ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের ‘জাতীয় সংগীত’ প্রসঙ্গে ব্যক্তিগত মন্তব্য করে বেশ বিব্রত অবস্থায় পড়েছেন বাংলাদেশী তরুণ গায়ক মইনুল আহসান নোবেল।
এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র সমালোচনা এবং আলোচনার মুখে পড়েছেন এই শিল্পী। এবার তার তীব্র সমালোচনায় মেতে উঠেছে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম।
মোটা দাগে সেসব মিডিয়ায় যা বলা হচ্ছে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চূড়ান্ত অপমান করেছেন বাংলাদেশের নোবেল।
বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার নোবেল প্রসঙ্গে একাধিক প্রতিবেদন এসেছে কলকাতা থেকে প্রকাশিত শীর্ষস্থানীয় বাংলা সংবাদমাধ্যমগুলোতে।
এর মধ্যে টাইমস অব ইন্ডিয়ার বাংলা ভার্সন ‘এই সময়’ শিরোনাম করেছে, ‘রবীন্দ্রনাথকে চূড়ান্ত অপমান, নোবেলের ঔদ্ধত্যে চাবকাতে চান ইমন!’
এছাড়াও আরেকটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন-নিউজ এইটিনের’ বাংলা ভার্সনে পায় একই ধরনের শিরোনাম করা হয়েছে। নোবেলের সেই মন্তব্যের প্রসঙ্গে খবর ছাপিয়েছে তারা।
শিরোনাম করেছে, ‘বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে রবীন্দ্রনাথকে অপমান, নতুন বিতর্কে নোবেল’।
ওয়ান ইন্ডিয়া নামক আরেকটি পোর্টালে শিরোনাম করা হয়েছে, ‘নোবেলকে ‘চাবকে’ ঠিক করার বার্তা ইমনের!’
এছাড়াও দেশটির একটি অনলাইন গণমাধ্যমে লেখা হয়েছে, ‘রবীন্দ্রনাথকে বাংলাদেশি গায়কের চরম অপমান নিয়ে তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া।’
আরেকটি পোর্টাল শিরোনাম করেছে, ‘নোবল করলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকে অপমান, ইমন চক্রবর্তী ক্ষুব্ধ!
অন্য একটিতে লেখা হয়েছে, ‘বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নাকচ করে দিলেন নোবেল! উঠতি গায়কের ঔদ্ধত্যে তাকে চাবকাবেন প্রসিদ্ধ গায়িকা ইমন।’
সবগুলো সংবাদমাধ্যমের সেই খবরে নোবেল প্রসঙ্গে কলকাতার জনপ্রিয় গায়িকা ইমন চক্রবর্তীর বক্তব্যটিই ঘুরে ফিরে এসেছে। কলকাতার এক গায়িকা নোবেলের মন্তব্যের জন্য তাকে ‘চাবুক মারতে’ চান বলে ইচ্ছা প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন।
সে বিষয়টিকেই শিরোনামে উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, ‘রবীন্দ্রনাথকে চূড়ান্ত অপমান’ অংশটি তাদের নিজস্ব মন্তব্য।
একই প্রতিবেদনের ভেতরে চুম্বক অংশ হিসেবে একটি লাইন দেয়া লেখা হয়েছে, ‘সরাসরি রবীন্দ্রনাথকে নাকচ করে দিলেন নোবেল।’
যদিও সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া নোবেলের সেই সাক্ষাৎকারে রবীন্দ্রনাথকে ‘নাকচ’ করা বা তাকে অপমানসূচক কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি।
তিনি সেখানে গীতিকার প্রিন্স মাহমুদের লেখা ও জেমসের কণ্ঠের সেই জনপ্রিয় গান বাংলাদেশ এর প্রশংসা করেছিলেন। গানটির প্রতি নিজের আবেগ প্রকাশ করতে গিয়ে নোবেল এর সঙ্গে দেশের জাতীয় সংগীতকে গুলিয়ে ফেলেন।
ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল ভারতীয় রিয়েলিটি শো ‘সারেগামাপা-১৯’ এ যোগদানের আগে। এ শোতে নোবেল যৌথখাবে তৃতীয় রানারআপ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হয়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে নোবেল যে কথাগুলো বলেছেন, ‘প্রিন্স মাহমুদ স্যারের লেখা এই গানটা নিয়ে আমি একটা কথা বলব। তা নিয়ে হয়তো অনেকে অনেক কিছু আমাকে বলতে পারে। হয়তো খারাপ মনে করতে পারে। তবে এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত একদমই। আমি মনে করি যে, আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ আমাদের দেশটাকে যতোটা এক্সপ্লেইন করে তার থেকে কয়েক হাজার গুণ বেশি এক্সপ্লেইন করে প্রিন্স মাহমুদ স্যারের লেখা বাংলাদেশ গানটি। ’
গানটি বাংলাদেশে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আবেগের স্থানটা যথাযথ প্রকাশ করছে বলে নোবেলের অভিমত।
উপস্থাপকের এক কথা পিঠে নোবেল আরও বলেন, ‘আপনারা জানবেন যে, প্রিন্স মাহমুদের বাংলাদেশ গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকে কিন্তু মিছিলও করেছিল। ’
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত নিয়ে এমন বক্তব্যের পর বির্তকের জালে আটকে পড়েন নোবেল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিচার চেয়েছেন অনেকে।
এরমধ্যে আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করেন কলকাতার গায়িকা ইমন চক্রবর্তী। নোবেলকে চাপকাতে চাই মন্তব্য ছুড়ে ইমন ভারতীয় এক গণমাধ্যমে বলেন, ‘নোবেল যে শুধু বাংলাদেশকে অপমান করেছেন, জাতীয় সংগীতের অবমাননা করেছেন- এমন নয়; আমি মনে করি তিনি বাঙালির সাংস্কৃতিক আত্মাভিমানে আঘাত করেছেন। একজন শিল্পী হিসেবে আমি এর প্রতিবাদ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ নোবেল আমার ছোট ভাইয়ের মতো। তার ক্যারিয়ার শুরু হলো মাত্র। তাই শুরুতেই এ রকম বিরূপ মন্তব্য ওর করা উচিত হয়নি।’
আর ইমনের সেসব মন্তব্যকে সামনে এনেই কলকাতার সংবাদমাধ্যমগুলো নোবেলের সমালোচনায় মাতলো।