ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ শেখ হাসিনা ভারত পন্থি, তাহলে পাকিপন্থী বিএনপি-জামাতই দেশপ্রেমী? এই প্রশ্নটি তুলেছেন মোহাম্মদ এ আরাফাত। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো-
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে বিএনপির বক্তব্য : ‘শেখ হাসিনা আরেকটি দাসখত দিলেন।’ বিএনপি-জামাতি অন্ধ সমর্থকগোষ্ঠী ও রাজাকার শাবকরা সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ল একই কথা প্রচার করতে। রাজাকার শাবকদের ভাষায় শেখ হাসিনা ভারতপন্থী আর তারা নিজেরা খাঁটি দেশপ্রেমী।
আসুন এবার সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে পর্যালোচনা করে দেখি বিষয়টি কি?
(১) ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ আন্তর্জাতিক ফোরামে গিয়ে শেখ হাসিনাই নিষ্পত্তি করেছেন এবং বাংলাদেশের পক্ষে রায় এনেছেন। বিএনপি-জামাত কোনো উদ্যোগই নেয়নি, তবুও রাজাকার শাবকদের দৃষ্টিতে শেখ হাসিনাই ভারতপন্থী, আর পাকিপন্থী বিএনপি-জামাত একমাত্র দেশপ্রেমী!
(২) স্থলসীমানা বিরোধ নিষ্পত্তি এবং ছিটমহল সমস্যার সমাধানের মধ্য দিয়ে দশ হাজার একর জমি বাংলাদেশের মধ্যে সংযুক্ত করেছেন শেখ হাসিনা, অন্য কেউ নয়। বিএনপি-জামাত কোনো দিন চেষ্টা পর্যন্ত করেনি সমাধানের, তবুও রাজাকার শাবকদের দৃষ্টিতে শেখ হাসিনাই ভারতপন্থী, আর পাকিপন্থী বিএনপি-জামাত দেশপ্রেমী!
(৩) ভারতের মাটি এবং গ্যাস ব্যবহার করে ভারতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ (৬০০ মেগাওয়াট) আমদানি করে বাংলাদেশের কাজে শেখ হাসিনাই লাগিয়েছেন, বিএনপি-জামাত ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি তো দূরের কথা, নিজ দেশেই এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ পর্যন্ত উৎপাদন করতে পারেনি। তবুও রাজাকার শাবকদের দৃষ্টিতে শেখ হাসিনাই ভারতপন্থী, আর পাকিপন্থী বিএনপি-জামাত দেশপ্রেমী!
(৪) বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্যের ওপর থেকে ভারতের আরোপিত ট্যারিফ প্রত্যাহার শেখ হাসিনাই করিয়েছেন এবং বাংলাদেশের বেশ কিছু পণ্য ভারতে রপ্তানিতে অন্যান্য বাধাও অপসারণের প্রক্রিয়া শেখ হাসিনাই শুরু করেছেন, যা অদূর ভবিষ্যতে সফলও হবে। বিএনপি-জামাত এক্ষেত্রেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি, তবুও রাজাকার শাবকদের দৃষ্টিতে শেখ হাসিনাই ভারতপন্থী, আর পাকিপন্থী বিএনপি-জামাত দেশপ্রেমী!
(৫) ভারতের নাকের ডগা দিয়ে অত্যাধুনিক চাইনিজ সাবমেরিন যুক্ত করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তর করে দেশকে সামরিকভাবে শক্তিশালী শেখ হাসিনাই করেছেন। বিএনপি-জামাত এ বিষয়ে কখনোই কোনো উদ্যোগই নেয়নি। তবুও রাজাকার শাবকদের দৃষ্টিতে শেখ হাসিনাই ভারতপন্থী, আর পাকিপন্থী বিএনপি-জামাত দেশপ্রেমী!
(৬) গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তিতে ভারতকে রাজি করিয়ে, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা শেখ হাসিনাই আদায় করেছেন। আর বিএনপি নেত্রী তো গঙ্গার পানির কথা বলতেই ভুলে গিয়েছিলেন- এ কথা দেশের সবাই জানে। তবুও রাজাকার শাবকদের দৃষ্টিতে শেখ হাসিনাই ভারতপন্থী, আর পাকিপন্থী বিএনপি-জামাত দেশপ্রেমী!
(৭) টিপাইমুখে বাধ নির্মাণ বন্ধ করতে ভারতকে বাধ্য শেখ হাসিনাই করেছেন। আর বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে ভারত এই বাধ নির্মানের পরিকল্পনা পর্যায়ে বহুদূর এগিয়ে গিয়েছিল। টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ বন্ধে বিএনপি-জামাত সরকারের কোনো চেষ্টাই ছিল না। তবুও রাজাকার শাবকদের দৃষ্টিতে শেখ হাসিনাই ভারতপন্থী, আর পাকিপন্থী বিএনপি-জামাত দেশপ্রেমী!
(৮) তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির জন্য ভারতকে চাপের মধ্যে শেখ হাসিনাই রেখেছেন। এই চুক্তি হলেও শেখ হাসিনার হাত ধরেই হবে। বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় থাকতে তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবুও রাজাকার শাবকদের দৃষ্টিতে শেখ হাসিনাই ভারতপন্থী, আর পাকিপন্থী বিএনপি-জামাত দেশপ্রেমী!
(৯) ফেলানি হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে ভারতকে বাধ্য শেখ হাসিনাই করেছেন। এ বিচার এখনো চলছে। বিএনপি-জামাতের এ বিষয়ে কখনও কোনো সদিচ্ছা ছিল না, শুধু বড় বড় কথা বলেছে। তবুও রাজাকার শাবকদের দৃষ্টিতে শেখ হাসিনাই ভারতপন্থী, আর পাকিপন্থী বিএনপি-জামাত দেশপ্রেমী!
(১০) বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধে শেখ হাসিনাই কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন। বহুবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। এর ফলে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড একেবারে বন্ধ না হলেও অনেকখানি কমে এসেছে। যে কোনো মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট থেকেই দেখা যাবে বিএনপি-জামাত আমলে সীমান্তে বছরে শতাধিক হত্যাকাণ্ড ঘটতো, যা এখন কমে ১২/১৩ তে নেমে এসেছে এবং শেখ হাসিনা ভারতের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছেন সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য। যথারীতি বিএনপি-জামাত এ বিষয় নিয়েও সস্তা রাজনীতিই ছাড়া আর কিছু করেনি, কার্যকর কোনো উদ্যোগ কখনো নেয়নি। তবুও রাজাকার শাবকদের দৃষ্টিতে শেখ হাসিনাই ভারতপন্থী, আর পাকিপন্থী বিএনপি-জামাত দেশপ্রেমী!