ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়া ও এস আলম গ্রুপের ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার ঘটনায় রিট করার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (৩০ নভেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পরামর্শ দেন।
আদালতে বিষয়টি নজরে আনেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি এ সময় আদালতের কাছে আদেশ প্রার্থনা করেন। তখন হাইকোর্ট বলেন, প্রতিবেদনগুলো সংযুক্ত করে রিট আবেদন আকারে কোর্টে আসুন। এসময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান উপস্থিত ছিলেন।
এদিন সকালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতে ‘ইসলামী ব্যাংকের ভয়ংকর নভেম্বর’, এস আলম গ্রুপের ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ঘটনায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন। সকাল ১০টা ৫৪ মিনিটে ডায়াসে আসেন শিশির মনির।
তিনি বলেন, আমরা ঘটনা ঘটার পর সেটি নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করি। আগে থেকেই যদি এসব সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করি তাহলে হয়তো কিছুটা সমাধান করা সম্ভব। এরপর তিনি তার চিঠি ও ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। আদালত সেটি দেখে রিট করার পরামর্শ দেন।
এর আগে গত রোববার (২৭ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বরাবর একটি চিঠি দেন। তার সঙ্গে আরও ছিলেন ইসলামী ব্যাংকের পাঁচজন আইনজীবী গ্রাহক। অন্যরা হলেন, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ, অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ সাদিক, শাইখুল ইসলাম ইমরান ও যায়েদ বিন আমজাদ।
ডাকযোগে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা সবাই ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ লিমিটেডের নিয়মিত গ্রাহক। ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আমরা সাধ্যমতো ইসলামী ব্যাংকের সাথে লেনদেন করে থাকি। গত ২৪ নভেম্বর ‘প্রথম আলো’ পত্রিকার অনুসন্ধানী রিপোর্টে উঠে এসেছে, ইসলামী ব্যাংক থেকে নভেম্বর মাসের ১ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত দুই হাজার ৪৬০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে একটি ‘অসাধু চক্র’। এই রিপোর্টে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান-সংক্রান্ত বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের আমানতকারী হিসেবে আমরা উদ্বিগ্ন। স্বীকৃতমতে, বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে।’
এমতাবস্থায়, এই ধরনের সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনে আমরা সংক্ষুব্ধ। বিষয়টি আমলে নিয়ে গভীরভাবে খতিয়ে দেখার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনগত দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করার অনুরোধ করছি।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ নভেম্বর দৈনিক প্রথম আলোতে ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, নাবিল গ্রেইন ক্রপস লিমিটেডের ভুয়া ঠিকানা ও নাবিল গ্রুপের অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করে মার্টস বিজনেস লিমিটেড নামে কাগুজে কোম্পানির নামে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) থেকে দুই হাজার কোটি টাকা তুলেছে অসাধু চক্র।
চলতি বছর ইসলামী ব্যাংক থেকে আটটি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা তোলা হয়েছে। তবে ১ থেকে ১৭ নভেম্বরের মধ্যে ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা তুলে নেওয়ায় মাসটিকে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’ বলছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক থেকে একাই ৩০ হাজার কোটি ঋণ নিয়েছে এস আলম গ্রুপ, গত ২৯ নভেম্বর এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউ এইজ পত্রিকা, যা আদালতের নজরে আনা হয়েছে।