পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের মুখে অবশেষে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হলো রাজধানীর ধানমণ্ডি মাঠ। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ঝোলানো নোটিশে মাঠটি সবার জন্য উন্মুক্ত বলে জানানো হয়। মাঠের প্রতিটি গেটেই এই নোটিশ ঝোলানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার থেকে মাঠ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে বলে দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম চক্রবর্তী।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমণ্ডি মাঠ উন্মুক্ত করে দিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
ধানমণ্ডি ৮ নম্বরে গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন মাঠটি একসময় সর্বসাধারণের জন্য ছিল উন্মুক্ত। তবে ২০০৯ সালে ধানমণ্ডি ক্লাবের নাম পরিবর্তন করে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব লিমিটেড হওয়ার পর মাঠটি ঘিরে দেয়া হয়। দু’বছর ধরে মাঠে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ক্লাবটি।
এমনকি শেখ জামাল এই মাঠে ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল ও টেনিস কোর্ট তৈরির কাজ শুরু করে। এরপর সর্বসাধারণকে নিয়ে শুরু হয় পরিবেশবাদীদের আন্দোলন। বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ (বাপা) মোট ৫০টি সংগঠন আন্দোলন করে। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ করতে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন পরিবেশবাদীরা।
সেই প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ১৫ মার্চ এক রায়ে ধানমণ্ডি মাঠের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে আদেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু আদালতের রায় মানেননি শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের কর্মকর্তারা। পরে ২০১৩ সালের ২৭ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায় অবমাননার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন। কিন্তু সে নোটিশও ক্লাবটি আমলে না নেয়ায় পরিবেশবাদীরা হাইকোর্টে রিট করেন।
এর মধ্যেই মাঠটি উন্মুক্ত করার দাবিতে এ মাসে মাঠে কর্মসূচি ঘোষণা করে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। পরে শেখ জামাল কর্মকর্তারা মাঠের ফটকগুলোতে নিয়োগ করে নিরাপত্তা প্রহরী। তারপরও মাটে প্রবেশ করে আন্দোলন করায় শেখ জামাল ক্লাব কর্তৃপক্ষ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, স্থপতি ইকবাল হাবিব, স্থপতি সালমা এ সফি ও বাংলাদেশ উইমেন্স স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুন্নাহার ডানাকে আসামি করে মামলা করে। পরে তারা ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।
মামলা প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘প্রায় ছয় দশক ধরে দেখেছি যে এই মাঠে বিনাবাধায় সবাই প্রবেশ করে। কিন্তু আজ সেই মাঠেই প্রবেশের দায়ে মামলা করা হয়েছে। এটা জাতি হিসেবে আজ আমাদের অত্যন্ত দুর্ভাগ্য ও লজ্জার।’
ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘জন্ম থেকে দেখেছি মাঠটি সকলের জন্য উন্মুক্ত। অথচ হঠাৎ করে কীভাবে পুকুরচুরির মত শুধুমাত্র কয়েকজন ব্যক্তি এই মাঠ দখল করে রাখাকে অবাক করার মতো।’