দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ আমাদের সংবিধানে জনগণকে রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। শহীদ জিয়া বলতেন জনগণই ক্ষমতার উৎস। সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে জিয়াউর রহমান জনগণকে তাঁর প্রেরণার উৎস মনে করতেন। রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে এই নীতির বাস্তবায়ন আমরা দেখেছি শহীদ জিয়ার আমলে। সব ধরনের প্রোটোকল উপেক্ষা করে জিয়া নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে চলে যেতেন জনতার মাঝে। উৎফুল্ল মানুষও তাঁকে গ্রহণ করতো আন্তরিক ভালোবাসায়। জিয়ার খাল খনন কর্মসূচিসহ আরো অনেক কর্মসূচি যার সাথে সরাসরি গণমানুষের সম্পৃক্ততা ছিলো অনিবার্যভাবে। কিন্তু কেন? শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জানতেন রাজনীতিবিদদের প্রধান কাজ কি? তাদের প্রধান কাজ হলো জনগণের সেবা করা।
সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখে, বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ানো। তাদের কল্যাণে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন বলেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে জিয়া এক অবিস্মরণীয় ও অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হতে সক্ষম হন। বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির প্রধান চালিকাশক্তি মূলত আমাদের কৃষিক্ষেত্র। আর কৃষকরাই হচ্ছেন দেশের প্রাণশক্তি আর সেই কারণেই জিয়াউর রহমান কৃষি উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে সাফল্যের মুখ দেখেছেন। সেচের সুবিধার জন্য পানির প্রয়োজন মেটাতে এবং পানি সংরক্ষণের মতো বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণে সক্রিয় থেকেছেন। তাঁর আন্তরিক উদ্যোগের ফলে সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছায় খাল খননে অংশগ্রহণ করে দেশকে স্বনির্ভর করে তুলেছে। স্বেচ্ছাশ্রমের এই ইতিহাসের ধারাবাহিকতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে এখনও রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় থেকে আমরা দেশকে বাঁচাতে পারবো।
জিয়াউর রহমানের সময় আমাদের কৃষি উৎপাদন বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছিলো। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কথা ভুলে গেলে চলবে না। কৃষি উৎপাদনের সাফল্যের কারণেই জিয়ার আমলে বিদেশী সাহায্য অর্ধেকের চেয়ে কমে নেমে এসেছিলো। বিদেশমুখী পরনির্ভরশীলতা কমাতে এ জাতীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নৈতিক শক্তি ও সৎ সাহস থাকতে হয়। থাকতে হয় প্রবল আত্মবিশ্বাস, যা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মধ্যে বিদ্যমান ছিলো পুরোপুরি। একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর স্বপ্নই তাঁকে এশিয়ার মুখপাত্রে পরিণত করেছিলো। তৃতীয় বিশ্বের মানুষের প্রিয় নেতা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। আজ তৃণমূল মানুষের কথা উঠছে। তাদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার কথা উঠছে।
কিন্তু আমরা জানি জিয়াউর রহমানই প্রথম রাষ্ট্রনায়ক যিনি মানুষের হাতে হাত রেখে দুঃখ-সুখের অংশীদার হয়েছিলেন। তাদেরকে সাথে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশ গড়ার কাজে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার আনন্দ যে কতো মধুর হতে পারে তা তাঁকে যারা দেখেননি তারা এখন উপলব্ধি করতে পারবেন না। আজ তরুণ সম্ভাবনাময় তারেক রহমান পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এগিয়ে যাবেন এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। বরং এতে গর্ব করার আছে অনেক কিছু। মানুষের ভালোবাসা কি জিনিস আমরা তা দেখেছি তখন, যখন জিয়াউর রহমানের লাশ ঢাকা শহরে আনা হল।
যতদূর চোখ যায়- লোকে লোকারণ্য, স্বজন হারানোর ব্যথায় চোখ ভেসে যাচ্ছে সকলের। জনসমুদ্র বোধ হয় একেই বলে। কেন এই জনসমুদ্র। কে ডেকে এনেছে এতো মানুষকে। কেউ না। মানুষ এসেছে তার ভালোবাসার টানে। প্রিয় মানুষকে শেষবারের মতো এক নজর দেখার টানে। এটানে কোনো কূটকৌশল ছিলো না, ছিলো নিখাদ ভালোবাসা। এটা কেন হলো। আমার বিশ্বাস, এর প্রধান কারণ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তৃণমূল মানুষের কাছে পৌঁছতে পেরেছিলেন, তাদের ভালোবাসতে পেরেছিলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আজ নেই। কিন্তু তাঁর স্বপ্নের সেই বাংলাদেশ আছে। আছে তার প্রিয় মানুষেরা। ব্যক্তিকে হত্যা করে আদর্শকে মুছে ফেলা যায় না। পিতার আদর্শের পতাকা বহন করেই এগিয়ে যেতে হবে তারেক রহমানকে।
সাধারণ মানুষের বন্ধুত্ব অর্জন করতে হবে। ভালোবাসতে হবে তাদেরকে। তাদের খোঁজ-খবর নিতে হবে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও তাদেরকে সহযোগী করে নিতে হবে। দেশের মানুষ যেনো তাকে প্রকৃত বন্ধু-শুভাকাঙ্ক্ষী ভাবতে পারে এমন গঠনমূলক হিতকর কাজই তাকে করতে হবে। তারেক রহমানকে মনে রাখতে হবে, সাধারণ মানুষের ভালোবাসাই ছিলো শহীদ জিয়াউর রহমানের এগিয়ে যাবার প্রেরণা। গণমানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা পেয়েই তিনি নিজেকে উজাড় করে বিলিয়ে দিয়েছিলেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। নিজের সুখ-শান্তি ভবিষ্যতের কথা না ভেবে সারাজীবন নিঃস্বার্থ মানবসেবা করে গেছেন বলেই আজও দেশের মানুষ তাঁকে স্মরণ করে গভীর ভালোবাসায়। অফুরন্ত শ্রদ্ধায়। পিতার আদর্শ ও কর্মসূচিকে ধারণ করে দেশপ্রেমের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে সত্য-ন্যায় ও কল্যাণের পথে অবিচল এগিয়ে যাবেন তারেক রহমান এটাই আমার বিশ্বাস।
লেখক – মরহুম ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞা ( সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ) ।