ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ভয়াবহ নৌকাডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সূত্রে তিউনিসিয়ার রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে লিবিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলের জুয়ারা শহর থেকে প্রায় ৭৫ আরোহী নিয়ে একটি বড় নৌকা রওনা হয়। উপকূলে ওই নৌকা থেকে আরোহীদের আরেকটি ছোট নৌকায় তোলার অল্প সময়ের মধ্যেই তা ডুবে যায়। তিউনিস প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মর্মান্তিক ওই নৌকাডুবির পর অভিবাসীদের উদ্ধারে একটি মাছ ধরার নৌযান নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তিউনিসিয় নৌবাহিনী। তারা জীবিতদের পাশাপাশি তিনজনের মরদেহ উদ্ধারে সমর্থ হয়।
রেডক্রিসেন্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই নৌকার আরোহীদের মধ্যে ৫১জন বাংলাদেশি ছিল। এদের মধ্যে ৩৭ জন প্রাণ হারিয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, জীবিত উদ্ধার হওয়া ১৬ জনের মধ্যে ১৪ জন বাংলাদেশি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে কতজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে সে বিষয়ে কোনও তথ্য এখন পর্যন্ত তাদের কাছে নেই। ‘সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে আমরা জানতে পেরেছি ওই নৌকায় ৫১ জন বাংলাদেশি ছিল। তার মধ্য থেকে ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। সে হিসাবে ৩৭ জন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার কথা জানতে পেরেছি। তবে এই সংখ্যার বিষয়ে আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। সরেজমিনে ব্যবস্থা নিতে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আমরা তিউনিসায় প্রতিনিধি পাঠাচ্ছি।’ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, সম্প্রতি পাঁচ বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইরাকে গিয়ে আটক হয়ে জেল-জরিমানার মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের ফেরানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আদম ব্যবসায়ীরা লিবিয়াতে মানুষ পাঠিয়ে তাদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলছে উল্লেখ করে তিনি মন্তব্য করেন, মানব পাচার রোধে অভিবাসন বিভাগকে আরও শক্ত ভূমিকা নিতে হবে।
তিউনিসিয়াতে শরণার্থীদের আশ্রয় সংক্রান্ত কোনও আইন নেই। বেঁচে যাওয়া এসব শরণার্থীরা এখন বাড়ি ফিরবেন নাকি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করবেন সেই সিদ্ধান্ত নিতে ৬০ দিন পাবেন তারা। যে ১৪ জন বাংলাদেশিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে তাদের দেশে ফেরত আনার ব্যাপারে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত হওয়ার পর দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ থেকে লিবিয়াতে লোক পাঠানো সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। সেকারণে অভিবাসন প্রত্যাশীরা বিভিন্ন প্যাকেজের মাধ্যমে অন্য দেশ হয়ে লিবিয়াতে যায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘তিউনিসিয়ার স্থানীয় রেড ক্রিসেন্ট আমাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে। লিবিয়াতে আমাদের মাত্র একজন লেবার কাউন্সিলার কাজ করছেন এবং তার পক্ষে এতজন লোকের দেখভাল করাটা মুশকিলের বিষয়।’