DMCA.com Protection Status
title="৭

সেভেন মার্ডারঃগনমাধ্যমের স্বার্থপর আচরনঃগনমাধ্যমের পাটিগণিত: ৭-৫= ২

image_90039_0 দৈনিক  প্রথম বাংলাদেশ অনুসন্ধানঃ   নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ চাঞ্চল্যকর সাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুই পরিবার নিয়ে গণমাধ্যমে তোলপাড় হলেও বাকিদের খোঁজ রাখছে না কেউ। তাদের স্বজনদের আহাজারি, আর্তনাদ শোনার কেউ নেই।



ওইসব পরিবারের সদ্যসদের অভিযোগ- দেশের গণমাধ্যম থেকে শুরু করে প্রশাসন ও সরকারের উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সবাই সাত হত্যাকাণ্ডের কথা বললেও শুধু নজরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার ও তাদের পরিবার নিয়ে সবাই কথা বলছে। বাকিদের খবর কেউ রাখছে না। এসব পরিবারকে সমবেদনা জানাতেও কেউ আসেনি।



উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল অপহরণের সময় সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার গাড়িতে ছিলেন তার গাড়িচালক জাহাঙ্গীর, তিন সহকারী তাজুল ইসলাম, স্বপন ও লিটন। এর একটু পরেই আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিমকে অপহরণ করা হয়।



আক্ষেপ প্রকাশ করে হত্যাকাণ্ডের শিকার লিটনের ছোট ভাই মিন্টু দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘মিডিয়াসহ সকল পর্যায়ে এই সাত হত্যাকাণ্ডে নজরুল ও চন্দন সরকার ছাড়া বাকিদের কথা কেউ বলছে না। প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদেরা সবাই তাদের দুজনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিচারের আশ্বাস দিচ্ছেন। অথচ আমাদের পরিবারগুলোতে এখন পর্যন্ত কেউ সমবেদনা জানাতেও আসেনি শুধুমাত্র মেয়র আইভী ছাড়া।’



মিন্টু আরো বলেন, ‘নজরুল ও চন্দন সরকারের পরিবারের সদস্যরা যেমন স্বজন হারিয়েছে আমরাও আমাদের স্বজন হারিয়েছি। আমার ভাই লিটন তেমন কোনো বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা ঠিকাদার ছিল না। তার কোনো শত্রুও ছিল না। তার অপরাধ সে নজরুলের গাড়িতে ছিল।’



প্রশাসনের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বিচারের ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে অপহরণের ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাদের হত্যা করা হয়েছে। অপহরণের পরপরই যদি প্রশাসন তৎপর হতো তাহলে তাদের জীবিত পেতাম আমরা। আমার বাবা বৃদ্ধ মানুষ। বৃদ্ধ বয়সে ছেলের খুনীদের বিচার পেতে তিনি আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রেখেছে।’



হত্যাকাণ্ডের শিকার মনিরুজ্জামান স্বপনের ভাই রিপন দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে  বলেন, ‘শুধুমাত্র মেয়র আইভী আমাদের বাসায় এসেছিলেন। এছাড়াও কেউ আর আমাদের কোনো খরব রাখেনি। আমরাও তো মানুষ, তাদের মতো আমরাও স্বজন হারিয়েছি। আমাদের প্রতি কেউ মানবতা দেখাতে আসেনি।’



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে রিপন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীও এতিম, উনারাও দুই বোন। আমার ভাতিজীরাও এতিম হয়েছে তারাও দুই বোন। প্রধানমন্ত্রী এতিমের দুঃখ বোঝেন। তিনি যেমন তার বাবার হত্যার বিচার করেছেন তেমনি যদি মনে করেন তাহলে আমার ভাতিজীরাও তার বাবার হত্যার বিচার পাবে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই আবেদনটুকু রাখতে চাই। আমার এতিম ভাতিজীদের প্রতি তিনি যেন একটু সুদৃষ্টি দেন।’



অপহরণের দিন নজরুলের প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিল মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়ি চালক জাহাঙ্গীর। নিহত জাহাঙ্গীরের বড় ভাই আলমগীর দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে মেয়র আইভী এসেছিলেন। আমরা গরীব মানুষ। এতো কিছু জানি না। শুধুমাত্র এইটুকু বলতে চাই আমার ভাইয়ের কোনো অপরাধ ছিল না। আমরা আমাদের ভাইয়ের খুনীদের বিচার চাই।’



নিহত তাজুল ইসলামের ছোট ভাই রাজু দৈনিক প্রথম বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার ভাই তো জনপ্রিয় কেউ ছিল না। তাছাড়া সে জনপ্রিয় কোনো রাজনীতিবিদও ছিল না। প্যানেল মেয়র নজরুল ভাই ও অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার ছিল জনপ্রিয় মানুষ তাই তাদের কথা সবাই বললেও আমাদের কথা বলার কেউ প্রয়োজন মনে করে না। যদি প্রয়োজন মনে করতো তাহলে আমাদের কাছে আসতো।’



রাজু আক্ষেপ করে আরো বলেন, ‘মিডিয়ার অনেক লোক আমাদের বাড়িতে এসেছিল। কিন্তু নজরুল ভাই ও চন্দন সরকারের পরিবারের কথা প্রকাশ করলেও আমাদের পরিবারের কথা প্রকাশ করেনি। আমরা কী অবস্থায় আছি তা কেউ লেখেনি। আমরা আমাদের ভাই হত্যার বিচার আল্লাহর কাছে দিয়ে রেখেছি। আল্লাহ নিশ্চিত বিচার করবে। সেটা এই দুনিয়াতে হোক আর পরোপারে হোক।’



নিহতদের স্বজনদের আক্ষেপের সুরেই বলতে হয়- গণমাধ্যমে নজরুল গুরুত্ব পাচ্ছেন কারণ তার একটা রাজনৈতিক ভিত্তি রয়েছে, চন্দন সরকার গুরুত্ব পাচ্ছেন কারণ তিনি একটা প্রভাবশালী কমিউনিটির সদস্য। তাদের খুনের প্রতিবাদে রাস্তায় নামছে মানুষ, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, রাস্তা অবরোধ, কর্মবিরতি চলছে। কিন্তু বাকি পাঁচ জন সাধারণ মানুষ। তারা সামান্য চাকরি করে খেতেন। তাদের হত্যার বিচার চেয়ে কেউ রাস্তায়ও নামবে না। তারা কোনো কমিউনিটিরও সদস্য নন।



এসব কারণেই কি গণমাধ্যম সাধারণ কাতারে পড়া পাঁচ জনকে গুরুত্ব দিচ্ছে না? দেশে তো ইদানীং গুম, অপহরণ, হত্যা, বিচার বহির্ভুত হত্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু গণমাধ্যমে গুরুত্ব পাচ্ছে তথাকথিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। তাহলে কি বলা যায় যে, সাধারণ মানুষ খুনের বিষয়টি ‘সাধারণ’ করে ফেলার পেছনে গণমাধ্যমই প্রধান ভূমিকা রাখছে?

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!