ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নজরুল ইসলাম মজুমদার। বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের সবাই যাকে এক নামে চেনে। কারণ তিনি বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাপতি।
এর বাইরেও নাসা শিল্প গ্রুপের কর্ণধার এবং এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যানও তিনি। যে কোনো জাতীয় দুর্যোগকালে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রাণ তহবিলে বিশেষ অনুদানের বিশাল চেক নিয়ে সর্বদা হাজির হন তিনি। চেক প্রদানের সচিত্র সংবাদও বড় পরিসরে বিজ্ঞাপন আকারে ছাপা হয় বহু সংবাদপত্রে। যদিও এসব অনুদানের অর্থ সংস্থান করা হয় ব্যাংকগুলোর তহবিল থেকেই।
কিন্তু এই মানুষটির ভিন্ন এক পরিচয় উঠে এসেছে সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে। যেখানে বলা হয়েছে, নজরুল ইসলাম মজুমদার পদপদবির ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে আমদানি-রফতানির আড়ালে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। ঋণ দেয়া-নেয়াসহ নানা ক্ষেত্রে করেছেন গুরুতর অনিয়ম। যার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে বিভিন্ন ব্যাংকের কয়েকটি প্রতিবেদনে।
এদিকে বিভিন্ন সূত্র থেকে আমাদের হাতেও এসেছে তার আর্থিক অপকর্মের প্রতিবেদনসহ বেশকিছু কাগজপত্র। ভুক্তভোগী অনেকের অলিখিত অভিযোগও গুরুতর। ক্ষমতার বিশেষ প্রভাববলয় ব্যবহার করে তিনি ইতোমধ্যে জমি দখলেও কম যাননি। যদিও প্রভাবশালী এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যাকিং সেক্টরসহ সমাজ ও প্রশাসনের অনেকে মুখ খুলতে ভয় পান।
একসময়ের বিএনপি ঘরানার নজরুল ইসলাম মজুমদার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে রাতারাতি আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে যান! যা তার সময়সাময়িক ব্যবসায়ীদেরও হতবাক করেছে। অজ্ঞাত জাদুর কাঠির বলে নানা কৌশলে বিশেষ ক্ষমতার আধারে পরিণত হন তিনি।
এ কারণে তার অপকর্মের আমলনামা ধামাচাপা দিতে সব সময় সক্রিয় থাকে সমাজের সুবিদাবাদী প্রভাবশালীদের অনেকে। যাদের বেআইনি প্রভাববিস্তারের কারণে নজরুল ইসলাম মজুমদারদের মতো আরও অনেক রাঘববোয়ালের আসল চেহারা জনসম্মুখে প্রকাশিত হয় না।
ব্যাংকিং সেক্টরে এদের সব অপকর্মের তথ্য একরকম সিলগালা করা থাকে। কোনো কর্মকর্তা মুখ খুললে তাকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। ফলে বিপুল পরিমাণ বেনামি ঋণের তথ্য আজও সবার অজানা। যেসব টাকার বেশির ভাগ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।
তবে ব্যাংকিং খাতের কয়েকজন বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেহেতু সব সময় দুর্নীতি-জালিয়াতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নীতি বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তাই ঘটনা ফাঁস হওয়ায় এবার অন্তত নজরুল ইসলাম মজুমদারও ছাড় পাবেন না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও সোমবার এক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে বলে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন। তাই তারা বিশ্বাস করেন, উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে নিশ্চয় সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত তদন্ত কমিটি গঠিত হবে এবং প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে জালিয়াতি ও অর্থ পাচার নিয়ে যেসব খবর প্রকশিত হয়েছে তাতে নৈতিক কারণে তার অন্তত এখন দুটি পদে থাকার অধিকার নেই।
একটি হল বিএবি’র সভাপতি পদ, অপরটি এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান। এছাড়া তদন্ত চলাকালে তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলে তদন্ত প্রভাবিত ও বাধাগ্রস্ত হওয়ার যথেষ্ট সংশয় থেকে যাবে। তাই তাকে এসব পদ থেকে অপসারণ করেই বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত গঠন করা সমীচীন হবে।
