DMCA.com Protection Status
title="৭

পুলিশ-র‌্যাব কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না,দেশব্যাপী ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করলেন বেগম খালেদা জিয়া

 image_89059_0গুম খুন ও অপহরণের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাংগঠনিক ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমাবেশে তিনি এ ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেন।

খালেদ জিয়া বলেন, ‘সরকারের লোকেরাই এসব গুম, খুন ও অপহরণ করছে এটা পরিষ্কার। তাই এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাদের কাছে বিচার প্রতিকার চেয়ে কোনো লাভ নেই। এজন্য এই সরকারের কাছে নিরাপত্তা না চেয়ে তাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’

খালেদা বলেন, ‘জনগণের নিরাপত্তার জন্য আমিও রাস্তায় নামবো। আপনারা আমার সাথে থাকবেন। আমি রাস্তায় নামতে চাইলে আওয়মী লীগ আমার বাড়ির সামনে পুলিশ আর বালুর ট্রাক দিয়ে আটকে দেয়। তারপরও আমি নামবো ইনশাল্লাহ।’

১৯ দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা প্রস্তুত থাকুন, গুম করতে এলে তাকে ঘেরাও করে আটকে রাখবেন। পুলিশ-র‌্যাব কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। নিরীহ মানুষকে উদ্ধার করে সেই পুলিশ-র‌্যাবকে আইনের হাতে সোপর্দ করবেন।’

‘রেড অ্যালর্ট’ জারি করা হয়েছে উল্লেখ করে সময় মতো হাজির হয়ে দেশকে রক্ষা করার আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।

প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার বক্তব্যে খালেদা জিয়া সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যখন জেগে উঠবে তখন কোনো সংবিধান-টংবিধান আপনাদের বাঁচাতে পারবেন না। বিভিন্ন সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ বেশি দূরে নয়।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলরসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। তাদের লাশ পাওয়া গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দায়িত্বে থেকেও কেন তাদের বের করতে পারলো না। এর জবাব দিতে হবে হাসিনাকে।’

তিনি বলেন, ‘সুপরিকল্পিতভাবে যুবক ধরে গুম করে হত্যা করা হচ্ছে। কারণ এই যুবকরা ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেবে। তারা মেধাবী।’  

শীতলক্ষ্যায় লাশের স্রোত মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘একের পর এক গুম হচ্ছে। লাশ ভেসে উঠছে, বনে জঙ্গলে লাশ পাওয়া যাচ্ছে। আজকে আমরা জানতে চাই চৌধুরী আলম কোথায়? ইলিয়াস আলী কোথায়? তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে।’

রানা প্লাজা ট্র্যাজডিতে ক্ষতিগ্রস্তরা পর্যাপ্ত সহায়তা পায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা ছিল। তারা (সরকার) ক্ষতিপূরণ দেয়ার নামে অনেক চাঁদা তুলেছে, বিদেশ থেকে সাহায্য এসেছে। তারপরও শুনেছি এখনো ক্ষতিগ্রস্তরা সাহায্য পায় নাই। যে পরিমান সাহায্য দেয়ার কথা ছিল সেই পরিমান সাহায্য তারা পায় নাই। চিকিৎসা দেয়া হয় নাই।’

ব্যাংকে টাকা রয়েছে বলে সরকার যে গর্ব করছে তারও সমালোচনা করেন বিএনপি নেত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের সময় দেশি-বিদেশি অনেক বিনিয়োগ হয়েছে কিন্তু এই সরকারের সময় কোন বিনিয়োগ হচ্ছে না। আজকে সরকার বড় বড় কথা বলে ব্যাংকে নাকি অনেক টাকা জমা আছে। কিন্তু সেই টাকাতো কেউ নিচ্ছে না। কোথাও বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিনিয়োগ না হলে তো টাকা ব্যাংকেই থাকবে।’

শ্রমিক রপ্তানি খাতে বিএনপির বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ভুলের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে এখন শ্রমিক পাঠানো যাচ্ছে না। আমরা বিদেশে দক্ষ অদক্ষ শ্রমিক পাঠাতাম। এখন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মধ্যপ্রাচ্য শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য বলে দিয়েছে এই আওয়ামী লীগ যতোদিন থাকবে ততোদিন তারা বাংলাদেশ থেকে কোনো শ্রমিক নেবে না। কমিশন খাওয়ার জন্যই মধ্যপ্রাচ্য শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশের উন্নতির জন্য আওয়ামী লীগকে বিদায় করতে হবে। এজন্য সবাইকে রাজপথে নামতে হবে। না হলে দেশের কোনো উন্নতি হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ভাত চাই কাজ চাই নিরাপত্তা চাই। এই আওয়ামী লীগ ভাত কাজ নিরাপত্তা দিতে পারে না। কাজেই এই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পারে না। তারা সংবিধান সংশোধন করেছে আজীবন ক্ষমাতয় থাকার জন্য।’

