ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নিবন্ধন বাতিলের পরও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি আপিল বিভাগের নজরে আনা হলে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, অপেক্ষা করুন, আদালতের হাত অনেক লম্বা। আর সময় দেওয়া হবে না। চিন্তা-ভাবনা করেই এ বিষয়ে আদেশ দেব।
হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে নিবন্ধন অবৈধ করার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, সভা-সমাবেশ-মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। পরে শুনানির জন্য আগামী ৬ নভেম্বর দিন ঠিক করেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার তানীয়া আমীর। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অন-রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন।
এদিন সকালে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর আদালতকে জানান, নিবন্ধন বাতিলের পরও জামায়াতে ইসলামী সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছে। আদালতের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। সেই রায় বহাল আছে। কিন্তু রায় বহাল থাকার পরেও জামায়াত সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছে। যা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের লঙ্ঘন। এজন্য শুনানি না হওয়া পর্যন্ত সভা-সমাবেশ যেন না করতে পারে সেজন্য নিষেধাজ্ঞা চাচ্ছি। এ সময় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, অপেক্ষা করুন, আদালতের হাত অনেক লম্বা। আর সময় দেওয়া হবে না। আমরা চিন্তা-ভাবনা করেই আদেশ দেব।
এদিকে, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের পর জামায়াতের সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে বারবার সময় চাওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি।
জামায়াতের অ্যাডভোকেট অন-রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন প্রস্তুতির জন্য সময় চান। এ সময় আদালত বলেন, কেন বারবার সময় নিচ্ছেন। সময় নিয়ে কোর্টে আসেন না কেন? এখানে সময় নেবেন আর অন্য কোর্টে মামলা করবেন তা হতে পারে না। আমরা সবই সিসি ক্যামেরায় দেখতে পাই।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা শেষবারের মতো সময় দিচ্ছি। এটা মনে রাখবেন আদালতের হাত অনেক লম্বা।
পরে তানিয়া আমীর বলেন, আমাদের দুটি আবেদন। একটি নিষেধাজ্ঞার, অপরটি আদালত অবমাননার। আমরা শুনানিতে দাঁড়ানোর আগে জামায়াতের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আট সপ্তাহের সময় চেয়ে আবেদন করেন। তখন আদালত কড়াভাবে বললেন, উনি (এ জে মোহাম্মদ আলী) কী আদালত আছেন? ডিজিটাল যুগে আদালতের সামনে স্ক্রিন আছে। সব জানা যায়। আমরা সময় দিতে প্রস্তুত না। এরপর আমরা জামায়াতের বর্তমান নেতাদের বিবাদী করে যে আবেদন করা হয়েছিল সেটি উপস্থাপন করা হয়। আদালত সেটি মঞ্জুর করেছেন। এরপর ৬ নভেম্বর শুনানির জন্য রেখেছেন।
এর আগে ২৬ জুন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন নিয়ে চলমান মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দলটির মিছিল-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আপিল আদালতে আবেদন করা হয়। তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব মাওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ কয়েকজনের পক্ষে এ আবেদনটি দাখিল করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর।
এ ছাড়া আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সমাবেশ করে রেজিস্ট্রেশন দাবি করায় আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে পৃথক আরেকটি আবেদন করেন মাওলানা রেজাউল হক চাঁদপুরী। এটিও দাখিল করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। ওই আবেদনের শুনানির দিন সামনে রেখে আরও ৪২ জন পক্ষভুক্ত হতে ২৭ জুলাই আবেদন করেন। যারা শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্টজন।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ অন্যান্য নেতা ও ওলামায়ে কেরামের মুক্তি এবং বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজধানীতে সমাবেশ ও মিছিল করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।