এদিকে অর্থনীতি বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, চলমান করোনা দুর্যোগের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করা প্রয়োজন। বিশেষ করে যারা এতদিন বিভিন্ন পন্থায় ব্যাংক লুটপাটসহ নানা পথে ঘুষ-দুর্নীতি করে বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদ গড়েছেন, তাদের সম্পদ জব্দ করে সরকারের ত্রাণ তহবিলে যুক্ত করতে হবে। কেননা শুধু সরকারের একার পক্ষে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না। সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আশার পাশাপাশি দেশে-বিদেশে থাকা দুর্নীতিবাজদের সম্পদ তালাশ করতে হবে।
অনিয়মই নাসা গ্রুপের নিয়ম : অন্যান্য ব্যাংকের মতো শরিয়াহভিত্তিক একটি বড় বেসরকারি ব্যাংকেরও গ্রাহক নাসা গ্রুপ। কিন্তু ব্যাংকের একটি শাখায় গ্রুপের বৈদেশিক বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট অর্থায়নে নানা অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে। গ্রুপটি নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে এ ধরনের অনিয়ম করেছে। ব্যাংকটির এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘প্রতারণার মাধ্যমে ফান্ড ডাইভারশনের বিশ্লেষণ।’ এরপর প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়, ‘শাখার গ্রাহক নাসা গ্রুপের বৈদেশিক বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট অর্থায়নে অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে। গ্রাহকের বিগত ৪ বছরের আমদানি ও রফতানি এবং ঋণসীমা ও ঋণ বিতরণের তুলনামূলক আলোচনায় দেখা যায়, প্রায় প্রতিবছরই গ্রাহকের (নাসা গ্রুপ) ঋণ সীমার অতিরিক্ত বিতরণ করা হয়েছে এবং আমদানির তুলনায় রফতানি কম করা হয়েছে।’
ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা নাসা গ্রুপের টেক্সটাইল ইউনিটের ঋণ পারফরম্যান্স সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫ সালে গ্রুপের ঋণসীমা ছিল ১৪৫ কোটি টাকা। কিন্তু নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে ঋণ নিয়েছে ৩৫৪ কোটি টাকা। এতে সীমার চেয়ে ২০৯ কোটি টাকা বেশি নিয়েছে। একই বছর ওই ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭৫ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করেছে গ্রুপটি। কিন্তু রফতানি করে মাত্র ১৫৩ কোটি টাকার। অর্থাৎ আমদানির তুলনায় রফতানি ২১ কোটি টাকা কম।
২০১৬ সালে গ্রুপের ঋণসীমা ছিল ১৫০ কোটি টাকা। কিন্তু গ্রুপটি ঋণ নিয়েছে ১৭৯ কোটি টাকা। এতে সীমার চেয়ে ২৯ কোটি টাকা বেশি নিয়েছে। একই বছর ওই ব্যাংকের মাধ্যমে ১৬১ কোটি টাকার পণ্য আমদানির বিপরীতে রফতানি করেছে ১৮৯ কোটি টাকার। এই বছরে তারা আমদানির চেয়ে রফতানি কিছুটা বেশি করে।
২০১৭ সালে গ্রুপের ঋণসীমা ছিল ২১০ কোটি টাকা। কিন্তু ঋণ নিয়েছে ২২২ কোটি টাকা। এতে সীমার চেয়ে ১২ কোটি টাকা বেশি নিয়েছে। একই বছর ওই ব্যাংকের মাধ্যমে ২৪১ কোটি টাকার পণ্য আমদানির বিপরীতে রফতানি করেছে মাত্র ১৯৩ কোটি টাকার পণ্য। আমদানির তুলনায় রফতানি কম করেছে ৪৭ কোটি টাকা।
২০১৮ সালে গ্রুপের ঋণসীমাও ছিল ২১০ কোটি টাকা। গ্রুপ ঋণ নিয়েছে ২০০ কোটি টাকা। তবে এ বছর সীমার চেয়ে ১০ কোটি টাকা কম নিয়েছে। একই বছর ওই ব্যাংকের মাধ্যমে ২২৫ কোটি টাকার পণ্য আমদানির বিপরীতে রফতানি করেছে মাত্র ১৭৮ কোটি টাকার পণ্য। আমদানির তুলনায় রফতানি কম হয়েছে ৩৭ কোটি টাকার।
উল্লিখিত চার বছরের তথ্যবিশ্লেষণে দেখা যায়, শুধু খাতাকলমেই আমদানির বিপরীতে ১০৫ কোটি টাকা কম রফতানি করেছে। যেখানে অর্থনীতির নিয়মানুযায়ী রফতানি আয় আমদানির থেকে বেশি হওয়ার কথা। ফলে এখানে আমদানি-রফতানির আড়ালে অর্থ পাচারের সুস্পষ্ট আলামত বহন করে।
