DMCA.com Protection Status
title="৭

লাকসামের দুই নিখোঁজ বিএনপি নেতা হিরু-হুমায়ুন কি আয়নাঘরে বন্দি?

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দক্ষিণ কুমিল্লার দুই সিংহপুরুষ হিসাবে খ্যাত লাকসাম উপজেলা বিএনপি ও লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি, সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হিরু এবং লাকসাম পৌরসভা বিএনপির সভাপতি, লাকসাম বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির পারভেজ গুম হওয়ার ৯ বছর পূর্ণ হল আজ। 

হিরু-হুমায়ুন গুম হওয়ার সেই তারিখ থেকে গত ৯ বছর যাবৎ তাদের পরিবার, স্থানীয় বিএনপি, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, লাকসামের সুশীল সমাজ, বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং এখানকার প্রায় সকল শ্রেণী পেশার মানুষসহ সাধারণ আমজনতা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী উত্তাল আন্দোলনের সহিংসতায় গুরুতর আহত কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মীদের দেখতে ওইদিন সন্ধ্যার পর লাকসামের জনপ্রিয় এই দুই বিএনপি নেতা হিরু এবং হুমায়ুন তাদের প্রতিবেশী জসিম নামের অন্য এক বিএনপি নেতাকে সাথে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যোগে লাকসাম পৌর এলাকাধীন নিজবাড়ী থেকে জেলা সদর কুমিল্লার একটি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ওইদিন সারাদেশে বিএনপিসহ সরকার বিরোধীজোটের হরতাল কর্মসূচি থাকার কারণে তারা কুমিল্লা যাওয়ার জন্য বাহন হিসাবে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করেন। তারা দু'জন লাকসাম থেকে বের হওয়ার পরপরই তাদেরকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের পিছু নেয় র‌্যাবের বিতর্কিত এবং পদচ্যুত কর্মকর্তা, বর্তমানে কারাঅন্তরীণ তারেক সাইদের নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি বিশেষ টিম। 

হিরু-হুমায়ুনকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি লাকসামের কিছুটা উত্তরে আলীশ্বর বাজার নামক স্থানে পৌঁছালে হিরু-হুমায়ুনের ব্যবহৃত অ্যাম্বুলেন্সের গতিরোধ করে বিতর্কিত তৎকালীন র‌্যাব কর্মকর্তা তারেক সাইদের নেতৃত্বে র‌্যাবের ওইটিম। অ্যাম্বুলেন্সের গতিরোধ করে অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারকে বেধড়ক মারধর করে হিরু-হুমায়ুন এবং জসিমকে র‌্যাবের গাড়িতে তুলে নেয় তারেক সাইদ। ওই সময়ে আলীশ্বর বাজারে অবস্থানরত প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের মতে র‌্যাবের গাড়িতে হিরু-হুমায়ুনকে জোরপূর্বক তোলার সময় তাদের দু'জনকে এলোপাতাড়ি ব্যাপক মারধর করে র‌্যাব সদস্যরা। 

তারেক সাইদের নেতৃত্বাধীন র‌্যাব বাহিনী হিরু-হুমায়ুন এবং জসিমকে র‌্যাবের কালোগ্লাস বেষ্টিত গাড়িতে তুলে নিয়ে জেলা সদর কুমিল্লার দিকে চলে যায়। কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় গিয়ে অন্য একটি কালোগ্লাস বেষ্টিত মাইক্রোবাসে শুধু হিরু-হুমায়ুনকে তুলে দেয় তারেক সাইদ। ওই গাড়িটি তখন হিরু-হুমায়ুনকে নিয়ে ঢাকার দিকে চলে যায়। জসিমকে তারেক সাইদের ব্যবহৃত র‌্যাবের গাড়িতেই রাখা হয়।

পরবর্তীতে জসিমকে র‌্যাব হেফাজতে রেখে ওইদিন রাত (২৭ নভেম্বর-২০১৩) ৮টার পর তারেক সাইদের নেতৃত্বে র‌্যাবের ওইটিম পুনরায় লাকসাম এসে সাইফুল ইসলাম হিরুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার মিলে হানা দেয়। ওই সময় ওই মিলে হিরুর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসা কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন। তাদেরকেসহ মিল কর্মচারীদের প্রচন্ড মারধর করে মিলের ক্যাশে থাকা প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে যায় তারেক সাইদের নেতৃত্বাধীন র‌্যাব বাহিনী। ভাঙচুর করা হয় মিলের অফিস কক্ষের চেয়ারটেবিলসহ সকল আসবাবপত্র। মিলের হিসাবরক্ষণ কর্মচারী বুদ্ধদেবৎসহ হিরুর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্যাবসায়ী সকলকে র‌্যাবের গাড়িতে তুলে নেয় তারেক সাইদ। 

