ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শুক্রবার নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও কানাডা। ১০ই ডিসেম্বর মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার ৭৫তম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে এ তিনটি দেশ সমন্বিত এই পদক্ষেপ নিয়েছে। ১০ই ডিসেম্বরকে বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
এক একটি দেশ ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি বা এনটিটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয় ১৩টি দেশের ৩৭জন ব্যক্তিকে টার্গেট করে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার এই দীর্ঘ তালিকায় আছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় মানবপাচার থেকে শুরু করে আফগানিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তি, হাইতির জনগণকে শোষণকারী গ্যাং নেতারা। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মানবাধিকার ও মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার এই বার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহিতায় আনার জন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে বর্তমানে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিকটিতে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে যুদ্ধ বা সংঘাত সম্পর্কিত যৌন সহিংসতায় জড়িতরা, জোরপূর্বক শ্রমে নিয়োজিত করা ব্যক্তিরা এবং অন্যদেশের মানুষের ওপর নিপীড়নকারীরা।
হায়েনার মতো এসব আচরণের জন্য জবাবদিহিতাকে উৎসাহিত করবে আমাদের পদক্ষেপ।
আমাদের সমর্থন থাকবে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের এবং প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের প্রতি। এর মধ্যে আছেন রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী, নারী, নাগরিক সমাজের নেতা ও কর্মী, এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের মানুষ, মানবাধিকারের পক্ষের কর্মী এবং পরিবেশবাদী। বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, ৪৬ জন ব্যক্তি এবং এনটিটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে লন্ডন। তাদের সম্পদ জব্দ করা হবে। ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। বৃটিশ নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া নিপীড়নকারী শাসকগোষ্ঠী এবং অপরাধীদেরকে আমরা সহ্য করবো না। তিনি আরও বলেন, আমি পরিষ্কার যে, মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার ৭৫ বছর পরেও যারা মানুষের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করবে তাদের পিছনে নিরলসভাবে লেগে থাকবে বৃটেন এবং আমাদের মিত্ররা।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার শুরুর দিনগুলোতে ১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর গৃহীত হয় মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা। ঐতিহাসিক ৩০টি অনুচ্ছেদের ডকুমেন্ট এটি। এতে সব মানুষের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এর আওতায় বৃটেন যাদেরকে টার্গেট করেছে তার মধ্যে আছে বেলারুশের বিচার বিভাগের ১৭ জন সদস্য। তারা অধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় অভিযোগ গঠন করেছেন। বাধ্যতামূলকভাবে নারীদের হিজাব পরার আইন চাপিয়ে দেয়ার অভিযোগে ইরানের ৫ জনের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। অন্যদিকে কম্বোডিয়া, লাওস ও মিয়ানমারের মানুষ পাচারের কারণে ৯ জনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
চেচনিয়াতে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের অধিকার লঙ্ঘনের দায়ে রাশিয়ার চার ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কানাডা। একই সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।