DMCA.com Protection Status
title="৭

চাঁদপুর-৫ আসনে বিএনপির ৪ বারের এমপি এম এ মতিন অর্থ সংকটে জীবন মৃত্যুর সন্ধীক্ষনে।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে চার চার বার ধানের শীষের সাংসদ নির্বাচিত হয়েও আজ চরম অর্থ কষ্টে রয়েছেন একজন সৎ এবং নিবেদিতপ্রান রাজনীতিক।  চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) নির্বাচনী এলাকার বিএনপির মনোনীত সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য এম এম মতিন অর্থ সংকটে জীবন মৃত্যু সন্ধীক্ষনে।  দীর্ঘ কয়েক বছরে যাবত তিনি অর্থের কারণে উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন না। যার হাতের উপর দিয়ে বিএনপির শত শত নেতাকর্মী কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে কিন্তু তিনি আজ অর্থ সংকটে ভালো ভাবে খেতে পর্যন্ত পারেন না।


এম এ মতিন, এমপি  ১৯৪৩ সালের ১৪ ই মার্চ চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ পৌরসভার টোরাগড় গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মরহুম আলহাজ্ব খান সাহেব জুনাব আলী মুন্সী তদানীন্তন পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য এম এল এ ছিলেন। তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা আনোয়ার হোসেন মিয়া কুমিল্লা জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন।
এম এ মতিন স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর দেশের অন্যতম হাজীগঞ্জ পাইলট হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিজে কর্মজীবন শুরু করেন। দীর্ঘদিন অত্যন্ত সুনাম ও সুখ্যাতির সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব পালন করেন। পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এম এ মতিন ১৯৬৫ সালে নিজের পেশার পাশাপাশি রাজনীতি ও সমাজ সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন।

১৯৭৭ সালে স্বাধীনতার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্তৃক ঐতিহাসিক ১৯ দফা ঘোষণার পর এর স্বপক্ষে জনমত গঠন ও বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় হাজার ৯৭৮ সালের জাগোদল ও পরবর্তীকালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠিত হলে এর জন্ম লগ্ন হতেই প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি এই দলের যোগদান করেন। এবং দলের সকল কর্মকান্ডে সব সময় সক্রিয় ও প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন। এম এ মতিন তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৮৯ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারী দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তালি তিনি ২৬৪ চাঁদপুর-৫(হাজীগঞ্জ- শাহারাস্তি) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী পঞ্চম জাতীয় সংসদ, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী ৬ষ্ঠ সংসদ এবং ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিপুল সংখ্যক ভোটে সদস্য নির্বাচিত হন।

৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১ নং সাব কমিটির আহবায়ক দায়িত্ব পালনসহ মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালযয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির এবং প্রথম সংসদে সরকারি প্রতিশ্রুতি কমিটির খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।


এর আগে তিনি ১৯৭৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও  ১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত হন । এম এ মতিন নির্বাচনী এলাকায় শিক্ষা,টেলিযোগাযোগ ,পল্লী বিদ্যুৎ, বিদ্যুাতায়ন,গ্যাস সরবরাহ সড়ক ও সেতু নির্মাণ সহ অগণিত সমাজসেবামূলক কাজে অবদান রেখেন। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ প্রদানের উদ্দেশ্যে যথাক্রমে হাজীগঞ্জ ফাউন্ডেশন ও শাহরাস্তি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এম এ মতিন তার কর্ম জীবনে প্রথিবীর বহু দেশে ভ্রমণ করেছেন। ১৯৭৭ সালে তৎকালীন বৃহত্তর কুমিল্লার একমাত্র ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে দুসপ্তাহের কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেন। ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সার্ক চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অন্যতম হিসেবে মালদ্বীপ এবং স্পিকারের দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে নেপাল বহন করেন।

তিনি ৮ম জাতীয় সংসদের ৭ সদস্য বিশিষ্ট সংসদীয় প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে ২০০৩ সালে শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বোতে অনুষ্ঠিত এন্ড বাজেট শীর্ষক একটি সেমিনারে যোগদান করেন। একই বছরে তিনি ডেপুটি স্পিকারের নেতৃত্বে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত অ্যাসোসিয়েশন অব এশিয়ান পার্লামেন্টরিয়ানস ফর ফিস এর ৪র্থ জেনারেল এ্যাসেম্বলীতে যোগদান করেন শান্তি ও নিরাপত্তার অফার অনুষ্ঠিত সভায় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।

সংসদীয় গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণের আওতায় ২০০৬ সালের সমন্বয়ে গঠিত সংসদীয় প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে তিনি যুক্তরাজ্য সফর করেন। একই বছরে মরণব্যাধি এইচ আই ভি/ এইডস হতে জনগণকে রক্ষার কৌশল সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে একটি সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে চীন ভারত ও থাইল্যান্ড সফরে যান। সবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংসদীয় প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য হিসেবে তিনি পাকিস্তান সফর করেন। একই সালে তিনি র্পোট ও শীপ ইয়ার্ড ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত সফরে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী প্রতিনিধি দলের অন্যতম হিসেবে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড সফর করেন। তিনি ১০ সদস্যবিশিষ্ট সংসদীয় প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য হিসেবেই ২০০৬ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে আই পি ইউ এর ১১৪তম এ্যাসেম্বলীতে যোগদান করেন। এছাড়াও তিনি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ইউএনএফপিএ এবং বিশ্ব ব্যাংক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সংলাপে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। লায়ন্স ক্লাব অব ঢাকার গ্রীণ ক্যাপিটাল লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল ডিরেক্টর ৩১৫ এ-১ বোর্ড অফ ডিরেক্টরস ২০০৩ ২০০৪ সালের চীপ অ্যাডভাইজার মনোনীত হন। ২০০৩ সালে ইউএনএফপিএ এ বি সি ডি ও বাংলাদেশ পার্লামেন্ট আয়োজিত ওমেন শীর্ষক বৈঠকে বাংলাদেশে সংসদীয় দলের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
এ অত্যন্ত সৎ এবং বিশাল রাজনৈতিক সফলতা অর্জনকারী ব্যক্তির শেষ বেলায় আজ অর্থ সংকটের কারণে চিকিৎসা এবং জীবন ধারন অসম্ভব হয়ে পড়েছে,যেটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অসম্ভব বলেই মনে হয়।  বর্তমানে তিনি  উত্তরার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার আশু সুস্থ্যতার জন্য সকল শ্রেনী মানুষের কাছে দোয়া চেয়েছেন তার পরিবারের সদস্যগন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!