ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ যারা আওয়ামী লীগ করে তারা মুসলমান নয়— সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া নিজের এমন বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
রোববার রাতে ফেসবুক লাইভে এসে তিনি ক্ষমা চান। এর আগে রাতে শাহবাগ থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে লাইভে এসে তিনি তার এ প্রতিক্রিয়া জানান।
নুর বলেন, স্বাভাবিকভাবেই অল্প বয়সে একটা গুরুদায়িত্ব নিয়ে ফেলেছি আমরা। বিভিন্ন ধরনের মানুষ, পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে একটা বোঝাপড়ার মাধ্যমে আমাদের একটা রাজনৈতিক পরিস্থিতি ডেভেলপ করেছে। যে কারণে আমরা কথা বলার ক্ষেত্রে, কাজ করার ক্ষেত্রে সিনিয়রদের কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করেছি। তারা যখন যেসব বিষয়ে আমাদের উপদেশ দেন, আমরা সেসব বিষয় মেনে চলি। বিশেষ করে আমি যাদের সঙ্গে মিশি, তারা আমাকে বলেন— তোমার কথাবার্তা যেন শুধু ইসলামকেন্দ্রিক না হয়, সব ধর্মের মতাদর্শের মানুষের সহনশীলতার কথা থাকে, সম্প্রীতির কথা থাকে এবং তোমার কথায় যেন সহিংসতার ঘটনা না থাকে। আমি চেষ্টা করি কথাগুলো মেনে চলার এবং আমার কাজের ক্ষেত্রে প্রতিফলন ঘটানোর। বিভিন্ন সময় আমার ফেসবুক পোস্ট লাইভ কেন্দ্র করে মানুষ যেগুলো পরামর্শ দিয়েছে, আমি সেগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করেছি। কারণ আমি মনে করি, আমি একজন নবীন সহযোদ্ধা, নবীন রাজনৈতিক নেতা, একজন নবীন কর্মী। বিভিন্ন সময় ভিন্নমতের মানুষের কারণে আমি আমার ফেসবুক পোস্ট লাইভ ডিলিট করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, গত ১৬ মার্চ একটা লাইভ করেছি আমি। স্বাভাবিকভাবে একটা দেশের রাজনৈতিক নেতা হিসেবে, একটি নেতৃস্থানীয় জায়গা থেকে আমার কাজ অবশ্যই মানুষের সমস্যাকে অ্যাড্রেস করা। সেখানে আমি লাইভে বিভিন্ন কথাবার্তা বলেছি। কথাবার্তার বিভিন্ন জায়গায় আমি যৌক্তিকভাবে কিছু বিষয় তুলে ধরেছি।
তিনি আরও বলেন, কিছু ঘটনা ব্যাখ্যা করার জন্য আমি আমার স্বাভাবিক জায়গা থেকে রাগ, ক্ষোভ, আবেগ ও অনুভূতির জায়গা থেকে কিছু কথা বলেছিলাম। আমি মনে করি, অবশ্যই আওয়ামী লীগে অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ আছেন, ধর্মপ্রাণ মুসলমান আছেন, সব ধর্মেরই লোক আছেন এবং সব দলেই সব ধর্মেরই ধর্মপ্রাণ লোক আছেন। আমি আওয়ামী লীগ সমর্থককে কিংবা আওয়ামী লীগকে আক্রমণ করে কোনো কথা বলিনি।
নুর বলেন, আমি সানন্দে অনেকের পরামর্শ নিয়ে থাকি। কেউ কেউ আমাকে বলেছিলেন— গত ১৬ মার্চের লাইভে যা বলেছি, একজন নেতৃত্বশীল জায়গা থেকে আমাকে একটু সহনশীল হতে হবে। এমনকি শত্রুপক্ষকে আক্রমণ করে কোনো কথা বলা আমার জায়গা থেকে কাম্য নয়। কিছু কিছু কথা সাধারণ মানুষ তার জায়গা থেকে বলতে পারে, আমি আমার জায়গা থেকে বলতে পারি না। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগে আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছেন। ডাকসু নির্বাচনের সময় আমাকে ছাত্রলীগের অনেকেই ভোট দিয়েছেন। সুতরাং সেই জায়গা থেকে আমি এমন কিছু বলব না, যাতে তারা ক্ষুব্ধ হয় কিংবা আমার প্রতি বিরাগভাজন হয়।
নুর আরও জানান, ১৭ তারিখের একটি লাইভে আমি স্বভাবতই বলেছি— আমার ১৬ তারিখের কথায় দুঃখ পেয়ে থাকলে, কেউ যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন- তা হলে আমি তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমি ক্ষমাপ্রার্থী, স্বাভাবিকভাবে আমার যদি ভুল হয়, আমার জায়গা থেকে ১০০ বার ক্ষমাপ্রার্থী থাকব। আমি বিনয়ের সঙ্গে সেটির জন্য ক্ষমা চাইব। কারণ আমার ভুল হতেই পারে, আমি মানুষ— ফেরেশতা না। আমার ভুল হলে তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী, আমি ক্ষমা চাই। লাইভের কারণে যে কোনো ভাই-বন্ধু, সহযোদ্ধা ও শুভাকাঙ্ক্ষী আমার জন্য যদি মনে কষ্ট পেয়ে থাকেন, তা হলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
নুর বলেন, আমি একজন তরুণ ছাত্রনেতা হিসেবে প্রতিবার যেখানে মানুষ চুপ করে আছে, সেখানে কথা বলে যাচ্ছি। সেখানে অবশ্যই আমাদের কাজগুলোকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সে ক্ষেত্রে আমি আমার যে কোনো আচরণের জন্য, সেদিনের জন্য কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন, আমি নিজে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মামলা করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করা আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার লাইভে আসা।
মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ওই বক্তব্যকে পুঁজি করে হয়রানি করার জন্য মামলা করা পুরোপুরি একটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্র শুধু আমার বিরুদ্ধে নয়, এ দেশের গণতন্ত্রের জন্য যারা লড়াই-সংগ্রাম করছেন, তাদের বিরুদ্ধেও হচ্ছে।