DMCA.com Protection Status
title="৭

মেজর হাফিজের প্রতি বিএনপির সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূঁইয়ার সবিনয় কিছু প্রশ্ন।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  সাম্প্রতিক সময়ের বহুল আলোচিত ঘটনা ,বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান,বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সাবেক মন্ত্রী মেজর(অবঃ)হাফিজউদ্দীন আহমেদ,বীর বিক্রমকে দল কর্তৃক শোকজ প্রদান করলে তিনি সংবাদ সম্বেলন করে সেই শোকজের জবাব দেন,যা প্রচুর আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি করে। বিএনপির সাবেক এমপি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জননেতা আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেজর হাফিজকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি লিখেন। প্রিয় ওয়াদুদ ভাইয়ের অনুমতি ক্রমে চিঠিটি দৈনিক প্রথম বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো।

মেজর ( অবঃ) হাফিজ ভাইয়ের কাছে আমার কিছু প্রশ্ন;

মেজর (অব) হাফিজ ভাই,

দল থেকে আপনার উপর আনিত অভিযোগের ভিত্তিতে আপনার গতকালের নাতিদীর্ঘ জবাবে আমি আপনার ছোট ভাই হিসাবে কিছু মতামত আপনার সামনে তুলে ধরতে চাই। যেহেতু আপনার সাথে মোটামুটি একটা খুব ভালো সম্পর্ক আমার ছিলো। ভারতের সাথে নদী ও পানি সমস্যা বিষয়ে আপনার সাথে আমাকে আপনি দীর্ঘ নদী পথ ভিজিটে নিয়েছিলেন। সেই সফর ছিলো অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও আমার জন্যে অভিজ্ঞতালব্ধ।

২০০৩/৪ এর দিকে ডক্টর কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকি ও চট্টগ্রামের মেয়র মহিউদ্দিন সাহেব পার্বত্য চট্টগ্রাম সম – অধিকার আন্দোলনের হরতালের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে হরতাল ভেঙ্গে, দেশ বিরোধী সন্তু লারমার কাউন্টার জনসভায় যোগদিতে যাওয়ার পথে রাঙামাটি জেলার কাউখালিতে ড. কামাল হোসেন গংদের উপর হামলা হয়। এতে তারা আহত হয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ফিরে এসে আমার বিরোদ্ধে এই হামলার এক কঠিন অভিযোগ তোলে। এবং কাদের সিদ্দিকি সাহেব সেইদিনই বিমানে এসে পার্লামেন্টর বিকালের অধিবেশনে উপস্থিত হয়ে সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে আমার বিরোদ্ধে এক নাতিদীর্ঘ বক্তব্যে, কঠিন অসত্য অভিযোগ আনে, তাদের উপর হামনার ঘটনার জন্যে। ফলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আমার নেত্রী ও সংসদ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমার উপর রাগান্বিত হয়ে আমাকে জরুরি তলব করে জানতে চায়, আমি ড. কামাল হোসেনদের উপর কেন হামলা করেছি! আমি তা সেদিন সংসদ নেত্রীকে বুঝাতে সক্ষম হই যে সেই হামলাটি আমি করানি, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম অধিকার আন্দোলনের হরতাল ভাঙাতে, উত্তেজিত জনতা ড. কামাল হোসেনের গাড়ি বহরে হামলা করে ভাঙচুর করে। এতে আমার কোন ভূমিকা ছিলোনা। যদিও রাঙামাটির ওই এলাকার তৎকালীন MP ও উপমন্ত্রী ছিলো মনিস্বপন দেওয়ান।

সেই দিন সরকার দলীয় MP র (আমার)পক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসংদে বিবৃতি দেওয়ার বিধান থাকলেও মাননীয় সংসদ নেত্রী আপনাকেই ডেকে বলেছিলেন, আমার কাছ থেকে বিষয়টা শুনে এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে তিনজনে মিলে একটি বিবৃতি প্রস্তুত করে তা আপনাকেই সংসদে তুলে ধরতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নয়, আপনিই সেদিন অত্যন্ত সুন্দরভাবে তা সংসদ অধিবেশনে তুলে ধরেছিলেন এবং সেদিন আমি বুঝতে পেরেছিলাম আপনার উপরে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কতটুকু আস্থা ও কনফিডেন্স। এসব কারণের মধ্যদিয়ে আপনার সাথে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং আপনার প্রতি আমার খুব উচ্চ ধারনার জম্ম হয়।

সেই অধিকার নিয়েই আপনার কাছে নিচে আমার সামান্য প্রশ্ন;

আপনি প্রথমেই বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়, আপনার সর্বশেষ কোন কর্মকাণ্ডের কারণে আপনাকে দল এই অভিযোগ পত্র পাঠিয়েছে।

২] তাহলো আপনি জিরো পয়েন্টে থেকে সর্বশেষ যে নাম মাত্র সরকার বিরোধী বিক্ষোভ করেছেন; তা কি দলের কোন ইউনিটের প্রোগ্রাম ছিলো! কেন্দ্রীয় কর্মসূচি? না মহানগরের কোন ইউনিট বা কোন অংগ বা সহযোগী সংগঠনের কর্মসূচি ছিলো? সেখানে আপনি কিভাবে গেলেন এবং অর্গানাইজ করলেন?