এ বিষয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের একজন এমডি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যাংক সেক্টরের প্রভাবশালীরা যেভাবে ব্যাংক লুটপাট করছেন তার কাছে এ চিত্র খুবই সামান্য। আসলে বিদ্যমান অবস্থায় গণমাধ্যমকার্মীদের এ বিষয়ে অনুসন্ধান করার সুযোগ ও সক্ষমতা খুবই কম। তাছাড়া চাকরি রক্ষা করতে হলে কেউ কোনো তথ্য দেবে না।
একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই পারেন একটা শক্ত ব্যবস্থা নিতে। তাহলে দেখা এসব প্রভাবশালীর মুখোশ খুলে যাবে। তিনি বলেন, নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ এ সারির অনেকে বিদেশে কোথায় কী পরিমাণ সম্পদ করেছেন, সেটি তদন্ত হওয়া সময়ের দাবি। এটি একমাত্র সরকারের পক্ষেই সম্ভব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যাংকার জানান, ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে যে পণ্য আমদানি করা হয়, রফতানির পরিমাণ তার চেয়ে বেশি হবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নাসা গ্রুপের ক্ষেত্রে রফতানির পরিমাণ আমদানির চেয়েও কম হয়েছে। যেটা হওয়ার কথা নয়। তারা বলেন, এমনিতে অনেকে বন্ড সুবিধায় গার্মেন্টের কাঁচামাল এনে খোলাবাজারে বিক্রি করে থাকে।
এভাবে অনেকে গার্মেন্ট ব্যবসার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে রাতারাতি ধনী হয়েছেন। ফলে গড় হিসাবে আমদানির বিপরীতে রফতানির আর্থিক হিসাব বেশি হতে হবে। এছাড়া ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গ্রাহকদের ঋণ বিতরণের একটি সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
এই সীমার মধ্যে থেকেই লেনদেন করতে হয়। গ্রাহকের ব্যবসা বাড়লে সীমার চেয়ে বেশি লেনদেন করতে চাইলে, এই সীমা বাড়ানোর সুযোগ আছে। কিন্তু নাসা গ্রুপ ঋণসীমা না বাড়িয়েই সীমার চেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে। এতে ব্যাংকের ঋণ শৃঙ্খলা ব্যাহত হয়েছে। মূলত তিনি ব্যাংক মালিকদের সংগঠনের সভাপতি হওয়ায় কেউ তার এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করতে পারেনি। এটি তদন্তের দাবি রাখে।
এদিকে গ্রুপের শুধু টেক্সটাইল ইউনিটই নয়, নাসা গ্রুপের গার্মেন্ট ইউনিটের ঋণের ক্ষেত্রেও প্রায় একই ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। খাতটির পারফরম্যান্স পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫ ও ’১৬ সালে সীমাতিরিক্ত ঋণ না নিলেও পরবর্তী দুই বছর সীমা লঙ্ঘন করে ঠিকই বেশি ঋণ নিয়েছে গ্রুপটি।
২০১৭ সালে গ্রুপের গার্মেন্ট ইউনিটের ঋণসীমা ছিল ৪১০ কোটি টাকা। কিন্তু গ্রুপ ঋণ নিয়েছে ৫২৯ কোটি টাকা। এতে সীমার চেয়ে ১১৯ কোটি টাকা বেশি নিয়েছে। একই বছর ওই ব্যাংকের মাধ্যমে ৭০৬ কোটি টাকার পণ্য আমদানির বিপরীতে রফতানি করেছে ৬৯৫ কোটি টাকার পণ্য।
আমদানির তুলনায় রফতানি কম হয়েছে ১১ কোটি টাকার। এর আগে ২০১৫ সালে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ৬৪৮ কোটি টাকার পণ্য আমদানির বিপরীতে রফতানি করেছে ৫৫৪ কোটি টাকার পণ্য। ওই বছরে আমদানির তুলনায় রফতানি কম হয়েছে ৯৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে গ্রুপের ঋণসীমাও ছিল ৪১০ কোটি টাকা। গ্রুপটি ঋণ নিয়েছে ৪৬৮ কোটি টাকা। এখানে সীমার চেয়ে ৫৮ কোটি টাকা বেশি ঋণ নিয়েছে।
ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নাসা গ্রুপের বাই সালাম (স্পেশাল) ঋণের তহবিল ভিন্ন খাতে স্থানান্তরের স্পষ্ট নজির রয়েছে। এক খাতের ঋণ অন্য খাতে ব্যবহারের সুযোগ নেই। কিন্তু নাসা গ্রুপ তা ভঙ্গ করে অন্য খাতে ব্যবহার করেছে।
