সরকার বাধ্য করলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বলেছেন, ‘জনগণ এখন ঐক্যবদ্ধ। তারা আন্দোলন চায়। তারা আমাদের কর্মসূচির দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা কর্মসূচি দেবো। এখন আমরা সভা সমাবেশ মানবন্ধন ও গণঅনশনের মতো কর্মসূচি দিচ্ছি। এতে কাজ না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। তবে আমাদেরকে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য করবেন না। তার আগেই পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। যাতে সবাই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।’
রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে বিএনপি আয়োজিত গণঅনশন কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সকাল সোয়া ৯টায় গণঅনশন শুরু হলেও বিকেল সাড়ে ৪টায় কর্মসূচিতে যোগ দেন বিএনপি চেয়ারপারন।
দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ তৃণমলের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা ও সারাদেশে বিচারবর্হিভুত হত্যা, গুম, খুনসহ সরকারের নানা নির্যাতন ও নিপীড়নের প্রতিবাদে বিএনপি ঢাকাসহ সারাদেশে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ গণঅনশন কর্মসুচি পালন করে।
প্রতিবেশী দেশের আদেশ মেনে সরকার চলছে এমন ইঙ্গিত দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সরকার প্রভুর আদেশ মানতে বাধ্য। প্রভু যা বলছে তারা তাই করছে। প্রভুর আদেশ মেনে তারা দেশে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না। এজন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে অন্যের গোলামী করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সব পেশা ও শ্রেণীর মানুষকে আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু ১৯ দল নয়, সব রাজনৈতিক দল আসুন। সবাই সমান কেউ ছোট বড় নয়। সবাই মিলে দেশ বাঁচাতে গণতন্ত্র বাঁচাতে আমরা রাস্তায় নামবো।’
সবাইকে আগামী কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে খালেদা বলেন, ‘অন্যান্য দলের যারা যোগ্য আছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাদের নিয়ে আমরা একসাথে কাজ করবো। এবং অল্প সময়ের মধ্যেই প্রমাণ করবো দেশকে কীভাবে দারিদ্রমুক্ত ও সন্ত্রাস-গুম-হত্যা-অপহরণ মুক্ত করা যায়।’
সারাদেশ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সারাদেশে অবৈধ সরকারের কার্যক্রম চলছে। নারায়ণগঞ্জে আইনজীবীসহ সাতজনকে গুম করে খুনের পর নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। সবাই জানে এর সাথে কারা জড়িত। যারা জড়িত তারা সরকারের লোক, তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জের সন্ত্রাসীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেয়েও বেশি শক্তিশালী বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মানুষের চোখে পানি আর সরকারের হাতে রক্ত উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘এই অবৈধ সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন দেশে রক্তের বন্যা বইতে থাকবে। এভাবে মা বোন বাবার চোখের পানি ঝরতে দেয়া যায় না।’
তিনি বলেন, ‘গুম-খুনের সাথে সরকার যে জড়িত এটা পরিষ্কার। অথচ তারা দোষ বিএনপির উপর চাপাতে চায়।’
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘গুম-খুন-অপহরণ বিএনপির সময় হয়নি। মনে করে দেখুন এর আগে যখন আপনারা ক্ষমতায় ছিলেন, তখনই গুম-খুন হয়েছে। সিরাজ শিকদারকে কারা খুন করেছিল?’
র্যাবকে অপরাধী ধরার জন্য তৈরি করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন র্যাব সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাদেরকে দলীয় কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব কাজে একটি বিশেষ জায়গার পুলিশ ব্যবহার হচ্ছে।’
বিশেষ জায়গার পুলিশ সদস্যদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনাদের প্রতি আমাদের নজর আছে। যখন আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নেবে তখন আপনারা কোথায় যাবেন? আপনাদেরকে প্রতিটি অপকর্মের জন্য জবাব দিতে হবে।’
গণঅনশন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে প্রেসক্লাবের সামনে জলকামান মোতায়েনের সমালোচনা করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলকামান এখানে চলবে না। জনগণ যখন আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবে তখন জলকামান ঘুরে অন্যদিকে রওনা দেবে। গুলি করে মানুষ হত্যা করে আন্দোলন দমানো যাবে না।’ আওয়ামী লীগ সরকারের ভরাডুবি হবে বলেই তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে চায় না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
গণঅনশনে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা। অনশনে সংহতি প্রকাশ করেন ও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসূফ, সেলিমা রহমান, প্রফেসর ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক শফিক রেহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ড. ওসমান ফারুক, শামসুজ্জামান দুদু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, যুগ্ম-মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিমুদ্দিন আলম, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ, সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী মনি, রাশেদা বেগম হীরা, রেহেনা আক্তার রানু, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া, শাম্মী আক্তার, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানা, শামীমা আকতার শাম্মী, সাবেক সংসদ সদস্য স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এসএম ওবায়দুল হক নাসির, ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক, সাধারণ সম্পাদক শাহ নেসারুল হকসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কর্মসূচি সঞ্চালনা করেন দলের অর্থনৈতিক ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব সম্পাদক আবদুস সালাম।
দিনব্যাপী চলা গণঅনশন কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে বিকল্পধারার চেয়ারম্যান অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাতীয় পার্টি (একাংশ) চেয়ারম্যান কাজী জাফর, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. ইসাহাক, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশে কল্যাণ পার্টির সৈয়দ ইব্রাহীম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির সভাপতি আব্দুল মবিন, জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমেদ, গণস্বাস্থ্যের ড. জাফরুল্লাহ প্রমুখ সংহতি জানান। রিজিয়া পারভীনসহ কয়েকজন শিল্পী গণঅনশনে সংগীত পরিবেশন করেন। এছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবী নেতারাও এতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।