ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ কোনো নির্বাচন ছাড়াই বর্তমান জাতীয় সংসদের মেয়াদ আরও ৫ বছর বাড়িয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন।
করোনা মহামারিকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদ নির্বাচন ছাড়াই আরও পাঁচ বছর বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন। তার অভিমত, পাঁচ বছর না হোক অন্তত দুই বছর বাড়ানো যেতেই পারে। কারণ করোনা দুর্যোগের কারণে জাতীয় সংসদ দুই বছর ঠিক মতো কাজ করতে পারেনি।
সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক মানববন্ধনে আ ক ম জামাল উদ্দিন এসব কথা বলেন।
রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাইদ চাঁদ প্রকাশ্য জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন অভিযোগ তুলে এই ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধনটির আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। আবু সাঈদ চাঁদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান শিক্ষকরা।
আ ক ম জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বিগত নির্বাচনের পরে পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু ওই নির্বাচনের পরে করোনা মহামারির মহাদুর্যোগের ভেতর দিয়ে দেশ চলেছে। এই মহামারির কারণে বিশ্ববাসীর সঙ্গে আমরা দেশের প্রতিটি জায়গায় যে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছি, সেটি কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। সে কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশের সুশীল সমাজসহ সবার কাছে আমার আকুল আবেদন, আগামী ছয় মাস পর যে জাতীয় নির্বাচন, সে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার কোনো দরকার নেই।’
‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই মহাদুর্যোগকে কারণ দেখিয়ে আপনি জাতীয় সংসদকে আরও ৫ বছরের জন্য এক্সটেনশন (মেয়াদ বাড়ানো) করতে পারেন। কমপক্ষে দুই বছর তো হতেই পারে। কারণ করোনা দুর্যোগের কারণে জাতীয় সংসদ দুই বছর ঠিক মতো কাজ করতে পারেনি। শুধু জাতীয় সংসদই নয়, এদেশের মানুষ, ব্যবসায়ী, সরকার কেউই ঠিক মতো কাজ করতে পারেনি। দেশ সঠিকভাবে পরিচালিত হয়নি।’
ঢাবির এই শিক্ষক বলেন, ‘আমি নির্বাচন কমিশন, সরকারসহ সবার কাছে আকুল আবেদন জানাই, এই ধরনের পরিস্থিতিতে যখন আমরা সামাজিক-অর্থনৈতিক নানা ক্ষেত্রে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি, সেসময় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে হানাহানি, হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার কোনো বাধ্যবাধকতা সরকার বা জনগণের নেই।’
সমাবেশে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যেভাবে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে সেটির নিন্দা জ্ঞাপনের ভাষা আমাদের জানা নেই। এটা কোনো ভাষার মধ্যেই পড়ে না; সেটি ক্ষমার অযোগ্য একটি বিষয়। এটি একজন নিম্ন পর্যায়ের কোনো নেতার বক্তব্য নয়। এটি মূলত এক ধরনের গভীর ষড়যন্ত্রর অংশ এবং তার বহিঃপ্রকাশ; সেটির মধ্যে দিয়ে তাদের কার্যক্রম শুরু করার একটি ইঙ্গিত।’
উপাচার্য বলেন, ‘সেটি খুব দূরের ইতিহাস নয়; যেদিন নানা ধরনের পেট্রোল বোমা ও অগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন স্তরের শ্রেণি-পেশার মানুষকে হত্যার একটি নীলনকশা প্রণয়ন এবং নানা ধরনের অপকর্ম সূচিত হয়েছিল। এখন তারা এই কৌশল পরিবর্তন করেছে। ২০২৩ সালে এসে অগ্নিসন্ত্রাসের একটি নতুন ভার্সন হলো হত্যার হুমকি দেয়া।’
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রতীক। যারা তাকে হত্যা করে এদেশকে আবার পেছনে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করছে, তাদের কোনো ক্ষমা নেই। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার যে কোনো ষড়যন্ত্র আমরা রুখে দেব। প্রয়োজনে আমরা জীবন দিয়ে হলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে সুরক্ষার চেষ্টা করে যাব।’
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘এই রাজনৈতিক দলটি খুনি রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিতি পেয়েছে। এরা সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল হিসেবে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা, অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় আসা-এই কাজগুলো জন্মলগ্ন থেকেই করে আসছে। ক্যান্টনমেন্টে তাদের জন্ম; সুতরাং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তারা বিশ্বাস করে না।’
মাকসুদ কামাল বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য বহুবার চেষ্টা করা হয়েছে। তিন তিনবার তিনি এদেশের মানুষের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আছেন, আরও আসবেন। তাদের (চক্রান্তকারী) ধারণা শেখ হাসিনাকে যদি হত্যা করা যায় তবেই তারা ক্ষমতায় আসবে।’ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদার সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম অহিদুজ্জামান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুস ছামাদ, ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিতেশ চন্দ্র বাছার, শিক্ষক সমিতির সদস্য অধ্যাপক ড. আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূঁইয়া, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী প্রমুখ।