DMCA.com Protection Status
title="৭

হাসিনা সরকার রিজার্ভের টাকা গিলে ফেলেছে : মির্জা ফখরুল

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  পায়রা বন্দর নির্মাণে বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল (রিজার্ভ) থেকে অর্থ বিনিয়োগের বৈধ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, দেশের যে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে তার মূলে হচ্ছে হাসিনা সরকারের দুর্নীতি। তারা এমন চুরি করেছে প্রতিটি ক্ষেত্রে যে, এই ১৪ বছরে অর্থনীতিকে ধবংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।

পায়রা বন্দর উদ্বোধন করতে গিয়ে মিডনাইট প্রধানমন্ত্রী বলছেন যে, আমাদের বিরোধীরা অর্থ্যাৎ বিএনপি বলে যে, রিজার্ভের টাকা কোথায় গেলো? অবশ্যই আমরা জিজ্ঞাসা করতে চাই যে, রিজার্ভের টাকা কোথায় গেলো? তিনি উত্তর দিয়েছেন রিজার্ভের টাকা কী চিবিয়ে খায়? চিবিয়ে তো খাননি, গিলে ফেলেছেন। রিজার্ভের টাকা আপনারা গিলে ফেলেছেন। বলেছেন যে, পায়রা বন্দরে খরচ করা হয়েছে। পায়রা বন্দরে খরচ করার জন্য রিজার্ভের টাকা না।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে ঢাকাসহ পাশপাশের জেলাগুলো থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেয়। যুব সমাবেশে মঞ্চে প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিবের পাশে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি রেখে দুই চেয়ার খালি রাখা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, রিজার্ভের টাকা হচ্ছে আপনি যখন বাইর থেকে যেসমস্ত পণ্য আমদানি করবেন সেই টাকা ডলারে পরিশোধ করবেন। রিজার্ভের টাকা হচ্ছে দেশে যখন অর্থনৈতিক ক্রাসিস দেখা দেবে তখন আপনি এখান থেকে তার ব্যবস্থা করবেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পায়রা বন্দর কার্যকর হতে পারে না। কারণ? যে নাব্যতা দরকার তার এখানে জাহাজ ভেতরে আসার জন্যে যে পানির দরকার, সেই গভীরতা সেখানে নেই। সেখানে কী করেছেন সুপার ড্রেজার লাগিয়েছেন। এই সুপার ড্রেজারের জন্য আরো সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করে সেখানে আবার চুরির ব্যবস্থা করে আপনারা সেখানে সুপার ড্রেজার লাগিয়েছেন।

সমাবেশ বন্ধে পরিবহন ধর্মঘট কাপুরুষের আচরণ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা তিনটা সমাবেশ করাতেই আপনাদের এতো কম্পন শুরু হয়েছে, এতো কাপাকাপি শুরু হয়েছে যে, আপনারা ওই সমাবেশগুলো বন্ধ করার জন্যে আপনারা সমস্ত বাসসহ পরিবহন ধর্মঘট করাচ্ছেন। লজ্জা করে না আপনাদের। কী কাপুরুষ আপনারা? যে বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে বন্ধ করার জন্য আপনারা আপনাদের পেটুয়া সেই সমস্ত ইউনিয়নকে দিয়ে ধর্মঘট ডাকাচ্ছেন। চট্টগ্রামে ধর্মঘট দিয়েছে, ময়মনসিংহে ধর্মঘট দিয়েছে, খুলনায় ধর্মঘট দিয়েছে। কিন্তু সেই ধর্মঘট দিয়ে কী এই গণতন্ত্রকামী মানুষকে আটকিয়ে রাখতে পেরেছে? পারেনি। তারা পায়ে হেটে বিভিন্ন ভাবে তাদের যে দাবি সেই দাবি জানাতে তারা সেই সমাবেশগুলোতে উপস্থিত হয়েছে।