বিভীষিকাময় ভয়াল ওই অপারেশন শেষে ওইরাতের শেষাংশে ভোরবেলায় জসিমসহ হিরুর ফ্লাওয়ার মিল থেকে আটককৃত সকলকে লাকসাম থানায় সোপর্দ করলেও হিরু আর হুমায়ুনের সন্ধান মিলেনি গত প্রায় ৯ বছর। বিতর্কিত র‌্যাব কর্মকর্তা তারেক সাইদের এই বীভৎস অপারেশনের বর্ণনা করতে গিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে লাকসামের একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে জানা যায়, পুরো অপারেশনটিই ছিল পরিকল্পিত। মাগরিবের নামাজের আগেই লাকসাম বাজারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতায় দোকানপাট বন্ধ করে লাকসাম বাজারের ব্যাবসায়ীরা এবং বাজারে আগত মানুষজন সন্ধ্যার পরপরই নিজেদের বাড়িঘরে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। এই অবস্থায় অন্ধকারাচ্ছন্ন এক ভুতুরে নগরীতে পরিণত হয় আলোর শহর লাকসাম। 

এমতাবস্থায় জনমনে শুধু একটাই প্রশ্ন ছিল, কি হচ্ছে লাকসামে? বিএনপি নেতাকর্মীরাসহ লাকসামবাসী ওই মুহূর্তে আতঙ্কিত অবস্থায় উদ্বেগ উৎকন্ঠায় থাকলেও তখন পর্যন্তও হিরু-হুমায়ুনের পরিবার, বিএনপি নেতাকর্মী বা লাকসামের সাধারণ মানুষ কেউই জানে না যে, হিরু আর হুমায়ুনকে র‌্যাব বাহিনী গ্রেফতার বা গুম করেছে। লাকসাম বিএনপির জনপ্রিয় এই দুই শীর্ষনেতা হিরু-হুমায়ুন এভাবে গুম হওয়ার পর তাদের সন্ধান ও মুক্তির দাবিতে বিএনপিসহ লাকসামের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও ব্যাবসায়ী সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন ব্যানারের আন্দোলন করেছে দীর্ঘদিন। পরিবারের সদস্যরা র‌্যাব সহ দেশের সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এমনকি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত ধরনা দিয়েও হিরু-হুমায়ুনের সন্ধান পাননি। 

তারা কি বেঁচে আছে নাকি মেরে ফেলা হয়েছে তাও জানেন না হিরু-হুমায়ুনের পরিবার সদস্যরা বা স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। পুত্রকে হারানোর শোকে কাঁদতে কাঁদতে হুমায়ুনের পিতা রঙ্গু মিয়া মৃত্যুবরণ করেছেন অনেক আগেই। মাসহ পরিবারের সদস্যরা আজও হুমায়ুনের ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকেন আর দিনরাত কাঁদেন। জীবদ্দশায় হুমায়ুনের পিতা ওই অপারেশনে নেতৃত্বে থাকা র‌্যাবের বিতর্কিত ও পদচ্যুত কর্মকর্তা তারেক সাইদকে বিবাদী করে কুমিল্লার আদালতে একটি মামলাও করেছেন। যতটুকু জানা যায় মামলার অগগ্রতিও তেমন একটা নেই। ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে পরিবারের সদস্যরা দিনরাত আজও তাদের সন্ধান আর মুক্তির দাবিতে কেঁদে কেঁদে দিন কাটাচ্ছেন। গুম বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে "মায়ের ডাক" সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন আয়োজিত সভা সেমিনারে হিরু আর হুমায়ুনের পরিবারের সদস্যদের অতীতে সরব উপস্থিতি দেখা গেলেও ভয় আর আতঙ্কে এখন তারা সেগুলোও বয়কট করছেন। তবে তাদের পুরো পরিবার স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। 

