দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে দলীয় চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি প্রদান সহ তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করা হয়েছে।
একইসাথে অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক আগমন উপলক্ষ্যে আয়োজিত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে এনসিএন টিভির পরিচালক সাংবাদিক জনাব ফরিদ আলমের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দাও জানান হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের এ সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বাদল সূচনা বক্তব্য রাখেন।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।
যুক্তরাষ্ট্র জাতীয়তাবাদী ফোরাম নেতা সারওয়ার খান বাবুর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন ফোরাম নেতা রাফেল তালুকদার, এ কে এম রফিকুল ইসলাম ডালিম, বিএনপি নেতা ইমরান শাহ্ রন, আশরাফ উদ্দিন ঠাকুর, শাওন বাবলা, দেলোয়ার হোসেন শিপন, শিল্পী আক্তার, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. নাজমুল হাসান, মো. কবীর, জালাল আহমেদ, কামাল হোসেন, শামীম আহমেদ, মো. আব্দুল সালিক জাকির, রাউফুল ইসলাম লিটন, মো. মর্তজা, এস এম শফি প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা আকতার হোসেন বাদল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সকল মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের লক্ষে হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলন গড়ে তুলতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও বাস্তবে বাকশালী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে তারা। বাংলাদেশের সকল স্বৈরাচারী কর্মকান্ড আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরতে জাতিসংঘ, হোয়াইট হাউজ, স্টেট ডিপার্টমেন্টে লবিং জোরদার করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ আজ স্মরণকালের ভয়াবহ সংকটকাল অতিক্রম করছে। দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গণে বিরাজ করছে অস্থিরতা। গণতন্ত্রহীনতা, দুঃশাসন, সামাজিক ন্যায় বিচারের অভাবের পাশাপাশি ভূলুন্ঠিত মানবাধিকার। বাক-ব্যক্তি ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করে মানুষের টুটি চেপে ধরেছে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার। মেগা উন্নয়নের নামে মেগা দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ভেঙ্গে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। গুম, খুন, অপহরণ, রাহাজানির নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও সরকারের আইন শৃংখলা রক্ষাবাহিনী। জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে দেশবাসী। সরকার পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। ব্যাংক, বীমা, অর্থ লগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানে সরকারী মদদে চলছে অবাধ লুন্ঠন। সরকারের দুর্নীতির কারণে মুখ থুবরে পড়েছে মহামারি করোনা নিয়ন্ত্রণ। মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সম্পূর্ণভাবে একটি অনির্বাচিত অবৈধ সরকার। এক শ্রেণীর আমলা ও রাষ্ট্রের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় কাজে ব্যবহার করে বাকশালী কায়দায় দেশ শাসন করছে আওয়ামী লীগ। প্রকাশ্য ভোটে জনগণের রায়ে নয়, রাতের অন্ধকারে ভোট জালিয়াতি করে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন শেখ হাসিনা। নির্যাতন নিপীড়ন, জেল জুলুম ও মামলা-হামলার মাধ্যমে বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার ভয়ঙ্কর খেলায় মেতে উঠেছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন, বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাবন্দী করে রেখেছে সরকার। এমনকি তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতিও দেয়া হচ্ছে না। অপরদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হচ্ছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলতে সরকার বিকৃত করছে ইতিহাস। বিএনপির লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ঘরছাড়া করা হয়েছে। এই সরকারের আমলে গুম-খুনের শিকার হয়েছে অনেক নেতা-কর্মী। বিএনপি সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে মাঠে নামতে দিচ্ছে না সরকার। প্রতিহিংসা পরায়ন হাসিনা সরকারের সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের মাটিও করেছে কলঙ্কিত। নিউইয়র্কেও তারা য্ক্তুরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের উপর হামলা চালিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনার সরকার নজিরবিহিন নৈরাজ্য কায়েম করেছে বাংলাদেশে। সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন থাকার সাংবিধানিক ও নৈতিক কোন অধিকার নেই শেখ হাসিনার। তারপরও তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক এসেছেন। করোনা মহামারিকালেও এবার শতাধিক সফর সঙ্গী নিয়ে নিউইয়র্ক এসেছেন তিনি। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ বিমানের একটি অত্যাধুনিক বিশালকায় বিমানে করে তিনি এসেছেন। এজন্য রাষ্ট্রকে গুনতে হবে শতকোটি টাকা। স্বৈরাচারী হাসিনার কোন নৈতিক অধিকার নেই জাতিসংঘে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করার। বিলাস ভ্রমণে রাষ্ট্রিয় অর্থ অপচয় সহ তার অবৈধ কর্মকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চাই প্রবাসে। যুক্তরাষ্ট্্েরর মাটিতে স্বৈরাচারী হাসিনাকে রুখে দিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে নবান্ন পার্টি হলের সামনে যেখানেই হাসিনা সেখানেই প্রতিরোধ। স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক ইত্যাদি শ্লোগানে বিক্ষোভ করে বিএনপি নেতা-কর্মীরা।