DMCA.com Protection Status
title="৭

মিথ্যা মামলায় কারাবন্দীত্বের ৩বছরঃএখন কেমন আছেন খালেদা জিয়া?

 

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  কথিত দুর্নীতির মিথ্যা মামলায় দুই বছরের বেশি সময় কারাভোগের পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ শর্তসাপেক্ষে সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসনদেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সেপ্টেম্বরে এর মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও ছয় মাস। মুক্তির পর থেকে গত ১১ মাস ধরে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজায়’ আছেন তিনি।

দীর্ঘ এ সময় মুক্তির শর্ত অনুযায়ী সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন খালেদা জিয়া। ফলে অসুস্থ সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দেশে অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজন আর লন্ডনে বসবাসরত ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও নাতনিদের সঙ্গে কথা বলে সময় পার করছেন।

খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ফজরের নামাজ আদায় করে আবার ঘুমিয়ে পড়েন খালেদা। ঘুম থেকে যখনই ওঠেন, দিনের শুরু হয় পত্রিকার পাতায় চোখ রেখে। এরপর সারেন সকালের নাস্তা। অল্পকিছুক্ষণের জন্য দেখেন টেলিভিশন। তারপর গোসল এবং জোহরের নামাজ শেষে দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন। আছরের নামাজ শেষে দেখা করতে আসা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেই দিনের বাকি সময় কাটে। রাতে খাওয়া শেষ করে বাংলাদেশ ও লন্ডনের সময় মিলিয়ে মোবাইলে ছেলে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ও মেয়ে এবং প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও তার দুই মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘসময় কথা বলেন। তাদের সঙ্গে কথা শেষ করে ঘুমিয়ে পড়েন।

ফজরের নামাজ আদায় করে আবার ঘুমিয়ে পড়েন খালেদা। ঘুম থেকে যখনই ওঠেন, দিনের শুরু হয় পত্রিকার পাতায় চোখ রেখে। এরপর সারেন সকালের নাস্তা। অল্পকিছুক্ষণের জন্য দেখেন টেলিভিশন। তারপর গোসল এবং জোহরের নামাজ শেষে দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন। আছরের নামাজ শেষে দেখা করতে আসা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেই দিনের বাকি সময় কাটে। রাতে খাওয়া শেষ করে বাংলাদেশ ও লন্ডনের সময় মিলিয়ে মোবাইলে ছেলে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ও মেয়ে এবং প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও তার দুই মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘসময় কথা বলেন। তাদের সঙ্গে কথা শেষ করে ঘুমিয়ে পড়েন।

সূত্র আরও জানায়, প্রতিদিন নিয়ম করে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে আসেন পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্যে বোন সেলিমা ইসলাম এবং ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা নিয়মিত দেখা করেন। তারা খাবার রান্না করে আনেন। সাধারণত তারা আসেন দুপুরের পর। ভাই শামীম এস্কান্দার, ভাতিজা শাফিন এস্কান্দার, তার স্ত্রী অরনী এস্কান্দার, ভাতিজা অভিক এস্কান্দার, তারেক রহমানের শাশুড়ি ও তার স্ত্রীর বড় বোনও স্বল্পবিরতিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এছাড়া ব্যক্তিগত চিকিৎসা বোর্ডের সদস্যরা নিয়মিত তাকে দেখাশোনা করেন।

তবে অসুস্থ খালেদা জিয়ার পাশে সারাদিনের জন্য আছেন গৃহকর্মী ফাতেমা। তিনি সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে গোসল করা থেকে শুরু করে সব কাজে সহায়তা করেন।

এসব বিষয়ে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম জানান, তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক গৃহকর্মী ফাতেমা থাকেন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তিনি এবং তার ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা বেশি দেখা করতে যান। এছাড়া ভাই, ভাতিজা ও ভাগ্নেসহ পরিবারের আরও অনেক সদস্য দেখা করেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে।

নিজের অসুস্থতার কারণে গত কয়েকদিন খালেদা জিয়াকে দেখতে যেতে পারেননি  জানিয়ে খালেদা জিয়ার বোন বলেন, ‘তার চিকিৎসা চলে বড় ছেলের স্ত্রীর (জোবাইদা রহমান) তত্ত্বাবধানে। আর দেশের ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাকে গিয়ে দেখে আসেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়া) বাড়িতে রান্না হয়। আমরাও খাবার বাসা থেকে নিয়ে যাই। অসুস্থ বিধায় খুব একটা খেতে পারেন না। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করেন।’