পিলখানা হত্যাকাণ্ড এবং হেফাজত ইসলামের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের ভূমিকারও কঠোর সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘পিলখানার ঘটনায় র‌্যাবকে কেন নির্দেশ দেয়া হয় নাই। তারা প্রস্তুত ছিল। তারা গেলে অফিসারদের জীবন রক্ষা পেতো। খুনিরা ধরা পড়তো। কিন্তু সরকার পরিকল্পিতভাবে র‌্যাবকে যেতে দেয়নি। অন্যদিকে হেফাজত রাস্তায় বসেই ছিল তাদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। কিন্তু তাদেরও মারা হলো। আসলে এই আওয়ামী লীগ সরকার একটা খুনি রক্ত পিপাসু ড্রাকুলার সরকার। তাদের হাতে কোনো মানুষ নিরাপদ নয়।’

তিনি বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি অত্যাচার চালিয়েছে। মন্দির ভেঙেছে, লুটপাট করেছে। যাদের হাতে দেশের মানুষ, স্বাধীনতা গণতন্ত্র নিরাপদ নয় তাদের দেশের ক্ষমতায় রাখা যায় না। এরা যতোদিন থাকবে ততোদিন দেশের ক্ষতি হতে থাকবে।’

দেশের তাঁত শ্রমিকদের বেহাল দশার কথা জানিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে দুই লাখ তাঁত কল বন্ধ হয়েছে। পূঁজি হারিয়ে শ্রমিক এবং ব্যাবসায়ীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সরকার একদিকে মানুষ খুন করছে আরেক দিকে মানুষকে বেকার করছে।’

গার্মেন্টস শিল্পে বিএনপির সাফল্যের কথা তুলে ধরে দলের চেয়ারপারসন বলেন, ‘গার্মেন্টস শিল্প আমরা শুরু করেছিলাম। এখন চরম সঙ্কটে পোশাক শিল্প। এই শিল্প বন্ধ হয়ে গেলে অনেক মানুষ বেকার হবে। বিদেশিরা জানিয়ে দিয়েছে, শ্রমিকের রক্তে মাখা জামা আমরা পরবো না। তাই মালিক শ্রমিকের স্বার্থে আওয়ামী লীগকে বিদায় করতে হবে।’

কোটিপতির তালিকায় সরকার দলীয় যে ২২৬ সংসদ সদস্যের নাম রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কি না জানতে চেয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘কিছু হলেই বিরোধী দলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। আর তাদের ৩০০ এমপির মধ্যে ২২৬ জন কোটিপতি। ৪২ জন কর দেয় না। দুদককে এর তদন্ত করতে হবে। এদের বেলায় দুদক অন্ধ নাকি?’

আওয়ামী লীগের গত মেয়াদের রেল কেলেঙ্কারির বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনারা সবাই ভুলে গেছেন কালো বিড়ালের কথা? কালো বিড়াল এখন জাহাজে উঠেছে। দেশ খেয়ে ফেলেছি এখন জাহাজ খাবো।’

ক্ষমতায় থাকার জন্য সরকার বার বার পদ্মাসেতু বাস্তবায়নের আশ্বাস দিচ্ছে দাবি করে ১৯ দলীয় জোট নেত্রী বলেন, ‘সরকার বার বার বললেও এখনো পদ্মাসেতুর কিছু করতে পারে নাই। তারা বলছে অমুক টাকা দেবে, তমুক টাকা দেবে। কিন্তু এদেরকে কেউ বিশ্বাস করে না, তাই টাকা দিতে চায় না।’

তিনি বলেন, ‘প্রশাষসনকে দলীয়করণ করা হয়েছে। চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। পুলিশের সাথে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করছে। টাকা না দিলে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।’

বাংলাদেশ স্বাধীন নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ মোটেই স্বাধীন নয়। আওয়ামী লীগ আজকে ক্ষমতায় থাকার জন্য শৃঙ্খলীত। তারা দাস নয় ক্রীতদাস, তাই প্রভুর নির্দেশে অন্যায় কাজ করতে বাধ্য। তারা ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছে। সীমান্তে হত্যা হলেও এই ক্রীতদাসরা প্রতিবাদ করতে পারে না। ফেলানীর লাশ কাঁটাতারে ঝুললো, দেশের ভেতরে এসে মানুষ ধরে নিয়ে গেলেও তার প্রতিবাদ করতে পারে না। এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, গর্জে উঠতে হবে।’

সন্ত্রাসবাদের সাথে আওয়ামী রাজনীতির সম্পর্ক রয়েছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা জঙ্গি রাজনীতি সমর্থন করি না। ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় যুবলীগ নেতা জড়িত। মির্জা আজম আওয়ামী লীগের নেতা যার সঙ্গে জঙ্গিদের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। তাই স্পষ্ট- গুম, খুন এবং জঙ্গি তৎপরতার সাথে আওয়ামী লীগ জড়িত।’

সাংবাদিক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, ‘২৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। তাদের হাসপাতালে যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাগর-রুনির হত্যাকারীর ধরা পড়েনি, বিচারও হয়নি।’

খালেদা জিয়ার বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে সমাবেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এজন্যে কিছুটা সময় তার বক্তৃতা থামাতে হয়। পরে তিনি বলেন, ‘বেঈমানরা এই সমাবেশে বিশৃঙ্খলা করছে। বেঈমানদের চ্যাপ্টা করে দিতে হবে।’

সমাবেশে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, বেগম সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. এম ওসমান ফারুক, যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!