ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে চাঞ্চল্যকর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িত ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক এর পক্ষ থেকে মামলা করা করেছে। এ ব্যাপারে এখনো কোন মন্তব্য করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেম হ্যাকড করে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার অর্থ চুরি করা হয়। হ্যাকাররা সেই অর্থ ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখার ৪টি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে। সেখান থেকে ওই অর্থ ফিলিপিনো পেসোতে রূপান্তরের পর দুটি ক্যাসিনোতে চলে যায়। এ ঘটনায় দায়ী করে গত ১০ জানুয়ারি রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোকে কারাদণ্ড দেয় দেশটির আদালত। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিসহ অর্থ পাচারের আট দফা অভিযোগে তাকে দণ্ড দেওয়া হয়। তবে এ রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দেগুইতো ছাড়াও আরসিবিসির আরও ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালেই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এখন নতুন করে নিজেদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করছে ফিলিপাইনের এই ব্যাংকটি। উল্টো আরসিবিসি’র দাবি, তাদের ভাবমূর্তির ওপর দফায় দফায় ‘অশুভ আক্রমণ’’ চালানোর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ কোটি পেসো (১৯ লাখ ডলার) পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে।
৬ মার্চ দায়ের করা মামলায় প্রতিষ্ঠানটি অভিযোগ করেছে, আরসিবিসি'র সুনাম, খ্যাতি ও ভাবমূর্তি ধ্বংসের জন্য মানহানি, হয়রানি ও হুমকির আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্য দিয়ে তারা আরসিবিসি থেকে তহবিল সংগ্রহের জন্য একটি বিশাল পরিকল্পনা হাতে নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে।
এর আগে, চুরি যাওয়া রিজার্ভ উদ্ধারের আশায় গত ২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আরসিবিসি’র দাবি, বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ সাইবার চুরির ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন।
আরসিবিসি’র পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও ইতোমধ্যেই এ ঘটনায় ব্যাংকটির একজন সাবেক ব্যবস্থাপকের কারাদণ্ড হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশকে ‘কৌশলগত সহায়তা’ দিতে রাজি হয়েছে তারা। রিজার্ভ চুরির পর অবকাঠামোগত পুনর্গঠনে বাংলাদেশ ব্যাংককে সহায়তা করতে রাজি হয় আন্তঃব্যাংক লেনদেনের বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান সুইফট। তবে চুরি যাওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলা পরিচালনায় সুইফট সহযোগিতা করবে কিনা সে ব্যাপারে জানা যায়নি।