোহের পরের দিন অর্থাৎ ২৬ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নৈশভোজে যাওয়ার কথা ছিল পিলখানায়, কিন্তু বিদ্রোহ ঘটনার আগের দিন সন্ধায় তা বাতিল করেছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়!
২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের পর পরই ১লা মার্চ ঢাকা সেনানিবাসে বিক্ষুব্ধ সেনা কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উত্তেজিত কিছু সেনা কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীকে নানা ধরনের কটূক্তিও করেছিলেন। এদের মধ্যে সংক্ষুব্ধ অনেকেই চিৎকার করে, এ ঘটনায় মধ্যস্থতাকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের পদত্যাগ দাবি করেন। কিছু কর্মকর্তা বৈঠকে বিক্ষোভ প্রদর্শনও নাকি করেছিলেন। তারা বেশ কিছু চেয়ার ভাঙচুর করেছিলেন। সেনা কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই হত্যা ও অত্যাচারের সঙ্গে জড়িত বিডিআর সদস্যদের দ্রুত বিচারের দাবি করেন। কয়েকজন দাবি জানান, দোষীদের প্রকাশ্যে ফাঁসি দিতে হবে। নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহেমদ সিদ্দিকী জানান, সেদিন শেখ হাসিনা অক্ষত থাকায় তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন। কিন্তু এই ঘটনার পরে চিহ্নিত করে কয়েক’শ সেনা অফিসারকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
১০ বছর পার হয়ে গেছে পিলখানা হত্যাকান্ডের। এর মধ্যে নিহত পরিবারগুলি সরকারের দেয়া নানাবিধ অর্থিক ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা নিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিচারের নামে বিতর্কিত পুলিশ অফিসার আবদুল কাহহার আকন্দের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে সিভিল কোর্টে কয়েক’শ বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যের নানা ধরণের দন্ড দেয়া হয়েছে, আরও একটি বিস্ফোরক মামলা চলমান। কিন্তু দেশের সংখ্যগরিষ্ট জনগন ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে নানা প্রশ্ন রয়ে গেছে। পিলখানা হত্যাকান্ডে ভারতের সম্পৃক্ততা, শেখ হাসিনা ও জেনারেল মইন সহ তার মন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের জড়িত থাকার প্রশ্নের নিস্পত্তি হয়নি। তবে, এক দশকে সেনাবাহিনীতে দলীয়ভাবে নিয়োগ ও উর্ধতন পর্যায়ে পদবিণ্যাসের ফলে পিলখানার ইস্যুটি মিডনাইট সরকারের জন্য অনেকেটা সহনীয় হয়েছে বলে স্বস্তিতে থাকতে পারেন, কিন্তু সময় সুযোগ পেলে কখনও যে তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না, সে সম্পর্কে হলফ করে কিছু বলা সম্ভব নয়।