ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দেশব্যাপী বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ড মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ডের মরদেহ নিজ গ্রামে দাফন করতে দেয়নি পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলাবাসী।
তাদের তোপের মুখে নয়ন বন্ডের মরদেহ পটুয়াখালীর গ্রামের বাড়িতে না নিয়ে বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের বুরজির হাটখোলা গ্রামে তার মামা বাড়িতে নেয়া হয়। সেখানে দাফন করা হয়েছে।
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার পশ্চিম সীমান্তে গলাচিপা উপজেলার ৮ নম্বর বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নের গুয়াবাশবাড়িয়া গ্রামে সাব্বির হোসেন নয়ন বন্ডের বাবার বাড়ি।
ওই গ্রামের বাসিন্দারা জানান, নয়ন বন্ডের মরদেহ আমাদের গ্রামে দাফন করতে দেয়া হবে না। তার মতো এমন জঘন্য খুনির মরদেহ অন্য কোথাও দাফন করা হোক।
এ বিষয়ে নয়ন বন্ডের চাচা লিটন মোল্লা বলেন, নয়নকে আমি দেখিনি। তার বাবা খুব ভালো মানুষ ছিলেন। বাড়ির সবাই নয়ন বন্ডের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে দাফন করতে নিষেধ করে দিয়েছেন। নয়ন বন্ডের ঘৃণিত কর্মকাণ্ডের কারণে গ্রামের বাড়ির কেউই নয়ন বন্ডকে আত্মীয় পরিচয় দিতে চাচ্ছেন না। এ অবস্থায় তার মামার বাড়িতে মরদেহ দাফন করা হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নয়ন বন্ডের মরদেহ বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের বুরজির হাটখোলা গ্রামে তার মামা বাড়িতে দাফন করা হয়। অল্প কিছু মানুষ তার দাফনে অংশ নেয়।
মরদেহ হস্তান্তরকারী পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহিন বলেন, বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের বুরজির হাটখোলা গ্রামে নয়নের মামা বাড়িতে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, নয়ন বন্ডের মৃত্যুর খবরে যেমন হাসি ফুটেছিল পুরো দেশের মানুষের মুখে, তেমনি হাসি ফুটেছিল তার নিজ বাড়ি পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলাবাসীর মুখেও। নয়ন বন্ডের মৃত্যুর খবর প্রকাশ হওয়ার পরপরই দশমিনার সচেতন মহল তার মরদেহ দশমিনার মাটিতে দাফন না করতে দেয়ায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। তাই স্থানীয় সচেতন মহলের এমন প্রতিজ্ঞার কথা জানতে পেরে স্বজনররা নয়ন বন্ডের মরদেহ নিয়ে দশমিনায় আসেননি।
পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহিন বলেন, নয়নের মরদেহ তার মামা মিজানুর রহমান বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গ্রহণ করেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সযোগে পটুয়াখালী নেয়া শুরু করলে সেখান থেকে খবর আসে, খুনির মরদেহ সেখানে দাফন করতে দেবে না এলাকাবাসী। এ অবস্থায় মিজানুর রহমানের নিজের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলায় নয়নকে দাফন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সন্ধ্যায় তার বাড়িতে নয়ন বন্ডের মরদেহ দাফান করা হয়।
মঙ্গলবার ভোররাতে বরগুনার পুরাকাটায় পায়রা নদীর তীরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নয়ন বন্ড নিহত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রাণের শহর তিলোত্তমা বরগুনা নামের একটি আইডি থেকে লেখা হয়েছে, প্রাণের শহর তিলোত্তমা বরগুনার পবিত্র মাটিতে এই পাপীর দাফন করা কোনো অবস্থাতেই সমীচীন নয়।
মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে বরগুনার পুরাকাটার পায়রা নদীর পাড়ে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন রিফাত হত্যার অন্যতম প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড।
এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, দুটি শটগানের গুলির খোসা এবং তিনটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এএসপি শাজাহানসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হন।
গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী মিন্নিকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান রিফাত। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরও দুই যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালান। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন তারা।
রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নি দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই হামলাকারীদের থামানো যায়নি। তারা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যান। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।