ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ এবার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থীর পক্ষে জড়ো হলেন বিশিষ্ট বাংলাদেশী আমেরিকানরা। আসন্ন নির্বাচনে কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-৩ (নিউইয়র্ক) থেকে দলীয় মনোনয়নের দৌঁড়ে অবতীর্ণ ডেমক্র্যাট জন ক্যাইমেনের সমর্থনে অভাবণীয় এ দৃশ্যের অবতারণা হয় শুক্রবার সন্ধ্যায়। লং আইল্যান্ডের (মন্টক হাইওয়ে) কপিয়েগ সিটি এবং আশপাশের সাদা-কালো-বাদামী রংয়ের নারী পুরুষের উচ্ছ্বল এ নির্বাচনী সমাবেশে অন্যান্য প্রবাসীরাও ছিলেন।
কংগ্রেসপ্রার্থী জন ক্যাইমেনের স্পেশাল অ্যাডভাইজার বাংলাদেশি আমেরিকান এবং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা আকতার হোসেন বাদলের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আরএলবি গ্রুপের স্টোরের বাইরে ও ভেতরের এই সমাবেশে বক্তব্যকালে সাফোক কাউন্টির এক্সিকিউটিভ এবং নিউইয়র্ক স্টেট ডেমক্র্যাটিক পার্টির পদস্থ কর্মকর্তা স্টিভ ভেলোন উল্লেখ করেন, আসন্ন নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। সে আলোকে আজকের এই আয়োজন এ এলাকার সকল বৈচিত্রকে ছাপিয়ে গেছে। উদিয়মান কম্যুনিটির একজন সদস্য হিসেবে আকতার হোসেন বাদল দলমত-নির্বিশেষে সকলকে জড়ো করে ডেমক্র্যাটিক পার্টির এগিয়ে চলার পথকে সুগম করলেন। সর্বস্তরের মানুষের সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের কারণেই রিপাবলিকানরাও ডেমক্র্যাট প্রার্থীকে বিজয়ী করার অঙ্গিকার করলেন। এখানেই সাংগঠনিক দক্ষতা আর বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বগুণের অবিস্মরণীয় প্রকাশ ঘটলো। স্টিভ ভেলোন বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, আমাদের সমাজে বাংলাদেশি আমেরিকান তথা সততা ও নিষ্ঠার সাথে কর্মরত নবাগতদের মধ্যে সংগঠক-ব্যবসায়ী বাদল অনন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন এবং তা দৃশ্যমান হচ্ছে নির্বাচনী সমাবেশেও।
সমাবেশে বাংলাদেশ সোসাইটির বোর্ড অব ট্রাস্টির অন্যতম সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমেরিকান স্বপ্ন পূরণে মূলধারায় সম্পৃক্ততার বিকল্প নেই। সে তাগিদেই আমরা পছন্দের প্রার্থীগণের পক্ষে মাঠে নেমেছি। লং আইল্যান্ডের মত সমাজেও আমরা সরব রয়েছি আকতার হোসেন বাদলের মত সংগঠকের মাধ্যমে।
কংগ্রেসপ্রার্থী জন ক্যাইমেন গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রবাসীদের প্রশংসা করে বলেন, ইমিগ্র্যান্টরাই আমেরিকার বর্তমান অবস্থানের নেপথ্য কারিগর। তাদের অধিকার ও মর্যাদার ক্ষেত্রে আমি সবসময় অগ্রাধিকার দিয়ে আসছি। ২৪ বছরের অধিক সময় নাসাউ কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের জজ, নর্থ হেমস্টিড টাউনের সুপারভাইজার, সাফোক কাউন্টির ডেপুটি এক্সিকিউটিভসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকালে আমি সততা ও নিষ্ঠাবানদের প্রতি সদয় থেকেছি। ইমিগ্র্যান্টদের নিরাপত্তা সুসংহত করার পাশাপাশি তাদের ভাষাগত শিক্ষা এবং কর্মস্থলের ন্যায্য পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে কখনো আপস করিনি।