এই প্রশ্নের রিপ্লাই কিন্তু আপনি অত্যন্ত সযত্নে এড়িয়ে গেলন! অথচ আপনার জন্যে এই বিষয়টাই ছিলো মূল ফোকাস? কিন্তু আপনি এর ব্যাখ্যা দিলেন না কেন? তৃনমূল নেতাকর্মীরা তা আপনার মূখে শুনতে চেয়েছিলো।

৩] আপনি অবসর প্রাপ্ত কিছু সেনা কর্মকর্তা ও বর্তমানে অনেকটাই ২০ দলীয় জোটে নেই এমন কিছু নেতা ও কয়েজন বুদ্ধিজীবীসহ গোপন বৈঠক করেছেন, যা আপনি স্বীকার করলেও, যার সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়ার মত কোন সন্তোষজনক রিপ্লাই দিতে পারেননি, যাতে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়।

৪] আপনি বলেছেন আপনার বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার মারাত্মক অভিযোগ এনেছে। আপনি রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতায় জড়িত। এই দেশ সৃষ্টি করেছেন আপনারা। আপনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। ৫০ বছর আগে এরা কে কোথায় ছিল? মানে কি এই, এদের বয়স তো ৫০ বছর হয় নাই। এরা নোটিশ করে কিভাবে? এরাতো মুক্তিযোদ্ধা নয়, এটাইতো বুঝাতে চেয়েছেন, তাই না! আপনি কি মনে করেন এই দলের আর কারো বিরোদ্ধে রাস্ট্র বিরোধী মামালা সরকার করেনি! খবর নিয়ে দেখেন দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিব, সালাউদ্দদিন আহাম্মদ ও রিজভী আহাম্মদসহ অনেকের বিরোদ্ধে রাস্ট্র বিরোধী মামলা করেছে, শুধু আপনি নয়। এমনকি দলের মহাসচিব সহ অনেক সিনিয়র জুনিয়র নেতাকে পার্টি অফিসের ও মহাসচিবের কক্ষের দরজা ভেঙ্গে টেনে হেছড়ে লাইন ধরে তুলে নিয়ে গেছে। কতবার পুলিশ গভীর রাতে অফিসের দরজা ভেঙে বা মই দিয়ে অফিসে ডুকে রিজভী আহাম্মদকে তুলে নিয়ে গেছে, সালাউদ্দিন আহাম্মদকে তো জীবন ভিক্ষা দিয়ে ভারতে নিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী প্রমান করার জন্যে শিলং রেখে আসছে। এখন তিনি জীবন মৃত্যুর সাথে লড়ে যাচ্ছেন। আপনারতো উল্লেখিতদের মতও কিছু হয়নি। যাই হোক এ ধরনের মারাত্মক মামলায় বিএনপি'র কোন নেতাকে এখনো দেয়া হয়নি। আপনার এই কথাটি সঠিক নয়।

হ্যাঁ আপনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এইটা কেউ ভুলতে পারবে না। সেই জন্যে আপনি আমাদের কাছে সম্মানীয় বিশিষ্ট জন। কিন্তু এই দলে মুক্তিযোদ্ধা আপনি কি একাই যে, আপনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, এই দল মুক্তিযোদ্ধাদের অপদস্থ ও অবমূল্যায়ন করছে।

আপনি নিশ্চয় ভুলেন নাই, এই দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়া স্বয়ং মুক্তিযুদ্ধের মহা নায়ক এবং এই দলের প্রত্যেকটি মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আর মুক্তিযোদ্ধা হলেই কি দলের শিষ্টাচার ভঙ্গ করা সহ দল বিরোধী কর্মকাণ্ড করার অধিকার প্রাপ্ত! বা জায়েজ?

আপনি নিশ্চয় খেয়াল করেছেন, আপনার সংবাদ সম্মেলনের পর পরই আপনার বক্তব্যের সাথে সুর মিলিয়ে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের ও তথ্য মন্ত্রী হাসান মাহমুদ আপনার পক্ষ নিয়ে বিএনপিকে কটাক্ষ করেছে। নিশ্চয় এটা একটা বিশেষ ঘটনার পূর্বা আলামত এবং সেদিনের জিরো মাইল থেকে পুরানা পল্টন পর্যন্ত বিএনপির অগোচরে বিএনপির নামে করা কর্মসূচির সাথে সরকার বা এমন কারো সম্পৃক্ততা রয়েছে। যার লক্ষ হলো বিএনপির বর্তমান শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে মাইনাস করা, যা ওয়ান ইলেভেনেও অনেকে করতে চেয়েছিলো।

যারা আপনাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেছে তাদের এখনও ৫০ বছর হয়নি, হয়নি বলে আপনি বার বার কি বুঝাতে চেয়েছেন যে, তারা মুক্তিযোদ্ধা নয় এবং তারা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী? তাই তাদের বয়সের প্রশ্ন তুলেছেন! এবং তারা আপনাকে নোটিশ করার ক্ষমতা রাখেনা।

