ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ভারতের যে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর সাম্রাজ্য এখন আফ্রিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত – তার কর্ণধার গৌতম আদানির সঙ্গে সোমবার সন্ধ্যায় একটি বিশেষ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন দিল্লি সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত পাঁচ-সাত বছরে ভারতীয় এই শিল্পপতি প্রতিবেশী বাংলাদেশেও লগ্নির পরিমাণ ক্রমশ বাড়িয়েছেন, সে দেশে ভোজ্য তেল থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ বা এনার্জি – বিভিন্ন খাতেই এখন রয়েছে আদানির ফুটপ্রিন্ট।
মাত্র গত সপ্তাহেই ব্লুমবার্গ বিলিওনেয়ার র্যাঙ্কিংয়ে তিনি উঠে এসেছেন দুনিয়ার তিন নম্বর ধনী ব্যক্তি হিসেবে – ধনসম্পত্তির বিচারে ভারতের শিল্পপতি গৌতম আদানির স্থান এখন স্পেসএক্সের ইলন মাস্ক ও অ্যামাজনের জেফ বেজোসের ঠিক পরেই।
তার দুনিয়াজোড়া বিনিয়োগ রয়েছে কয়লাখনি, বিদ্যুৎকেন্দ্র, বন্দর থেকে শুরু করে এলপিজি বা রান্নার তেল – সব খাতেই।
ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিসের সিনিয়র ফেলো স্ম্রুতি পট্টনায়ক বলছিলেন, "আদানি গোষ্ঠী বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ লগ্নি করেছে – বিশেষ করে এনার্জি খাতে।"
"আর বাংলাদেশ এখন যেভাবে এনার্জি সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, লোডশেডিং যেভাবে বেড়ে গেছে – তাতে স্পষ্ট বাংলাদেশের এনার্জি কতটা দরকার।"
ঝাড়খন্ডে আদানির নির্মীয়মান গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রায় পুরো উৎপাদনটাই বাংলাদেশে রপ্তানি করার কথা, ড: পট্টনায়ক ধারণা করছেন সে ব্যাপারেও দুজনের মধ্যে কথা হয়েছে।
"এছাড়া আদানি এখন ভারতের সবচেয়ে বড় লগ্নিকারী – তিনি অবশ্যই সে দেশে নতুন বিনিয়োগ নিয়েও কথা বলতে চাইবেন", বলছিলেন তিনি।
২০০৫ সালে ভারতের টাটা শিল্পগোষ্ঠীও বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল, মন্ত্রীদের সঙ্গে অনেক বৈঠক করেছিল – কিন্তু গ্যাসের দাম নিয়ে জটিলতায় সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
স্ম্রুতি পট্টনায়ক কিন্তু মনে করছেন. "আদানির ক্ষেত্রে সেরকম হওয়ার সম্ভাবনা কম – কারণ তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ পুঁজি আছে, বাংলাদেশেরও এখন বিনিয়োগ দরকার – ফলে সেই কনটেক্সটে এই বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ।"
গত কয়েক বছরে আদানি শিল্পগোষ্ঠী যেভাবে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ঢুকে পড়েছে – তা প্রায় অভাবনীয়।
বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড – যারা জনপ্রিয় ভোজ্য তেল ব্র্যান্ড রূপচাঁদার উৎপাদন ও বিপণন করে থাকে – তারা ও ভারতেরই আদানি উইলমার লিমিটেডের একটি সহযোগী সংস্থা।
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ভারতের একটি এসইজেড স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আদানি পোর্টসের চুক্তিও সারা।
ঝাড়খন্ডে আদানির গোড্ডা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকেও পুরো উৎপাদনটাই বাংলাদেশ কেনার অঙ্গীকার করে রেখেছে – যার জন্য তাদের খুব চড়া হারে ক্যাপাসিটি চার্জও দিতে হচ্ছে। যদিও সেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কবে শেষ হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
দিল্লিতে অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ওয়াচার প্রবীর দে বলছিলেন, এই পটভূমিতে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা গৌতম আদানির সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চাইবেন এটা খুব স্বাভাবিক।
তাঁর কথায়, "পোর্ট, লজিস্টিকস, হাইড্রোকার্বন বা ক্লাইমেটের মতো খাতে বাংলাদেশে আদানির বিনিয়োগ যদি বাড়ে তাতে তো দুপক্ষেরই লাভ।"
সূত্রঃ বিবিসি বাংলা।