আবু সায়েমঃ নাম তার পুতুল, দেখতেও পুতুলের মতো সুন্দর। অদ্ভুত মায়াকাড়া চোখ, মিষ্টি-গোলগাল মুখ। শৈশবটা কেটেছিলো স্বপ্নের মতো, গিরি থেকে সমতল- প্রকৃতির বিচিত্র রূপসম্ভারে। পাহাড়ের নরম বুকে জন্ম বলেই হয়তো মেয়েটির মনের বিশালতা ছাড়িয়ে গিয়েছিলো আর সবার চেয়ে। চাহনিতে ব্যক্তিত্বের প্রখরতা দানা বাঁধতে শুরু করে সেই কিশোরীবেলাতেই। বান্ধবীরা যখন কানামাছি খেলায় মত্ত থাকতো, এটা-ওটা বায়না না মেটার কষ্টে মুখ গোমড়া করতো, মেয়েটি তখন অনাগত দিনের ছবি বুনে যেত মানসপটে।
বিদ্যালয়ের গণ্ডি তখনো পেরোয়নি। একদিন দিগ্বিজয়ী এক রাজকুমারের সাথে তার বিয়ে হয়ে গেলো। ঘর আলো করে এলো ফুটফুটে দুই রাজপুত্র। প্রাসাদে, দীঘির পাড়ে, বাগিচায় সুখের পায়রারা উড়তে শুরু করলো। কিন্তু সুখ যে তার সয় না। হঠাৎ খবর আসে, স্বামী তার দেশের জন্যে জীবন দিয়েছেন।
একদিন দেশ বাঁচাতে তিনিও নেমে পড়লেন রাজপথে। মিশে গেলেন মুক্তিকামী মানুষের কাতারে। এভাবেই পুতুল নামের ছোট্ট মেয়েটি হয়ে উঠলেন নিপীড়িত মানুষের মুক্তির দূত। জনতা ভালোবেসে নাম দিলো ‘আপোষহীন দেশনেত্রী’। তার হার না মানা লড়াইয়ে মুক্ত হলো দেশের মানুষ। সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে ভেসে যেতে লাগলো ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের সবুজ ভূখন্ডটি। দাসত্ব নয়, আত্মমর্যাদার বর্ণিল রংয়ে আবার রঙিন হলো একটি জাতি। সেটিই কাল হলো। শুরু হয়ে গেল ষড়যন্ত্র, গভীর চক্রান্ত। ঘষেটি বেগমরা তৎপর হলো। রাজবল্লভ, রায়দুর্লভদের মেলবন্ধনে সন্ধি পাতলো ক্লাইভদের সাথে। হীরাঝিলে হরেকরকম মানুষের আনাগোনা বেড়ে গেলো। ঘরেবাইরে, সীমান্তের এপারে-ওপারে শত্রুদের একটিই লক্ষ্য, তাকে সরাতে হবে।
দিন গড়ালো। বর্গীরা মরণথাবা বসালো। বিভীষণরা শক্ত গাঁটছড়া বাঁধলো ওদের সাথে। তার বিরুদ্ধে কতইনা নিন্দা রটলো। মিথ্যে অভিযোগে অভিযুক্ত হলেন তিনি। ভয়ংকর, একপেশে-অনৈতিক ফরমানে একদিন দন্ডিত হলেন ‘ছোট্ট’ পুতুল। তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হলো। চোখের জলে বুক ভাসালো দেশের মানুষ, অভিশম্পাত দিলো অসুরিশক্তিকে। প্রাণভয় উপেক্ষা করে যারাই তার মুক্তি চাইলো, তাদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়া হলো। আজও তিনি অন্তরীণ।
বয়েসের ভারে শরীর নুয়ে পড়েছে; কিন্তু প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দায়বোধ তাকে শির নত করতে দেয়নি। তার নাম আর ‘মুক্তি’ শব্দটি আজ সমার্থক। জনতা মায়ের আসনে ঠাঁই দিয়ে তাকে ডাকে ‘দেশমাতা’।
তিনি বন্দী। বন্দী তাই বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ। প্রিয় স্বদেশ সীমান্তের ওপারে চালান হয়ে গেছে আরও বহুদিন আগে। এখন চলছে দেশপ্রেমিকদের সবার পায়ে শিকল পরাবার আয়োজন। বর্গীদের আনাগোনা আবার বাড়ছে। ক্রীতদাসরা তাকে নিয়ে নতুন করে কটু কথা বলছে। মনে কুহু ডাকে, তার জীবন কেড়ে নিতে বুঝি তৎপর পিশাচের দল। তিনি বেঁচে থাকলে ওরা ভয় পায়। ওরা জানে, তার নিরবতাও সুপ্ত আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরিত হওয়ার পূর্বাভাস।
এ ভূখন্ডে এখন আর ফুল ফোটে না, পাখিরা ডানা মেলে উড়তে চায় না, নতুন দিনের বার্তা বিলিয়ে জগত আলো করে না প্রভাতের মিষ্টি রোদ। এখানে সবকিছু আধমরা হয়ে থমকে আছে। ফুল-পাখি-সূর্য দিন গুণছে তার মুক্তির অপেক্ষায়। তিনি মুক্ত হলেই আবার তারা হেসে উঠবে।
মহিয়সী বেগম খালেদা জিয়া, সুস্থ থাকুন, বেঁচে থাকুন, ফিরে আসুন আমাদের মাঝে মুক্ত-স্বাধীন। অপেক্ষার প্রহর যে আর কাটে না, জননী।
লেখকঃ ব্যারিস্টার আবু সায়েম,বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের উপদেষ্টা।