বয়স কম বেশি যাই হোক না কেন, নোটিশ করার বিষয়টি একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া এবং দায়িত্বপ্রাপ্তরাই নোটিশ করবে, এটাই বিধান। এক্ষেত্রে বয়সের প্রসঙ্গটি অপ্রাসঙ্গিক। এই বিষয়টি আপনার মত একজন অভিজ্ঞ নেতা ও সাবেক মন্ত্রীর জানারই কথা।

৫] মেজর হাফিজ ভাই, জুনিয়ররা এমন মারাত্মক মামলা প্রায়শ খাচ্ছে, গুম হয়েছে, খুন হয়েছে সে কথা তো একবার উচ্চারণও করলেন-না। জুনিয়ররা ওমন মারাত্মক মামলায় জর্জরিত হয়েও, তারাই হুমকির মুখে কাজ করছে৷ আপোষ করছে না। আপনি কিন্তু ইতিমধ্যে একবার আপোষ করেছেন। হোক সে চাপ বা লোভের মুখে।

আপনি নিশ্চয় ভুলেননি প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আপনাকে কতটা বিশ্বাস ও মূল্যায়ন করতো; যার ফলে নেত্রী ২০০১ সালের সরকারের সময় বলা যায় আপনাকে প্রায় ৩ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন! ১. বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের দারিত্ব, ২. পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ও ৩. প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দেখাশুনার ভার দিয়েছিলেন। আর আপনি কিনা সেই নেত্রীকে কারাগারে রেখে, আমাদেরকে কারাগারে রেখে, হাজার হাজার নেতাকর্মীদের পলাতক অবস্থায় রেখে 1/11 র প্রণেতাদের পরামর্শে বা আতাতে বিএনপির বিদ্রোহী কমিটির মহাসচিবের পদে অলংকৃত হয়েছিলেন। আপনি বলছেন, আপনাকে আপনার অনুপস্থিতিতে বিদ্রোহী বিএনপির মহাসচিব করা হয়েছে। আবার আপনি এও বলেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফাউন্ডার সদস্য হওয়ায় আপনাকে তৎকালীন ও বর্তমান সেনাবাহিনী সম্মান করে। আপনার এই কথায় এটাই প্রমাণ করে আপনি সে সময় জেনারেল মঈন উদ্দিন – মাসুদ উদ্দিনের কথায় একমত ছিলেন! তা নাহলে কই আপনিতো সেদিন নেত্রীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে, সেই মহাসচিব পদ ছেড়ে দিলেন না! বরং আপনি সেই দিন 1/11 তে সক্রিয়ভাবে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের পরামর্শে সেই মহাসচিব দায়িত্ব মহানন্দে গ্রহণ করেছিলেন। শুধু তাই নয়, সেই সময় আপনি ঢাকা মহানগরের কতিপয় নেতাকে নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসের তালা ভেঙ্গে অফিস দখল করেছিলেন!

আর আপনি গতকাল এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে অনেকটা হাবিজাবি ও জোড়াতালি একটা গল্প গেয়ে দেশবাসীকে বুঝিয়ে দিলেন। আপনি কি মনে করেন, দেশবাসী ও তৃনমূল নেতাকর্মীরা আপনার সেই অতি গল্প মেনে নেবে? না নেবে না।

সাবেক যোদ্ধা হিসাবে আপনার জানার কথা ওয়ান্স বিট্রেয়ার ইজ অল ওয়েজ বিট্রেয়ার। বিট্রের কোন ক্ষমা নেই। অনেকের মত আপনাকে ক্ষমা করে তার ফল দলতো আজও পাচ্ছে। আপনারা বার বার তার প্রমান দিচ্ছেন।

৬] আপনার সংবাদ সম্মেলনে আপনি বার বার আক্রোশ প্রকাশ করেছেন দলের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহম্মদের উপর! কেন তিনি আপনাকে এমন করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলো! আপনি অনেক বারের MP ও মন্ত্রী ছিলেন, আপনার হাতে অধিকতর নির্বাহী দায়িত্বও ছিলো, সেই অভিজ্ঞতা থেকেও আপনার জানার কথা, এই নোটিশ রিজভী সাহেব নিজের ক্ষমতা বলে আপনাকে লেখেন নাই। তিনি হাই কমান্ড থেকে আদিষ্ট হয়েই এই নোটিশ আপনাকে পাঠিয়েছেন। তিনি নিশ্চয় জানেন তিনি তার নিজের থেকে আপনাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে পারেন না এবং দিবেন না। তা আপনি কেন জানলেননা এবং উল্টা বার বার তাকেই দোষারোপ করলেন? আপনার এটুকু জানার ও বুঝার ক্ষমতা আছে বলে আমরা বিশ্বাস করি।তাহলে আপনি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে রিজভী আহাম্মদকে বার বার দোষী করে পক্ষান্তরে তাকে হেয় করেছেন এবং বিশেষ মহলের কাছে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন!

আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া,খাগড়াছড়ি হতে বিএনপির ২বারের নির্বাচিত সাংসদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!