তিনি বলেন, বরিশালে ৫দিন আগে ধর্মঘট ডেকেছে। কারণ যেনো সমাবেশকে পন্ড করা যায়। রংপুরে ধর্মঘট দিয়েছে বাস শ্রমিকদের দিয়ে। কারণ রংপুরের সমাবেশকে যেন বন্ধ করা যায়।
মির্জা ফখরুল বাস মালিক-শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা সবসময় জনগণের সেবা করেন, জনগণের সঙ্গে বরাবরই ছিলেন। আজকে চালের দাম ১০ টাকা থেকে ৯০ টাকা হয়েছে, ডালের দাম বেড়েছে, ডিমের দাম বেড়েছে, চিনির দাম বেড়েছে। আপনারা আপনাদের বাচ্চাদের একটা ডিম পর্যন্ত দিতে পারেন না। তাহলে কার ইঙ্গিতে কাদেরকে সহায়তা করতে আপনারা এই কাজটা করবেন না। জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণের ভোগান্তি করবেন না।

চলমান আন্দোলনে যুবদলের মুন্সিগঞ্জের শহিদুল ইসলাম শাওন, নারায়ণগঞ্জের শাওন প্রধানের আত্মত্যাগসহ নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনার তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই আওয়ামী লীগ সরকার তারা আজকে আমাদেরকে গুলি করে দমন করতে চায়, তারা আজকে আমাদেরকে অত্যাচার করে নির্যাতন করে দমন করতে চায়। এদেশের মানুষরা তা করতে দেবে না, এদেশের যুবকরা তা করতে দেবে না।

এদেশে কোনো নির্বাচন ব্যবস্থা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে কোনো নির্বাচন নেই। নির্বাচনী ব্যবস্থাটাই আওয়ামী লীগ ধবংস করে দিয়েছে। একটা নির্বাচন কমিশন করেছে যাকে ডিসি-এসপিরাই মানে না এবং তারা নির্বাচন করতে পারে না। সুতরাং নির্বাচনের প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমরা খুব পরিস্কারভাবে বলেছি যে, সবার আগে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, তার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করে দিতে হবে এবং একটা তত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। পরিস্কার কথা যে, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা না দিলে এখানে কোনো নির্বাচন হবে না। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সেই কমিশনের মাধ্যমে তখন আবার নতুন করে এদেশের মানুষ তারা তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবে, তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সামনে এখন অনেক কঠিন সময়, অনেক পরীক্ষা, যুদ্ধ। মঞ্চে যে চেয়ারটা খালি রাখা হয়েছে সেটা আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য, আরেকটা চেয়ার খালি রাখা হয়েছে আমাদের ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমানের জন্য। আমাদের নেত্রী তার সারাটা জীবন লড়াই-সংগ্রাম করেছেন গণতন্ত্রের জন্য। এখনো অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি গৃহে বন্দি হয়ে আছেন। আমাদের নেতাকে মিথ্যা মামলায় দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, অসংখ্য নেতা-কর্মীকে খুন করেছে, গুম করেছে।
‘খেলা হবে’- আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-নেতাদের এহেন বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বলে কি খেলা হবে। কিসের খেলা হবে? খেলেছো তো ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে, এদেশের মানুষের যুবকদের নিয়ে, ছাত্রদের নিয়ে, নারীদের নিয়ে খেলেছো। এভাবে খেলা হয় না। খেলা যখন হয় তখন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে। খেলা তখনই হবে যখন সরকার থেকে তোমরা পদত্যাগ করবে, নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত¡াবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেবে তখনই সেই নির্বাচনে খেলা হবে। কোনো খেলা হতে দেয়া হবে না। এদেশে মানুষ কখনোই সেটা হতে দেবে না।

যুব দলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে এবং সাধারন সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের সঞ্চালনায় যুব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, যুব দলের সাবেক নেতা আবদুস সালাম আজাদ, সাইফুল আলম নিরব, মীর আলী নেওয়াজ, মোরতাজুল করীম বাদরু, মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, যুব দলের মামুন হাসান, কামরুজ্জামান দুলাল, নুরুল ইসলাম নয়ন, গোলাম মওলা শাহিন, ইছহাক সরকার প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

এরআগে সকালে সকালে নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শেরে বাংলা নগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা জানান।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!