ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ গত জাতীয় নির্বাচন এবং উপজেলা নির্বাচনে একচেটিয়া ভাবে হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করার পুরষ্কার পাচ্ছেন ভাগ্যবান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। কারণ নিজেদের ব্যবহারের জন্য তারা প্রায় শতকোটি টাকার অত্যাধুনিক গাড়ি পাচ্ছেন।
হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে এই গাড়ি তাদের দেয়া হচ্ছে। এ জন্য গাড়ি কেনা হবে ১০০টি। প্রতিটি গাড়ির মূল্য পড়বে প্রায় এক কোটি টাকা। গাড়িগুলোর হচ্ছে ‘স্পোর্টস কিউ এক্স মডেলের পাজেরো জিপ।’ সুপরিসর, শক্তিধর ও পর্যাপ্ত গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্সের ফোর হুইল ড্রাইভের যে গাড়ি ব্যবহার করেন সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও সমমানের কর্মকর্তারা, সেই গাড়িই এখন থেকে পাবেন মাঠ প্রশাসনের জুনিয়র কর্মকর্তা ইউএনওরা।
এই গাড়িগুলো যাতে দ্রুত ও ঝামেলামুক্তভাবে কেনা যায় তাই কোনো দরপত্র আহ্বান না করে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে আপাতত ১০০টি গাড়ি কেনা হবে। দীর্ঘ সময় লাগার অজুহাতে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে কেনার পথে না হাঁটার পক্ষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি।
সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে গত বুধবার দুপুরে কমিটির বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবের অনুমোদনও দেয়া হয়। কমিটির আহ্বায়ক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন ইউএনওর জন্য গাড়ি কিনতে হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে ১০০টি গাড়ি কেনার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এসব গাড়ি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে কেনা হবে। তিনি বলেন, যেহেতু এখানে একমাত্র প্রতিষ্ঠান প্রগতি, তাই দরপত্র বাদ দিয়েই গাড়িগুলো কেনা হচ্ছে। প্রতিটি গাড়ি কিনতে কত খরচ হবে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী কিছু না বললেও বৈঠকে উপস্থাপিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতিটি গাড়ির দাম পড়বে ৯১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। এত দামি গাড়ি কেনা নিয়ে অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অর্থ মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা ছিল ইউএনওদের জন্য ৫৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা দামের গাড়ি কেনার।
এ দিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এ সম্পর্কিত এক সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তারা বিভিন্ন ঘটনা তদন্ত, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, অবৈধ দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম এবং পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা করেন। এসব কাজ পরিচালনার জন্য ইউএনওদের প্রয়োজনীয় জনবলসহ প্রতিনিয়ত সরকারি যানবাহন ব্যবহার করতে হয়। ২০০৭ সালে ইউএনওরা যে গাড়ি বরাদ্দ পেয়েছেন, তা মেয়াদোত্তীর্ণ। এতে অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনিক গতিশীলতা ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে জনস্বার্থে মেয়াদোত্তীর্ণ পুরনো জিপ গাড়িগুলো প্রতিস্থাপন করা জরুরি। প্রতিস্থাপন ছাড়া গাড়িগুলো অকেজো ঘোষণা করা হলে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই গাড়িগুলো কেনার অনুমোদন দেয়া হোক।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উন্মুক্ত দর পদ্ধতিতে ক্রয় প্রক্রিয়া শেষ করতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। এ প্রক্রিয়ায় চলতি অর্থবছরের অবশিষ্ট সময়ের মধ্যে ১০০টি গাড়ি কেনা সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় উন্মুক্ত দর পদ্ধতির বদলে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে গাড়ি কেনার সুযোগ অনুমোদিত বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। গাড়িগুলোর দাম ৫০ কোটি টাকার বেশি হওয়ায় বিষয়টি অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়।