ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, ৭ই জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধ করুন। নির্বাচন বন্ধ করে নতুনভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিন।
দেরিতে হলেও আপনি জেগে উঠেন। মানুষ আপনাকে চিরদিন স্মরণে রাখবে। এই নির্বাচন বন্ধ করেন। সকলের সঙ্গে বসেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তন করেন এবং নতুনভাবে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। কারণ আপনি নির্বাচন করলেও আপনার পক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে না। শুক্রবার রাজধানীর মগবাজার গুলফেশা ভবনে এলডিপি’র কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
অলি আহমদ বলেন, আজকে যে সমস্ত ব্যক্তিরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন তারা বিরোধী দলের কেউ না। তারা হলো আওয়ামী লীগের সমর্থক গোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম।
এগুলো গোয়েন্দা সংস্থার সৃষ্ট রাজনৈতিক দল। এরমধ্যে তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএম। এগুলো হলো আপনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ক্রীতদাস। যাদেরকে আপনি কিনে নিয়েছেন তারাই বর্তমানে নির্বাচনে আছে। তারা প্রত্যেকেই আপনার সমর্থক গোষ্ঠী। সুতরাং এটা কোনো অবস্থাতেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হিসেবে মেনে নেয়া যায় না। আর জনগণের এই নির্বাচনের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নাই।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনার কাছে অনুরোধ করবো, আল্লাহর ওয়াস্তে এই খেলা বন্ধ করেন। এই নির্বাচন বন্ধ করেন, দেশকে দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা করেন, দেশকে গৃহযুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করেন, দেশকে রক্তারক্তির হাত থেকে রক্ষা করেন। আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে আপনার ওপরে দায়িত্ব অনেক বেশি। সেজন্য আজকে আমি মাইকের সামনে এসেছি, ৭ তারিখের আগে আপনি এই নির্বাচনের খেলা বন্ধ করেন। এটা জনগণ ও দেশের কোনো উপকারে আসবে না। আপনি নির্বাচন করলেও আপনার পক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হবে না। কারণ অর্থনীতি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, আপনি কিংবা আপনার সরকারের পক্ষে এই অর্থনীতিকে পুনরায় আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হবে না। আপনার এবং আপনার দলের ওপর জনগণের কোনো আস্থা নেই।
কর্নেল অলি বলেন, শতকরা ৯০ জন লোক আপনাকে (শেখ হাসিনা) এবং আপনার দলকে বদদোয়া করছেন। এই বদদোয়া থেকে বাঁচেন। আর দেশকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিন। দেরিতে হলেও আপনি জেগে উঠেন। মানুষ আপনাকে চিরদিন স্মরণে রাখবে। এই নির্বাচন বন্ধ করেন। সকলের সঙ্গে বসেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তন করেন এবং নতুনভাবে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ৭ই জানুয়ারির যে নির্বাচনের তারিখ ঠিক হয়েছে সেটা বন্ধ করে দেন। নির্বাচন বন্ধ করে নতুনভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দেশকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করুন। জনগণকে বলবো, এটা আপনাদের মৃত্যুর নির্বাচন, ধ্বংসের নির্বাচন, এটা আপনাদের ছেলে-মেয়েদের ধ্বংসের নির্বাচন, বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের ধ্বংসের নির্বাচন। তাই এই নির্বাচন থেকে বিরত থাকেন। কিছু টাকা ও কাজের লোভে নিজেকে বিক্রি করবেন না।
জনগণের উদ্দেশ্যে এলডিপি’র প্রেসিডেন্ট বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের কথায় কান না দেন এবং আমাদের কথা না শোনেন এবং জনগণের মনের কথা যদি তার কানে না যায় তাহলে আমাদের করণীয় কী? কুকুরের মতো জীবনযাপন করলে হবে না। আমাদের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ থাকতে হবে। সেখান থেকে দেশকে বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের সকলের। দেশকে বাঁচানোর পন্থা একটা, সেটা হলো এই নির্বাচন বর্জন করুন। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। কারণ এটা কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না। এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের নির্বাচন।
অলি আহমদ বলেন, আমি কোনো প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা যারা রাজনীতি করি আমাদের মধ্যে একটা সোহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে। অমানুষের মতো রাজনীতি করে বেঁচে থেকে কোনো লাভ নাই। প্রতিনিয়তই বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা সাজা দিয়ে জেলে ঢোকানো হচ্ছে। আত্মপক্ষ সমর্থনে তাদের কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে যে নিপীড়ন, নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা হয়েছে তা ১০০ বছরেও বাংলাদেশে এগুলো হয় নাই। ২০১৪ সালের আগে গায়েবি মামলায় কোনো হদিস ছিল না। এরপর থেকে আমরা দেখেছি, কোনো ব্যক্তি ঢাকায় অবস্থান করছেন, নিজ এলাকায় যাননি। কিন্তু এলাকাতে গায়েবি মামলার আসামি! এ ছাড়া প্রত্যেকটি মামলাতে বলা হয়, অজ্ঞাতনামা আরও ১০০ জন। সুতরাং যাকে যখন যেখানে পায় তাকে ডুকিয়ে দেয়া হয়। আর নতুন আরেকটি সিস্টেম শুরু হয়েছে, এটা হলো-প্রতিনিয়ত বিরোধী দলের নেতারা জামিন নেয়ার জন্য কোর্টে যান। যখন জামিন নিয়ে ফেরেন তখন তাদেরকে আবার ধরে নেয়া হয়। একটা বিশাল অঙ্কের টাকা নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।