ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সরেজমিনে বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ এবং নির্বাচন পূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুসন্ধানী অগ্রগামী দল এখন ঢাকায়। গতকাল ইইউ’র ৬ সদস্যের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের দু’জন সদস্য ঢাকায় পৌঁছান। বাকি ৪ জন গত রাতে বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা। ঢাকাস্থ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশন প্রধানের দপ্তর মানবজমনিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। জানিয়েছে, রোববার থেকে ইইউ টিমের দুই সপ্তাহব্যাপী ঢাকা মিশন শুরু হবে। মিশনের মূল কাজ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পরিবেশ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা। অর্থাৎ আগামী নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষক টিম পাঠালে তার কর্মপরিধি কি হবে, বাজেট, লজিস্টিক্স ও নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয় নির্বাচন কমিশন কতোটা ফ্যাসিলিটেড করবে তার আগাম মূল্যায়ন করা।
ওদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল স্লোভাকিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ইভান স্টিফেনেককে লেখা এক চিঠিতে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়েছেন। সেখানে তিনি ওই নির্বাচনে সব অংশীজনের ভূমিকা চেয়ে বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা সৃষ্টির জন্য সব অংশীজনকে ভূমিকা রাখতে হবে। আর সেজন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংলাপ এবং নাগরিক সমাজের কাজের ক্ষেত্র নিশ্চিত করতে হবে। জোসেপ বোরেলকে গত ১২ই জুন একটি চিঠি লিখেছিলেন ইভান স্টিফেনেকসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য।
তাতে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ, চলমান সংকটের টেকসই ও গণতান্ত্রিক সমাধানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলোচনার কথা বলা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার তাঁদের ওই চিঠির জবাব দেন জোসেপ বোরেল।
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গত ১২ই জুন ওই চিঠি দেয়ার জন্য ইভান স্টিফেনেককে ধন্যবাদ জানান জোসেপ বোরেল। ওই চিঠিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য যে উদ্বেগ জানান, সে বিষয়ে অবগত আছেন বলেও ইইউ’র জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি তার ফিরতি চিঠিতে উল্লেখ করেন। জোসেপ বোরেল লিখেন, বাংলাদেশ সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পরিস্থিতি, উপকারিতা ও সম্ভাব্যতা পর্যালোচনার জন্য তথ্যানুসন্ধান মিশন পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংলাপের কথা উল্লেখ করে ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি প্রধান বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশের স্বাধীনতাসহ মৌলিক স্বাধীনতাগুলোর সুরক্ষা গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য।
ইইউ’র জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়টি ইইউ নিবিড়ভাবে লক্ষ্য রাখছে। তিনি যেন সম্ভাব্য সেরা চিকিৎসা সুবিধা পান, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে ইইউ বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। ওদিকে ইইউ প্রতিনিধি দলের সফরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তেমন কিছু করণীয় নেই জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের মূখপাত্র বলেছেন, তাদের জানানো হয়েছে, সফরকারী ইইউ’র অনুসন্ধানী টিমের রিপোর্টের ভিত্তিতেই দ্বাদশ নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানো বা না পাঠানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সেগুনবাগিচা জানায়, কেবল অনুসন্ধান টিম নয়, মানবাধিকার বিষয়ক ইইউ’র বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে আসছেন। সফরকালে তিনি কক্সবাজারস্থ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন এবং মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সরকারি বেসরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।