ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির চেয়ারপার্সন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দীর ২ বছর পূর্তিতে ক্ষোভ এবং তাঁর মুক্তির দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র যুব দল এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারে। যুবদলের এই সমাবেশে নেতাকর্মীরা শপথ গ্রহণ করেন যে বেগম জিয়ার মুক্তি ছাড়া তারা রাজপথ ছেড়ে যাবেন না। বলেন, বেগম জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। এই সমাবেশ থেকে বেগম জিয়ার মুক্তিতে ব্যাতিক্রমী এক কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয় যুবদলের পক্ষ থেকে। এই কর্মসূচি হচ্ছে নিউইয়র্কের জাতিসংঘ থেকে হোয়াইট হাউজে বাসযোগে রোড মার্চ এবং পথ সভার।
যুব দলের সভাপতি জাকির এইচ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং যুব দল নেতা আবুল কাশেম ও আমানত হোসেন আমানের পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাট। প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন, সাবেক সহ সভাপতি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র যুব দলের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ আহমেদ, তারেক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পরিষদের সভাপতি পারভেজ সাজ্জাদ, ঢাকা জেলা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এম বাসেত রহমান, নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান সাইদ, ব্রুকলীন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সরোয়ার্দী, ব্রঙ্কস বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহিম, বিএনপি নেতা হেলালুর রহমান, এবাদ চৌধুরী, বিএনপি নেতা সালেহ চৌধুরী, বিএনপি নেতা সাইফুর খান হারুণ, শ্রমিক দল যুক্তরাষ্ট্র শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাক আহমেদ।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মাইনুল হাসান মুহিত, নিউইয়র্ক স্টেট যুব দলের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল আজাদ ভুইয়া, যুব দল নেতা খলকু রহমান, ছাত্রদল নেতা ফাহিম শাকিল, আনোয়ার হোসেন, নূর আলম, ছাত্রদল নেতা ফারুক খন্দকার, হাসান আহমেদ, এনাম আহমেদ, যুব দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম মাহমুদ, শফিকুল ইসলাম, স্টেট যুব দলের সহ সভাপতি বি এম বাদশা, মুক্তিযোদ্ধা মীর মশিউর রহমান, আব্দুল হাকিম, যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, খোরশেদ আলম, মহিলা নেত্রী তাহমিনা আক্তার, জাতীয়তাবাদী ফোরামের সভাপতি নাসিম আহমেদ, ছাত্রদল নেতা মীর মিজান, শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম, নিউইয়র্ক স্টেট যুবদলের সভাপতি কাজী আমিনুল ইসলাম স্বপন প্রমুখ।
আব্দুল লতিফ সম্রাট বলেন, যুব দল যে ঘোষণা দিয়েছে আমরা সেই কর্মসূচি সফল করবো। রোড মার্চে যে পথ সভার আয়োজন করেছে সেই কর্মসূচি সফল করে তুলতে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। সেই সাথে তিনি টাইমস স্কোয়ারে বিক্ষোভ সমাবেশ করার আহবান জানান। সেই সমাবেশে মেইন স্ট্রিম মিডিয়াকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে। তিনি জাতিসংঘে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন এবং সেই কর্মসূচি সফলে ৫২ স্টেটের নেতাকর্মীদের আহবান জানানো হবে।
তিনি আরো বলেন, যারা নতুন দোকান খোলার চেষ্টা করছেন তাদের কোন সুযোগ দেয়া হবে না। আসুন পদ পদবী ভুলে গিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমরা কারো দয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই না। আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই।
জিল্লুর রহমান জিল্লু বলেন, গত ৯ বছর ধরে পুরো বাংলাদেশ কারাগারে বন্দী। বাংলাদেশের গণতন্ত্র বন্দী। বেগম খালেদা জিয়া যে দিন মুক্ত হবেন সেই দিনই বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি আসবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব রক্ষা পাবে। তিনি বলেন, আমরা পদের তোয়াক্কা করি না, যে কারণে বিএনপির রাজনীতি করছি। বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন করছি। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির আন্দোলন দিলে আমরা তাদের সাথে মিল রেখে আন্দোলন করবো।
প্রফেসার দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে প্রতারণা করছি। আমরা যদি প্রতারণা না করতাম তাহলে বেগম খালেদা জিয়া ইতিমধ্যেই মুক্তি পেতেন। তিনি বলেন, আমরা বেগম জিয়ার মুক্তিতে ব্যর্থ।
যুবদলের সভাপতি জাকির এইচ চৌধুরী অনুষ্ঠানকে সফল করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দেশ স্বাধীনের পর পরই শেখ মুজিব বাংলাদেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি পারেননি। শেখ হাসিনাও পারবে না। তিনি আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে আমরা মুজিব বর্ষ পালন করতে দেবো না এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বাংলাদেশে আসতে দেবো না। তিনি বলেন, আমরা যুব দল মার্চ মাসে রোড মার্চ কর্মসূচি পালন করবো।
যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ আহমেদ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিতে কেন্দ্রীয় কমিটিকে রাজপথে আন্দোলন দেয়ার আহবান জানান। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির পক্ষ থেকে টাইস স্কোয়ারে বিক্ষোভ সমাবেশ করার আহবান জানান। যুব দলের পক্ষ থেকে নিজেই সভাপতির বরাত দিয়ে রোড মার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এই কর্মসূচি হবে বাসযোগে জাতিসংঘ থেকে হোয়াইট হাউজে। ১৫/২০টি গাড়ি নিয়ে এই রোড মার্চ করা হবে এবং পথিমধ্যে পথ সভা।
মীর মিজান বলেন, আমার আশঙ্কা বর্তমান স্বৈরাচারি শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে।
জাহাঙ্গীর সরোয়ার্দী বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে নিতে হলে শেখ হাসিনার পেটোয়া বাহিনীকে ভয় পেলে চলবে না। ভয়কে আমাদের জয় করতে হয়।
পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, ছাত্র দল, যুবদলসহ সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনের মাধ্যমে বাকশালী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ২ বছর কারাগারে নয়, আসলে বাংলাদেশ কারাগারে ২ বছর। বাংলাদেশের গণতন্ত্র কারাগারে বন্দী ২ বছর। তারা আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এই স্বৈরাচার সরকার কোন দিন দেবে না। কারণ খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আজ সরকারের দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিচার বিভাগসহ সকল প্রতিষ্ঠান এখন সরকারের দলীয় প্রতিষ্ঠানে রূপ লাভ করেছে। আর পুলিশ দলীয় পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তারা আরো বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এই সরকারের পতন ছাড়া হবে না। এই সরকারের পতন ঘটাতে হলে অবশ্যই আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে হবে। তারা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের খালেদা মুক্তির জন্য আন্দোলন দেয়ার আহবান জানান। অনুষ্ঠানে কোন কোন বক্তা ব্যর্থতার অভিযোগ এনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পদত্যাগ দাবি করেন। যদিও সভাপতি জাকির এইচ চৌধুরী এই বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, এটা যার যার ব্যক্তিগত বক্তব্য, এর সাথে যুব দলের কোন সম্পর্ক নেই।