গত দুই মাসে বিএনপির কোনো নেতা তার (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। বিএনপির রাজনীতি যেহেতু এখন তারেক রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত, ফলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে নেতাদের সাক্ষাৎ না হলেও রাজনৈতিক কোনো সিদ্ধান্ত থেমে থাকছে না

খালেদা জিয়া ছেলে-নাতনিদের সঙ্গে কথা বলেন কিনা জবাবে সেলিমা রহমান বলেন, ‘টেলিফোনে নিয়মিত দুই ছেলের স্ত্রী ও নাতনিদের সঙ্গে কথা বলেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘নামাজ পড়া ছাড়া খালেদা জিয়ার দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে পত্রিকা-বই পড়ে এবং টেলিভিশন দেখে। রাতের বেলা ছেলে, তাদের বউ ও নাতনিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। এর বাইরে তারেক রহমানের শ্বশুর বাড়ির লোকজনও মাঝেমধ্যে দেখা করতে আসেন। তবে গত দুই মাসে বিএনপি নেতাদের কেউ তার সাক্ষাৎ পাননি।’

‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুব বেশি উন্নত হয়নি’ দাবি করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার মেডিকেল বোর্ডের এক চিকিৎসক বলেন, ‘এখন তাকে গৃহকর্মী ফাতেমার সাহায্য নিয়ে দাঁড়াতে হয়। চিকিৎসকরা তো কেউ তার সঙ্গে থাকেন না। ফলে ফাতেমা ও পরিবারের সদস্যদের দেখভালের মধ্য দিয়ে জীবন পার করছেন তিনি।’

এ চিকিৎসক আরও বলেন, ‘তবে মোটামুটি তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে। কারাগারে থাকার সময় যে হাতটি বাঁকা হয়ে গিয়েছিল, সেটিও এখন মোটামুটি ভালো।’

বিএনপি নেতারা বলছেন, গত বছরের ২৫ মার্চ মুক্তি পাওয়ার পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির নেতাদের দুই দফায় সাক্ষাৎ হয়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কয়েকবার দেখা করেন।

তারা জানান, তবে গত দুই মাসে বিএনপির কোনো নেতা তার (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। বিএনপির রাজনীতি যেহেতু এখন তারেক রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত, ফলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে নেতাদের সাক্ষাৎ না হলেও রাজনৈতিক কোনো সিদ্ধান্ত থেমে থাকছে না। এছাড়া এমন কোনো বিষয় যদি থাকে যেটাতে পরামর্শ একান্ত প্রয়োজন, তখন পারিবারিক পন্থায় সেটা নেওয়ার সুযোগ তো রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, ‘সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন নিয়মিত খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে অবস্থান করেন। তার সঙ্গে কে দেখা করতে যাচ্ছে, কে বের হচ্ছে— সব খবর মিনিটে মিনিটে সরকার ওপরের মহলে চলে যাচ্ছে। তাই চাইলেও আমরা তার সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারি না।’

এই নেতা আরও বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে কোনো বিষয়ে খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হলে পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে জানতে চাওয়া হয়। আর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তো তার নিয়মিত টেলিফোনে কথা হয়। ফলে দল পরিচালনার ক্ষেত্রে তার কোনো পরামর্শ দরকার হলে মা-ছেলে টেলিফোনেই সেটা সেরে নিতে পারছেন।’

যে কয়টি শর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এর মধ্য একটি হলো- বিদেশ গমন। মুক্তির এ সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বিদেশ গমন করতে পারবেন না। তবে নেত্রীর সুচিকিৎসায় সরকারের এ শর্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

গতকাল সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানি, খালেদা জিয়া দারুণভাবে অসুস্থ। তার সুচিকিৎসা প্রয়োজন, যা এখানে সম্ভব নয়। প্রয়োজনে সুচিকিৎসার জন্য তার বাইরে যাওয়ার হয়তো দরকার হবে। এ বিষয়ে সরকারের যে নিষেধাজ্ঞা সেটা প্রত্যাহার করা হোক।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মিথ্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া। গত বছর ২৫ মার্চ ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে ২৫ মাস কারাভোগের পর শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি দেয় সরকার। এরপর দ্বিতীয় দফায় ফের ছয় মাস সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সেই মেয়াদ আগামী ২৫ মার্চ শেষ হচ্ছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!