জন ক্যাইমেন আরও বলেন, আমার স্পেশাল অ্যাডভাইজার বাদলের উদ্যোগে আজকের এ বহুজাতিক, বহুবর্ণ আর নানা ভাষার মানুষের সমাবেশ আমাকে সামনের দিনগুলোতে নয়া দায়িত্বে আরো উজ্জীবিত করবে। ২৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। সকলে কেন্দ্রে গিয়ে ব্যালট যুদ্ধে আমাকে জয়ী করবেন বলে আশা করছি।
জন ক্যাইমেন বলেন, বাদল আমার স্পেশাল অ্যাডভাইজার-এটি শেষ কথা নয়। আমি কংগ্রেসে যেতে সক্ষম হলে অবশ্যই বাংলাদেশি আমেরিকানরা বিশেষ একটি স্থানে অধিষ্ঠিত হবেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তৃণমূলের মানুষের সাথে সম্পর্ক গভীর হলে যে কোনো কাজে সফল হওয়া সম্ভব-সে চেতনাই আমার মূল শক্তি।
কপিয়েগ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট শ্যারোন ফাহুরোসো এই নির্বাচনী সমাবেশকে বাংলাদেশি আমেরিকানদের উত্থানের অন্যতম একটি অবলম্বন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এভাবেই ডেমক্র্যাটিক পার্টির নেতৃত্বে আরোহন এবং সমাজ পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে সম্মুখে এগুতে হবে।
অনুষ্ঠানের হোস্ট লং আইল্যান্ড চেম্বারের পরিচালক এবং আরএলবি গ্রুপ অব কোম্পানীর মালিক আকতার হোসেন বাদল সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত এ এলাকার মানুষের পাশে রয়েছি। তাদের ভালোবাসা-সান্নিধ্যে আমি অভিভূত। তবে সবকিছুকে অতিক্রম করলো আজকের এ উপস্থিতি। ব্যালট যুদ্ধে একজন ভালো মানুষকে বিজয়ী করার জন্য সকলের সংকল্প আমাদেরকে বহুদূর যাবার পথ সুগম করবে।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্কের কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-৩ (নর্দার্ন পার্ট অব নাসাউ কাউন্টি এবং কুইন্সের অংশবিশেষ) এর কংগ্রেসম্যান টম সওজি অবসর নেয়ায় শূন্য এ আসনে ডেমক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়নের দৌড়ে অবতীর্ণ হয়েছেন ৫ জন। ২৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে এই প্রাইমারি। বিভিন্ন জরিপে এগিয়ে রয়েছেন জন ক্যাইমেন। অপর প্রার্থীরা হলেন মেলানী দ্যএ্যারিগো, যসোয়া লাফাজন, রীমা রসুল এবং রবার্ট জিমারম্যান। ডেমক্র্যাটদের এ আসনে মোট জনসংখ্যা ৭ লাখ ২৫ হাজার ৭৪৬ (২০১৯ এর সেনসাস)। এরমধ্যে শ্বেতাঙ্গ-৬৯.৫% এবং এশিয়ান-১৪.৬%। হিসপ্যানিক হলেন ১০.৬% এবং কৃষ্ণাঙ্গ-৩.১%। অর্থাৎ এই আসনে জয়-পরাজয়ে কিছুটা হলেও বাংলাদেশি, পাকিস্তানি, ভারতীয়, চীনারা ফ্যাক্টর। আর সে আলোকেই জন ক্যাইমেন তার নির্বাচনী টিমে বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে আকতার হোসেন বাদলকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
জন ক্যাইমেন নেতৃত্ব প্রদানের মধ্যদিয়ে জনগণের বিশ্বস্ত প্রতিনিধিতে পরিণত হয়েছেন ইতিমধ্যেই। তিনি ছিলেন নর্থ হেমস্টিড টাউনের সুপারভাইজার, নাসাউ কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের জজ, স্যান্ডিতে ক্ষত-বিক্ষত নিউইয়র্ক পুনর্গঠনে স্টেটের অ্যাডভাইজার, নাসাউ কাউন্টি ফাইন্যান্স অথরিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন জন ক্যাইমেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি একজন আইনজীবী। হফস্রা ল’ স্কুল থেকে জুরিস ডক্টরেট এবং হার্ভার্ড থেকে লোক প্রশাসনে মাস্টার্স করা জন ক্যাইমেন গ্রেট নেকে স্ত্রী এবং ৩ সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন।