ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সার্চ কমিটির কার্যক্রম জাতীয় তামাশা ছাড়া কিছু নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, এই সার্চ কমিটির একমাত্র লক্ষ্য হলো জনগণকে বিভ্রান্ত করা, ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়া। এত এত পদ্ধতিতে, সুশীল সমাজের মতামত নিয়ে এতগুলো নাম প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন হচ্ছে- এটাই তারা দেখাতে চায়। মূলত গত দুটি নির্বাচনের মতো একই পদ্ধতিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে।
বুধবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গত সোমবার দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা হয়। এ সভার সিদ্ধান্ত জানাতেই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। ওই সভায় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ২৭ ফেব্রুয়ারি কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ ছাড়া সভায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের সদর দপ্তর পিলখানায় সংঘটিত ভয়াবহ মর্মান্তিক বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা এবং হাজার হাজার বিডিআর সদস্যদের গ্রেফতার ও বিচারে সাজা প্রদান বিষয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি আলোচনা সভা ও বনানী কবরস্থানে জিয়ারতের সিদ্ধান্ত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বিএনপি মনে করে যে, এখন সার্চ কমিটিতে নাম প্রেরণ এবং নির্বাচন কমিশন গঠন একেবারেই অর্থহীন। বিএনপি বিশ্বাস করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত রাখার নীলনকশার অংশ হিসাবে পুনরায় নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকারি তৎপরতা সেই চক্রান্তের অংশ।
স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো অবস্থাতেই নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচনে এই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আমরা মনে করি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সবার গ্রহণযোগ্য একটি অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক পার্লামেন্ট ও সরকার প্রতিষ্ঠাই বর্তমান সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ।
আইনমন্ত্রী ও উপদেষ্টার ফোনালাপের তদন্ত দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, সম্প্রতি আইনমন্ত্রী ও সরকারের একজন উপদেষ্টার ফাঁস হওয়া ফোনালাপটির সত্যতা আইনমন্ত্রী স্বীকার করেছেন। তাই এই ফোনালাপের বিষয়বস্তুগুলো অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা এবং ফোনালাপের আলোচিত বিষয়গুলো সম্পর্কে নিরপেক্ষ তদন্ত, জনগণের কাছে সত্য তুলে ধরা এবং জবাবদিহিতা জরুরি। কারণ ফোনালাপে গুরুতর দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে। অবিলম্বে এই ফোনালাপ ফাঁস হওয়া বিষয়ে শুধু তদন্ত নয়, এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। একইসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া অতীতে ফাঁস হওয়া ফোনালাপ সম্পর্কে নিরপেক্ষ তদন্তও দাবি করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ভ‚তের মুখে রাম নাম বলে একটা কথা আছে তো। আওয়ামী লীগের মুখে গণতন্ত্রের কথা হচ্ছে সেটাই। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসই করে না, যারা গণতন্ত্র প্র্যাকটিস করে না, প্র্যাকটিস করার সুযোগ দেয় না- তারা গণতন্ত্রের কথা বলে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সভায় সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী প্রেরণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সিন্ডিকেট অপতৎপরতার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভা মনে করে এ ধরনের সিন্ডিকেট গঠনের মাধ্যমে অতি উচ্চব্যয়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের বাধ্য করে তাদের নিঃস্ব করার অমানবিক প্রক্রিয়াকে সরকার প্রশ্রয় দিচ্ছে। কর্মসংস্থানহীন যুবকরা জমি, বাড়ি, স্ত্রী অথবা মায়ের অলংকার বিক্রি করে সরকারের এহেন হীন কর্মকাণ্ডে নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হচ্ছে। সভা অবিলম্বে এসব সিন্ডিকেট ভেঙে প্রকৃত ব্যয়ে বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির দাবি করেছে। এছাড়া সভায় ক্রমবর্ধমান নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি চাল, ডাল, তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং তেল, গ্যাস ও পানির মূল্য ধাপে ধাপে বৃদ্ধিতে স্বল্পবিত্ত, মধ্যবিত্ত, শ্রমজীবী মানুষের চরম ভোগান্তির বিষয়ে আলোচনা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, সভা মনে করে অনির্বাচিত সরকারের চরম দুর্নীতি, অপব্যয় এবং অপরিকল্পিত ভ্রান্তনীতির কারণে অস্বাভাবিক হারে সব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে জ্বালানি খাতে কুইকরেন্টাল প্রজেক্টে জবাবদিহিহীনভাবে বিনিয়োগ, ঢাকা ওয়াসায় সীমাহীন দুর্নীতি, অব্যবস্থপনার কারণে মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে। সভা অবিলম্বে পানি, গ্যাস, তেলের মূল্য বৃদ্ধি বন্ধ করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া এবং চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য হ্রাসে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।