বাই সালাম হচ্ছে একটি প্রি-শিপমেন্ট ফাইন্যান্স প্রোডাক্ট। রফতানির আগে উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু রাখার জন্য ৭ শতাংশ সুদে এ ঋণ বিতরণ করা হয়। চার শর্তে এ ধরনের ঋণ বিতরণ করা যায়। এগুলো হল- (১) মূল রফতানি চুক্তি বা ঋণপত্র (এলসি) লিয়েন রাখতে হবে। (২) মূল রফতানি চুক্তি বা ঋণপত্রের (এলসি) প্রকৃত ইউটিলাইজেশনের (ব্যবহার) ভিত্তিতে ঋণ দেয়া হবে। (৩) ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৯০ দিন, অর্থাৎ ৩ মাস এবং (৪) প্রত্যাবাসিত রফতানিমূল্য দ্বারা দায় সমন্বয় করতে হবে।
কিন্তু এই ক্ষেত্রে নাসা গ্রুপের পক্ষ থেকে কোনো রফতানি চুক্তি/ঋণপত্র লিয়েনে রাখা হয়নি। নিয়মানুযায়ী রফতানি মনিটরিংও করা হয়নি। এছাড়া ৩ মাসের পরিবর্তে ঋণের মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২ মাস। এমনকি যখনই নাসা গ্রুপের কোনো ঋণ খেলাপি হওয়ার সময় হয়েছে, তখনই বাই সালাম (স্পেশাল) সৃষ্টি করে সে ঋণকে সমন্বয় বা নিয়মিত করে দেখানো হয়েছে। ব্যাংকটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঋণগুলো বিতরণের তারিখের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, ত্রৈমাসিক শ্রেণীকরণ বিবরণী প্রস্তুতের কয়েকদিন আগে তা বিতরণ করা হয়েছে, এটিও অনিয়ম।
ব্যাংকটির এই প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রমাণস্বরূপ নাসা গ্রুপের এ সংক্রান্ত লেনদেনের ৭ পৃষ্ঠা স্ট্যাটমেন্ট সংযুক্ত করে দেয়া হয়।
যার এক স্থানে আরও বলা হয়, গ্রাহক বা প্রতিষ্ঠানটির ঋণ আবেদন এবং তা অনুমোদনের জন্য শাখার উপস্থাপিত নোটে ঋণের উদ্দেশ্য হল- রফতানির আগে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন প্রক্রিয়া চলমান রাখা, শ্রমিকের বেতন পরিশোধ এবং বিভিন্ন বিল পরিশোধ করা। কিন্তু তা না করে নাসা গ্রুপ সে ঋণ দিয়ে অন্য খাত বা প্রতিষ্ঠানের দায় পরিশোধ করেছে। অর্থাৎ নাসা গ্রুপ সজ্ঞানে ও সুস্পষ্টভাবে ঋণের তহবিল ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছে।
এছাড়া নাসা গ্রুপের চেক, পে-অর্ডার বা নগদ অর্থ উত্তোলনের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা অন্যান্য ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। এসব অর্থ কোথায় ও কী উদ্দেশ্যে গ্রহণ এবং কোন খাতে ব্যবহার করা হয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে সন্দেহ প্রকট, এক্ষেত্রেও সজ্ঞানে ও সুস্পষ্টভাবে ঋণের তহবিল ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে।
আরও অভিযোগ ও তদন্ত : নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে ইতোমধ্যে নাসা গ্রুপের ব্যাংকিং সেক্টরের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, জালিয়াতি ও অর্থ পাচার সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। কীভাবে তিনি কাদের সহায়তায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার এবং নিজের পদপদবির ক্ষমতা অপব্যবহার করে ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ পাচার করেছেন, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শুরুতে উল্লিখিত প্রতিবেদন ছাড়াও আরও কয়েকটি অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে এক্সিম ব্যাংকের গুলশান শাখার ১৯৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার ঋণ বিতরণে গুরুতর অনিয়মের বিষয়। অভিযোগ হল- নজরুল ইসলাম মজুমদারের প্রচ্ছন্ন সমর্থনে এই ঋণ যাদের দেয়া হয় তারা শিল্প খাতের নামে ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। ঘটনাটি ২০০৯ ও ২০১০ সালের।
এ বিষয়ে বিশদ একটি প্রতিবেদন অনুসন্ধান সংশ্লিষ্টদের কাছে রয়েছে। এই অনুমোদন ও বিতরণের পদে পদে বড় ধরনের অনিয়ম করা হয়। বিষয়টি একপর্যায়ে জানাজানি হলে পুরো টাকা পরিশোধ করে ঋণ হিসাবটি ক্লোজড করা হয়। এছাড়া এআরএ জুট ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেডের অপর একটি গুরুতর অভিযোগ নিয়েও পৃথক তদন্ত হচ্ছে।