ক্যাপ্টেন (অবঃ)মারুফ রাজুঃ ৫ইজানুয়ারীর একদলীয় পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈধ মনে করেনা বিএনপি এবং এই লক্ষ্যে অবিলম্বে নতুন নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবীতে সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরুর কথা ছিলো দলটির।সম্পতি সারা দেশে উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পরই আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
তবে রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে সে অবস্থান থেকে সরে এসেছেন তিনি। দ্রুত আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা না করে আগামী কয়েক মাস মূল এবং সহযোগী সংগঠনকে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত শক্তিশালী করার ব্যাপারে মনোযোগ দিতে চায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত পুনর্গঠনের মাধ্যমে দলকে আরও শক্তিশালী করে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে মাঠে নামতে চায় বিএনপি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগের সিদ্ধান্ত পরির্বতন করে দলকে শক্তিশালী করার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং একাধিক যুগ্মমহাসচিব ও বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। বিরোধপূর্ণ জেলাগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কোন্দল নিরসনের উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি পুরোনো কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন করে কমিটিও গঠন করা হচ্ছে।
জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরের আগে সরকারবিরোধী বড় কোনো কর্মসূচি দেবে না দলটি। দল পুনর্গঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ, অনশনের মতো ছোট ছোট কর্মসূচি দেয়া হবে। আর ডিসেম্বরের আগে খালেদা জিয়াসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা ক্রমান্বয়ে দেশের সবকটি জেলা সফর করবেন।
যদিও এক্ষেত্রে ১৯-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দ্রুত সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনের জন্য চাপ থাকলেও কৌশলে তা এড়িয়ে যেতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী এবং দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়ের পর ১৯ দলের পক্ষ থেকে হরতাল ঘোষণার অনুরোধ জানান জামায়াতের নেতারা।
তবে এক্ষেত্রে এখনো সাড়া দেননি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এতে কিছুটা ক্ষুব্ধও হন জামায়াত নেতারা। আর তাই তারা বিএনপিকে বাদ দিয়েই রায়ের পর হরতাল কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এক নেতা দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, বড় কোনো ঘটনা না ঘটলে নভেম্বর-ডিসেম্বরের আগে কঠোর আন্দোলনের কোনো সম্ভাবনা নেই। এখনই মাঠে নেমে সফল হওয়ার মতো সাংগঠনিক শক্তি এখনো বিএনপি তৈরি করতে পারেনি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো সরকার আমাদের আন্দোলনকে আবারও দমিয়ে দিলে বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাই চেয়ারপারসন দেখে শুনে পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে চাইছেন। ডিসেম্বরের পর লাগাতার আন্দোলন হবে বলেও জানান তিনি।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে,শুধু দেশের অভ্যন্তরের আন্দোলন নয়, আন্তজার্তিকভাবেও সরকারকে চাপে রাখতেএবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে দাবি জোরালো করতে বিএনপির শীর্ষ কয়েকজন নেতা বিভিন্ন দেশ সফর করবেন। সরকার পরিবর্তন হলে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে প্রতিবেশী ভারত সফর করারও চিন্তা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, সামনে রোজা, এরপর বিভিন্ন পরীক্ষা শুরু হবে। তাই শিগগিরিই বড় কোনো কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই।ইতিমধ্যে তিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে উন্নয়ন করা যায় তা নিয়ে দলের সমর্থক কয়েকজন বুদ্ধিজীবী এবং নেতাদের সঙ্গে আলাপও করেছেন। কারণ বিএনপির হাইকমান্ড মনে করেন, শুধু আন্দোলন করে বর্তমান সরকারকে সরানো সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চাপ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। আর ভারতের নতুন সরকার যদি ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের মতো আওয়ামী লীগকে কঠোরভাবে সমর্থন না দেয় তাহলে আন্তজার্তিক চাপ অনেকটা কাজে লাগবে।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে দলকে সুসংগঠিত করার আগে আন্দোলনে নামা ঠিক হবে না। তাই আরও একটু সময় লাগবে। জনগণ আন্দোলনের জন্য মুখিয়ে থাকলেও ডিসেম্বরের আগে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি আসছে না বলে জানান তিনি।