ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ শেষ পর্যন্ত ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের উদ্যোগে ড. রেজা কিবরিয়াই হচ্ছেন তৃতীয় ধারার নতুন আরেকটি দলের প্রধান। ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক ওই দলের উদ্যোক্তাদের অন্যতম একজন।
আহ্বায়ক কমিটি হলে রেজা কিবরিয়া আহ্বায়ক এবং নুরুল হক সদস্যসচিব হবেন – এটি মোটামুটি নিশ্চিত বলে জানা গেছে। আবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে ড. রেজা সভাপতি ও নুরুল হক হবেন সাধারণ সম্পাদক।
সূত্র জানায়, নুরুল হকসহ আরো কয়েকজনের উদ্যোগে নতুন দল এ মাসের মধ্যেই ঘোষণার কথা থাকলেও কিছুটা পিছিয়ে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে যেতে পারে। ‘জনতার অধিকার আমাদের অধিকার’—এই স্লোগান নিয়ে এই দলের নাম হবে ‘বাংলাদেশ অধিকার পার্টি (বিআরপি)।’ যদিও ‘গণ-অধিকার পরিষদ’ নামের আরেকটি প্রস্তাবও আলোচনায় আছে। কিন্তু বিআরপি নামটিই শেষ পর্যন্ত গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানা গেছে। আপাতত ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি হচ্ছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ নেতার সংখ্যা বেশি হলে একটা উপদেষ্টা কমিটিও গঠন করা হতে পারে।
নতুন দলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে আরো যাঁরা থাকছেন তাঁরা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গির, অধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। এ ছাড়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী পরামর্শক বা উপদেষ্টা হিসেবে থাকতে পারেন। সামাজিক সংগঠন রাষ্ট্রচিন্তার হাবিবুর রহমান ও হাসিবুর রহমান থাকছেন নতুন দলে। অবশ্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী জানিয়েছেন, তাঁর বয়স হয়ে গেছে। নতুন দলে তাঁর থাকার আগ্রহ কম।
সূত্র জানায়, এসব নেতার বাইরে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন দলের নুরুল হকের সঙ্গে জোট করার কথা থাকলেও আপাতত তিনি পিছিয়ে গেছেন। সূত্রের দাবি, গত মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে হেফাজতের আন্দোলনের পক্ষে নূরের অবস্থান নেওয়ার ঘটনাকে সাকি সমর্থন করেননি। তরুণ এই বামপন্থী সংগঠক মনে করেন, হেফাজতের পক্ষে অবস্থার নেওয়ার অর্থ ডানপন্থাকে সমর্থন করা।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্রচিন্তা, ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ এবং ভাসানী অনুসারী পরিষদ—এই চার সংগঠন মিলে নতুন একটি জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু নতুন দলে এখন তিন সংগঠন শামিল হলেও থাকছে না জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলন।
জানতে চাইলে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘তারা নতুন দল গড়ে তুললে আমাদের সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা অব্যাহত থাকবে। ওই আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে আমরা ভবিষ্যতে কোথায় যাব।’
সূত্র মতে, আলোচিত এসব নেতার বাইরেও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে নুরুল হকের দল। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো কালের কণ্ঠকে জানিয়েছে, সাবেক একজন সেনাপ্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন প্রবীণ অধ্যাপক, বিএনপির উপদেষ্টামণ্ডলীর একজন সদস্য ও নির্বাহী কমিটির এক সদস্য এবং একজন আইনজীবী নেতার সঙ্গেও আলোচনা চলছে সম্ভাব্য ওই দলের। তবে কৌশলগত কারণে এখনই ওই সব নেতা ও ব্যক্তি সামনে আসছেন না। বিশেষ কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে তাঁরা সামনে আসবেন।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় ধরনের শোডাউন করে নতুন দলের ঘোষণা দেওয়ার আগ্রহ রয়েছে উদ্যোক্তাদের। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকায় অনুমোদন পাওয়া সহজ নাও হতে পারে বলে উদ্যোক্তারা মনে করেন। পরিস্থিতি এমন হলে প্রেস ক্লাব বা অন্য কোনো ‘ইনডোরে’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দল ঘোষণা করা হবে। বর্তমানে নতুন দলের কমিটি গঠনসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চলছে। কয়েক মাস ধরে আগ্রহী নেতা ও শুভান্যুধায়ীদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে দলটির নেতৃত্বের কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। জানা গেছে, এসব আলোচনায়ই প্রধান হিসেবে ড. রেজা কিবরিয়ার নাম উঠে এসেছে।
অক্সফোর্ডে ডক্টরেট করা রেজা কিবরিয়া ২০১৮ সালে আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ চাকরি ছেড়ে ওয়াশিংটন থেকে দেশে ফেরেন। তাঁর মূল পরিচয় অর্থনীতিবিদ হলেও নির্বাচনের আগের ওই সময়টাতে তিনি গণফোরামে যোগদান করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে আলোচনায় আসেন। পরে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি গণফোরাম থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর কয়েক মাস ধরে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অংশগ্রহণে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি এবি পার্টি ও নুরুল হকদের ছাত্র অধিকার পরিষদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাঁকে সক্রিয় দেখা যায়।
জানতে চাইলে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমি তাঁদের সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ তাঁদের চিন্তা বেশ পজিটিভ। কিন্তু পদ কী হবে সেটি এখনো ঠিক হয়নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘যোগদানের পর পদ কী হবে সে সিদ্ধান্ত নতুন দলই নেবে।’
নতুন দলের অন্যতম উদ্যোক্তা নুরুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সিনিয়র কয়েকজনের নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান করা হবে।’ ড. রেজা কিবরিয়াকে প্রধান করার সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ‘রেজা কিবরিয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তি রাজনীতিতে আসছেন এটি রাজনীতির জন্য ভালো দিক। কারণ শিক্ষিত ও সজ্জন মানুষ হিসেবে সমাজে তাঁর অবস্থান বেশ উঁচুতে। তাই নতুন দলে তিনি যাতে সম্মানের সঙ্গে কাজ করতে পারেন সেটি নিশ্চিত করা হবে।