নারায়ণগঞ্জের সাম্প্রতিক গুম ও খুনের ঘটনায় অস্বস্তি ও ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে ক্ষমতাসীনরা। এসব ঘটনা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের মধ্যেই আছে শঙ্কা আর উদ্বেগ। এমনকি সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকেও মন্ত্রীরা এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।অবস্থা দৃষ্ঠে মনে হচ্ছে সকল বাহিনী আওয়ামী সরকারের আজ্ঞাবহ থাকা সত্ত্বেও দেশের আইনশৃংখলার উপর সরকারের যেনো কোনো নিয়ন্ত্রনই নেই।
এ ছাড়া, সরকারদলীয় সাংসদ ও নেতারা সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ বিরোধী দল বিএনপির বিভিন্ন সমালোচনার তোপের মুখে পড়ছে সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন নেতাদের এ রকম বক্তব্যে এই চিত্র প্রতীয়মান হয়েছে। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় নির্ধারিত এজেন্ডার বাইরে মন্ত্রীরা নারায়ণগঞ্জের পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনেন। মন্ত্রীরা বলেন, এ রকম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই কঠোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে এতে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে, যা সরকারের বিপক্ষেই যেতে পারে।
সোমবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী আয়োজিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘এই মাল তো আওয়ামী লীগের না। এটা সুবিধাবাদী। সে আগে করেছে জাতীয় পার্টি, পরে বিএনপি, এখন আওয়ামী লীগ করছে। সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছেন, খুনিরা এখনো দেশে আছে। আমি বলব, খুনিরা দেশে আছে না, দেশ ছেড়েছে বা পাতালে গেছে, সেটা বিষয় না। তাদের গ্রেফতার করতেই হবে।’
এদিকে সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির খাজা নিজামুদ্দিন মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু একাডেমির আলোচনা সভায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাংসদ হাজি মো. সেলিম খুন, গুম ও অপহরণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় বিএনপি ও জামায়াত সারা দেশে যেভাবে চোরাগোপ্তা হামলার সূচনা করেছিল, সেটাই এখনো চলছে। এতে আমি আতঙ্কে আছি। ’
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের অন্যতম ওয়ার্কার্স পার্টি সারা দেশে অপহরণ, খুন, গুম ও হত্যার প্রতিবাদে ৮ মে সারা দেশে জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।রোববার নবম কংগ্রেস পরবর্তী পলিটব্যুরোর সভায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রোববার রংপুরের পাগলাপীর, পালিচড়া, লাহিড়ীরহাট ও মমিনপুরের পথসভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশে বর্তমানে অপহরণ, গুম, খুন, হত্যা, সন্ত্রাস বেড়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন। সে সময় তিনি আরো বলেন, ‘এতে দেশের মানুষ চরম ভীত হয়ে পড়েছে। এর আগে কখনো এসব ছিল না। সরকারের উচিত এসব কঠোর হাতে দমন করা। তা না হলে দেশের মানুষ রাজপথে নেমে আসবেই।’
এ ছাড়া, বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সাম্প্রতিক এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি তুলছে।