DMCA.com Protection Status
title="৭

জুন’২০ পর্যন্ত বিনা লাইসেন্সে যানবাহন চালানোর দাবী মেনে নেয়ায় ধর্মঘট প্রত্যাহার।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  দিনভর যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি শেষ মধ্যরাতে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে পরিবহন ধর্মঘট। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির বাসায় দীর্ঘ ৪ ঘণ্টার রুদ্ধদার  বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে রাত সোয়া একটার দিকে এ ঘোষণা দেয় ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এর আগে রাত ৯ টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসে তারা। নতুন আইন কার্যকরে আরও ৭ মাস সময় পেয়েছেন মালিক-শ্রমিকরা।    

সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের ৯ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা করেছি। লাইসেন্স, ফিটনেস সনদ আপডেটের জন্য তাদের ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। তারা আইন সংশোধনের যে দাবি জানিয়েছেন সেটা বিবেচনার জন্য সুপারিশ আকারে আমরা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। তারা এগুলো বিবেচনা করে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করবে।

দাবিগুলো সম্পর্কে মন্ত্রী আরও বলেন, যে লাইসেন্স দিয়ে তারা গাড়ি চালাচ্ছে  সেগুলোর অনেকগুলো সঠিকভাবে বিআরটিএ সময়মতো দিতে পারেনি। অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন বা নবায়নের জন্য তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিআরটিএ নির্দিষ্ট সময়মতো তা দিতে পারেনি।

 

ফলে তারা সঠিক ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের লাইসেন্সগুলো ঠিক করতে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছে। আমরা তা মেনে নিয়েছি। এখন তারা বর্তমানে যে লাইসেন্স আছে সেগুলো দিয়ে গাড়ি চালাতে পারবে।

আবার অনেকে গাড়ির ফিটনেস হালনাগাদ করার জন্য নিয়মমাফিক কর প্রদান করেনি। ফলে তাদের কাছে ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই গাড়ির ফিটনেস থাকা সত্ত্বেও। তাদের ক্ষেত্রেও এ সমস্যা সমাধানে বা বিআরটিএর ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়ন করতে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। এ সময় পর্যন্ত তাদের যে ফিটনেস সার্টিফিকেট আছে সেগুলো দিয়ে গাড়ি চালাতে পারবে।

মন্ত্রী বলেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘসময় ধরে আলোচনা হয়েছে। যেসব দাবি সংগত সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা মেনে নিতে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। আর বাকি দাবি অনুসারে আইন সংশোধনের বিষয়ে বেশকিছু সুপারিশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আমরা পাঠাবো। এ আশ্বাসে সন্তুষ্ট হয়ে তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছে। বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে স্বাভাবিকভাবে গাড়ি চলাচল করবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, নতুন আইনের ১২৬টি ধারার ৯টি ধারায় তাদের আপত্তি ছিলো। আইনটি ইতিমধ্যে প্রয়োগ হয়ে গেছে। আর যে ধারাগুলো সংশোধনের দাবি এসেছে সেগুলো বিচার-বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আমরা পাঠাবো।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, আজ বৈঠকের মাধ্যমে প্রণীত আইনের বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত মোটেও আইনপরিপন্থী নয়। আইনটি বাস্তায়নের ক্ষেত্রে কিছু অসঙ্গতি আমাদেরও রয়েছে যেমন, পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত জায়গা আমরা করতে পারিনি। সেগুলোই বিবেচনা করা হবে।

এ সময় পরিবহন মালিক শ্রমিকদের পক্ষে রস্তম আলী খান বলেন, নতুন আইন নিয়ে দীর্ঘক্ষণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি দাবিগুলো ইতিবাচকভাবে মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এ কারণে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিচ্ছি।

এর আগে পূর্বনির্ধারিত এই বৈঠকে যোগ দিতে রাত সাড়ে ৮টার পর থেকেই বিভিন্ন পরিবহন শ্রমিক নেতারা মন্ত্রীর বাসভবনে আসতে শুরু করেন।

বৈঠকে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলামসহ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ও অন্যান্য সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, নতুন সড়ক পরিবহন আইনের বিরোধিতা করে শ্রমিকদের ধর্মঘট, কোথাও কোথাও সড়ক অবরোধে গতকাল বুধবার কার্যত অচল হয়ে পড়ে পণ্য পরিবহন ও যাত্রীসেবা। ভোর থেকে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের ধর্মঘটের কারণে সারা দেশে পণ্য পরিবহন প্রায় বন্ধ ছিলো। দেশের বন্দর, কৃষি ও নিত্যপণ্যের মোকাম থেকে বিভিন্ন স্থানে মালামাল পরিবহনও বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

গত শনিবার থেকেই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাত্রী পরিবহন বাধাগ্রস্ত হতে শুরু করে। এরপর তা উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল সকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করেন। এতে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পুরোটা এবং ঢাকা বিভাগের কিছু জেলায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণের পর দেশের পূর্বাঞ্চলও অচল হয়ে পড়ে। দুর্ভোগে পড়েন মানুষ। পরে বেলা দুইটার দিকে পুলিশ শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর পূর্বাঞ্চলে অল্প হলেও বাস চলাচল শুরু হয়।

গতকাল কমপক্ষে ২৭টি জেলায় ধর্মঘট পালন করেন পরিবহন শ্রমিকরা। গাজীপুর ও চট্টগ্রামে ধর্মঘট না মেনে যারা যানবাহন চালিয়েছেন, তাদের অনেকে শ্রমিকদের মারধরের শিকার হয়েছেন।

সূত্র বলছে, পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিকদের মূল লক্ষ্যই ছিল চাপ দিয়ে নতুন সড়ক পরিবহন আইনের কিছু ধারা সংশোধন করা, আইনের প্রয়োগ কিছুটা পিছিয়ে দেয়া ও শিথিল করা। ইতিমধ্যে তারা এই কাজ করতে পেরেছে। কারণ, নতুন আইনে এখনো কাউকে কারাদ- দেয়া হয়নি। আইন অমান্যে পুলিশ মামলা দিচ্ছে না। বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম দিন দিন শিথিল হচ্ছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!