ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার চক্রান্তের অংশ হিসেবে বিএনপি নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপকে বানচাল করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মিডনাইট হাসিনা সরকারের অন্যতম সহযোগী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এর একাংশের সভাপতি এবং অবৈধ সাংসদ হাসানুল হক ইনু।
নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে বুধবার (২২ ডিসেম্বর) বিকালে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাসানুল হক ইনু এ অভিযোগ করেন। এর আগে বিকাল চারটা থেকে এক ঘণ্টার বেশি সময় তারা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করেন।
সংলাপের পর বিএনপির সংলাপে যোগ দেওয়া না দেওয়া ইস্যুতে হাসানুল হক ইনুর কাছে প্রশ্ন রাখা হয়— অনেকে বলছেন, বিএনপি যেহেতু এই সংলাপে অংশ নিচ্ছে না, তাই এটা বিফল হবে। সংলাপটি শুধু আনুষ্ঠানিকতা রক্ষায় করা হচ্ছে।
এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির উদ্যোগকে স্বাগত না জানিয়ে যারা নাকচ করে দিচ্ছেন, তারা সংলাপ প্রক্রিয়াটিকে বানচাল করতে চাচ্ছে। বানচাল করার ঘটনাটি আমরা দেখেছি। যারা নির্বাচনই বানচাল করতে চান, তারা সংলাপও বানচাল করবেন। বিএনপি ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে দুই বার নির্বাচন বানচাল করার চক্রান্ত করতে চেয়েছিল। সুতরাং, তারা আগামী নির্বাচনটিকে বানচাল করার চক্রান্তের অংশ হিসেবে সংলাপটি বানচাল করতে চাচ্ছে। এটা দুঃখজনক।’
‘বিএনপি ইতোমধ্যে সংলাপকে নাটক বলেছে। তারা বলেছে, সবই প্রধানমন্ত্রীর হাতে। কাজেই এই সংলাপের যৌক্তিকতা নেই।’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপের উদ্যোগকে যারা নাটক বা প্রহসন বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য এটাই বলবো— সংলাপে গেলেই না বুঝবেন প্রহসন না ভালো জিনিস। সংলাপে না গিয়ে প্রহসন বা নাটক বলা বাঞ্ছনীয় নয়। সংলাপে ঢোকেন তারপর এটা নাকট না অন্য কিছু সেটা বুঝবেন।’
সংলাপে জাসদের প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন— সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল আলম, সহ সভাপতি মীর হোসাইন আক্তার, স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশারফ হোসেন, অ্যাডভোকেট শাহ জিকরুল আহমেদ এবং রেজাউল করিম তানসেন।
সংলাপে জাসদের লিখিত বক্তব্যঃ
‘গণপ্রজাতন্ত্রী বংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি হিসেবে এককভাবে আপনার ওপর অর্পিত হলেও নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণের জন্য দলগুলোর সঙ্গে আপনি আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আপনার এ মহানুভব ও উদার উদ্যোগকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সাধুবাদ জানায়।
এ উদ্যোগে আমাদের দল জাসদকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
সংবিধানে নির্বাচন কমিশন গঠনের সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের তাগিদ দেওয়া থাকলেও দুর্ভাগ্যক্রমে এখনও পর্যন্ত সে আইন প্রণীত হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের দল জাসদ মনে করে যে, তুলনামূলকভাবে যথোপযুক্ত দক্ষ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে সার্চ কমিটি গঠন একটি গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া।
আমরা আশা করি যে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে আপনি সার্চ কমিটি গঠন করে যথোপযুক্ত দক্ষ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ প্রদান করবেন।
আমাদের দল জাসদ আরও মনে করে যে, নির্বাচন কমিশন গঠনে আপনার উদ্যোগে সার্চ কমিটি গঠন করার প্রক্রিয়াকে সুনির্দিষ্ট ও স্থায়ী কাঠামোগত রূপ দেওয়াসহ নির্বাচন কমিশন গঠনের সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে সকল বিতর্কের অবসান করা প্রয়োজন। জাসদ মনে করে যে, সার্চ কমিটি গঠনে ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করা সমীচীন নয়। আমরা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকসহ সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের মধ্য থেকেই সার্চ কমিটির সদস্য মনোনয়ন দেওয়া সমীচীন মনে করি।’