পারিবারিক সূত্রে জানা যায় গুম হওয়া হিরু-হুমায়ুনের ব্যাংক হিসাবগুলোও এখন পুরোপুরি সচল করতে পারছে না তাদের পরিবার। তাদের স্থাবর সম্পদগুলোও বেচাবিক্রিতে নানান জটিলতা দেখা দিচ্ছে। ব্যাক্তিগত জীবনে হিরু-হুমায়ুন দু'জনেই অনেক সচ্ছল এবং সজ্জন সামাজিক ব্যক্তি ছিলেন। দু'জনের পরিবারই লাকসামের আদি পরিবার। হিরু-হুমায়ুন রাজনীতি থেকে সামাজিকতাকে খুব বেশি প্রাধান্য দিতেন। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তারা তাদের ক্যারিশমাটিক নেতৃত্ব দিয়ে দলমত নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে লাকসামকে শান্তিময় রেখেছেন। ওই সময়ে লাকসামে উল্লেখ করার মত কোন রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটেনি। হিরুর পিতা মরহুম চাঁন মিয়া সাহেব লাকসামের সার্বজনীন একজন সামাজিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ১৯৮৪ সালে লাকসাম পৌরসভা গঠিত হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত চাঁনমিয়া সাহেব তৎকালীন লাকসাম সদর ৭ নং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন করেছেন। লাকসামের সামাজিক দেনদরবারে চাঁনমিয়া সাহেব সততা এবং নিষ্ঠার সাথে মানুষের পাশে থাকতেন। 

সামাজিক কর্মকান্ডে সমগ্র লাকসামে চাঁনমিয়া সাহেবের ভূমিকা আজও এ অঞ্চলের মানুষ গর্বের সাথে স্মরণ করেন। সবকিছু মিলিয়ে রাজনীতির বাহিরেও লাকসামের ব্যাবসায়ী, পেশাজীবী, চাকরিজীবী, শ্রমজীবী এবং আমজনতার কাছে হিরু-হুমায়ুনসহ তাদের পরিবার অনেক জনপ্রিয়। এই দুই পরিবারকে আজও দক্ষিণ কুমিল্লা তথা বৃহত্তর লাকসামের মানুষ অন্তর থেকেই শ্রদ্ধা করে এবং ভালবাসে। ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর তারা দু'জন গুম হওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত লাকসামের বিএনপি ছিল অনেক শক্তিশালী। 

সাইফুল ইসলাম হিরুর নেতৃত্বে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কর্নেল (অব.) এম. আনোয়ারুল আজিম ৩০ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। লাকসামের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও আমজনতার ধারণা ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ দল বিএনপিতে হিরু-হুমায়ুনের শক্তিশালী নেতৃত্বে ঈর্ষান্বিত হয়েই স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ইশারায় তাদের দু'জনকে র‌্যাবের বিতর্কিত কর্মকর্তা তারেক সাইদকে দিয়ে গুম করানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষা নদীতে ৭ খুন মামলার আসামি হয়ে তারেক সাইদ এখন জেলে থাকলেও হিরু-হুমায়ুন গুমের বিষয়ে তার কাছ থেকে এখনো পর্যন্ত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। 

হিরু-হুমায়ুন গুমের বিষয়ে তার কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোন তথ্য জানতে চেয়েছে কিনা তাও জানে না তাদের পরিবার বা দলের কেউ। সাম্প্রতিক সময়ে নেত্র নিউজ নামে সুইডেন ভিত্তিক একটি অনুসন্ধানী ও জনস্বার্থ বিষয়ক অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা "ডিজিএফআই" পরিচালিত "আয়নাঘর" নামে একটি গোপন বন্দিশালা বা টর্চারসেল আবিষ্কার করে। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করে নেত্র নিউজ। "আয়নাঘর" নামক ডিজিএফআই এর ওই গোপন বন্দিশালা থেকে মুক্ত হয়ে দু'জন ভুক্তভোগী (যাদের মধ্যে একজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তাও রয়েছেন) চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। 

তারা বলেছেন "আয়নাঘর" নামক ওই গোপন বন্দিশালার বিভিন্ন কক্ষে তারা অনেক বন্দিদের দেখেছেন। এ দু'জনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই নেত্র নিউজ তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সাজিয়েছে। নেত্র নিউজের এই প্রতিবেদন নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন সভাসমাবেশে রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠনের নেতারা "আয়নাঘর" নামক ডিজিএফআই এর গোপন এই বন্দিশালা নিয়ে বক্তৃতা বিবৃতি দিচ্ছেন। দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা "আয়নাঘর" বন্ধ করে সেখানে বন্দি অবস্থায় থাকা সকলের মুক্তি চেয়েছেন। অনেক রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা ওই "আয়নাঘর" সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়েছেন। দেশের শীর্ষ পর্যায়ের সকল গণমাধ্যমে "আয়নাঘরের" কার্যক্রম বা ওখানে আটক অবস্থায় থাকা বন্দিদের নিয়ে লেখালেখি করছে। জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাংলাদেশে গুম, গুপ্তহত্যা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড নিয়ে সরব রয়েছে। 

মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট অভিযোগে ইতিমধ্যেই আমেরিকাসহ পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশগুলো র‌্যাবকে তাদের দেশে নিষিদ্ধ করেছে। নেত্র নিউজে বাংলাদেশে গুম বিষয়ে তথ্যনির্ভর প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর সারাদেশে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা সাম্প্রতিক সময়ে "মায়ের ডাক" নামক একটি মানবাধিকার সংগঠনের সেমিনারে যোগ দিয়ে কান্নাবিজড়িত কন্ঠে বলেছেন, "আমাদেরকেও গুম করে আমাদের স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে দিন, অথবা তারা জীবিত থাকলে তাদেরকে গুম অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়ে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিন। আমরা তাদেরকে একবার ছুঁয়ে দেখি" তাদের এমন হৃদয়স্পর্শী আকুতিতে দেশের আকাশ বাতাস ভারী হচ্ছে। অনেকের মতে ২০০৮ পরবর্তী সময় থেকে বিচারবহির্ভূত বা গুপ্তহত্যা সবই হয়েছে বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফ আই পরিচালিত "আয়নাঘর" নামক গোপন এই বন্দিশালা বা টর্চারসেলে। গুম হওয়া শতশত লোকও সেখানে এখনো বন্দি অবস্থায় নির্মম নির্যাতন নিপীড়নের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বাংলাদেশে গুম হওয়াদের ব্যক্তিদের তালিকায় প্রায় সকলেই বর্তমান সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতাকর্মীরাই। নেত্র নিউজ এর "আয়নাঘরের বন্দি" শিরোনামের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর গুম হওয়া অনেকের পরিবার নতুন করে আশার আলো দেখছেন। অনেকের মত তাদেরও ধারণা ডিজিএফআই এর ওই "আয়নাঘর" বা গোপন বন্দিশালায় তাদের স্বজনরাও বন্দি অবস্থায় থাকতে পারেন।

এতে পিছিয়ে নেই লাকসাম থেকে গুম হওয়া লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হিরু ও লাকসাম পৌরসভা বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজের পরিবারও। বিষয়টি নিয়ে লাকসামে বিএনপি নেতাকর্মী ও আমজনতার মধ্যেও ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। লাকসামের হাটবাজার বা রাস্তাঘাটে অনেকেই জানার চেষ্টা করছেন ওই "আয়নাঘরে" হিরু-হুমায়ুন কি এখনো জীবিত অবস্থায় আছেন? নাকি নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে? অনেকে আবার প্রশ্ন তুলছেন বিতর্কিত এবং পদচ্যুত র‌্যাব কর্মকর্তা হিরু-হুমায়ুন গুমের মাস্টার মাইন্ড কিলার তারেক সাইদতো কাউকে গুম করার পর তাদের হত্যা করে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষা নদীতে বালুভর্তি বস্তা চাপা দিয়ে ফেলে দিতেন। 

নারায়ণগঞ্জের একসাথে গুম হওয়া ৭ জনের মত হিরু-হুমায়ুনের ভাগ্যেও কি এমন কিছু ঘটেছে। বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই পরিচালিত "আয়নাঘরের বন্দি" শিরোনামে এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর লাকসাম থেকে গুম হওয়া বিএনপির দুই শীর্ষনেতা হিরু-হুমায়ুনকে নিয়ে বর্তমানে লাকসামের সর্বত্র বিএনপি নেতাকর্মী এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে নতুন করে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। তবে অনেকে আবার বলছেন কেবল সঠিক তদন্তের মাধ্যমেই জানা যাবে হিরু-হুমায়ুনের ভাগ্যে সর্বশেষ কি ঘটেছে? 

অনেকে আবার প্রশ্ন তুলে বলছেন, তারা কি ডিজিএফআই এর "আয়নাঘর" বা গোপন বন্দিশালায় জীবিত অবস্থায় আটক আছেন নাকি র‌্যাবের বিতর্কিত কর্মকর্তা তারেক সাইদ নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষা নদীতে শুধুমাত্র বিএনপি নেতা হওয়ার অপরাধে হিরু-হুমায়ুনকে মাছের খাদ্য বানিয়েছেন?

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!