ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নজীরবিহীন ভোটডাকাতি এবং সরকারী দলের সন্ত্রাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে আগামী পাঁচ বছরের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৮৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন মাত্র ৫২ হাজার ৪২৯ ভোট। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী নির্বাচন ভোট পড়েছে মাত্র ২২ শতাংশ। তবে ওয়াকিবহাল সূত্রে জানা যায় প্রকৃত ভোট পড়েছে আরও অনেক কম।
যদিও এই নির্বাচন নিয়ে বিএনপি সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো ভোটডাকাতি এবং প্রশাসনের যোগসাজসের গুরুতর অভিযোগ করে এর ফলাফল প্রত্যাখান করেছে।
বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন।
ফলাফল ঘোষণা শেষে হাসানুজ্জামান বলেন, বেসরকারি ভাবে নৌকা প্রতীকের রেজাউল করিম চৌধুরী জয়যুক্ত হয়েছেন। মোট ৭৩৫ কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩৩টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি দুটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করায় ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪৯০টি। বাতিল হয়েছে ১ হাজার ৫৩টি।
মেয়র পদ থাকা অন্য প্রার্থীদের মধ্যে মোমবাতি প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন পেয়েছেন ২ হাজার ১২৬ ভোট, আম প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আবুল মনজুর পেয়েছেন ৪ হাজার ৬৫৩ ভোট, হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৮০ভোট, চেয়ার প্রতীক নিয়ে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ পেয়েছেন ১ হাজার ১০৯ ভোট ও হাতি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে খোকন চৌধুরী পেয়েছেন ৮৮৫ ভোট।
এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন এবং নারী ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন।
ভোট গ্রহণকালে মাঠে ছিলেন ২০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৬৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ১৮ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও ছিলেন চসিক নির্বাচনে। এরমধ্যে ৭ হাজার ৭৭২ জন্য পুলিশ সদস্য, ২৫ প্লাটুন বিজিবি র্যােবের ৪১টি টিম, পুলিশের রিজার্ভ টিম ও ৩ হাজার ৮০০ আনসার সদস্য। নির্বাচনে ৭৩৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৪১৬টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ ও ৩১৯টি কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল নির্বাচন কমিশন। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ১৮ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে ১৬ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছিলেন।
এবারের নির্বাচনে ২টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হয়নি। এরমধ্যে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যুতে ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন স্থগিত করে নতুন তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এ ওয়ার্ডে ভোট হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। এ ছাড়া ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মো. হারুনুর রশিদ।
এর আগে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীন পেয়েছিলেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মেয়র এম মনজুর পান ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৩৭ ভোট।
চসিকের পঞ্চম নির্বাচিত পরিষদের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদ গত ৫ আগস্ট শেষ হলেও বৈশ্বিক মহামারি করোনা, বর্ষায় চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা, পাহাড়ধসের আশঙ্কায় নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন না হওয়ায় খোরশেদ আলম সুজনকে ৬ মাসের জন্য চসিকের প্রশাসককে হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। গত ৬ আগস্ট চসিক প্রশাসকের চেয়ারে বসেন তিনি।