DMCA.com Protection Status
title="৭

ফের ভাঙছে জাতীয় পার্টি!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  ফের ভাঙছে জাতীয় পার্টি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে দলটিতে তৈরি হওয়া বিভক্তির জেরে দলটির অনেক নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। তারা চাইছেন দলটির বর্তমান নেতৃত্বের পদত্যাগ। এজন্য আলটিমেটামও দেয়া হয়েছিল। আলটিমেটাম শেষ হওয়ায় এখন তারা নিজেরাই নেতৃত্ব অপসারণ এবং নতুন নেতৃত্ব তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছেন। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে আজ নেতাকর্মীরা সভা আহ্বান করেছেন। এতে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশপাশি সারা দেশ থেকে নেতারা আসবেন। পাশাপাশি নির্বাচনে পরাজিত দলীয় প্রার্থীরাও সভায় অংশ নেবেন। রাজধানীর একটি মিলনায়তনে এই সভা হওয়ার কথা রয়েছে।

জাতীয় নির্বাচনের পর বুধবার এমপিদের শপথ নেয়ার দিন দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। তারা দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর পদত্যাগে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।

যদিও এই সময়ের মধ্যে শীর্ষ দুই নেতা পদত্যাগ করেননি; বরং ওই সময়ের মধ্যে দলের কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়কে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এমন শাস্তির মুখে পড়তে পারেন দলের আরও বেশ কয়েকজন নেতা। তবে বহিষ্কার হওয়া বা দলটির নেতৃত্বের বিরোধিতাকারী নেতারা বলছেন, জিএম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুর কোনো ক্ষমতা নেই। তাদের বাইরে থেকে চালানো হচ্ছে। তাই তারা নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। দলের নতুন নেতৃত্বে দলীয় কোনো সংসদ সদস্যকে রাখা হবে না বলে সূত্র জানিয়েছে।
ওদিকে আজকের বৈঠকে অংশ নেয়ার জন্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন ঢাকা-৪ আসন থেকে নির্বাচন করা কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। এই সভা সফল করতে শনিবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইল পার্টি অফিসে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন দলের সিনিয়র তিন নেতাসহ বেশ কয়েকজন।

একজন নেতা বলেন, আমরা বৈঠকটা সফল করতে কিছুটা গোপনীয়তা অবলম্বন করছি। তারা চাইছেন এই বৈঠকে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থী ও নেতাকর্মী উপস্থিত থাকুক। তারা তাদের ক্ষোভের কথা তুলে ধরুক। এই বৈঠকের পরিবেশ ও তথ্যের ওপর তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন।
তবে এই সভায় যোগ না দিতে জাতীয় পার্টির দপ্তর থেকে বলা হয়েছে। জাতীয় পার্টির বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া হয় সতর্ক বার্তা।
সভার উদ্যোক্তা নেতারা বলছেন, কার্যনির্বাহী সভায় সবার মতামত নেয়া হলো। আমরা বললাম আওয়ামী লীগের এই নির্বাচনে যাবো না। তারা কেন গেল এই নির্বাচনে?

জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদপন্থি একজন নেতা বলেন, তারা নিজেদের (চেয়ারম্যান-মহাসচিব) ধরাকে সরা জ্ঞান করতে চাইছে। চেয়ারম্যান ও মহাসচিব দলটাকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করছেন। তারা না পারলো সমঝোতায় লাভবান হতে না পারলো নির্বাচনে আশানুরূপ ফল পেতে। আমরা আগে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিলাম আর আমাদেরকেই আউট করে দেয়া হলো। এখন চেয়ারম্যান-মহাসচিবের ঘনিষ্ঠজনরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, পরামর্শ চাইছেন। রোববারের বৈঠকের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। এখন শুধুই অপেক্ষা। এই দলটাকে টিকিয়ে রাখতে চাইলে কাউন্সিল করে হোক কিংবা না করে পরিবর্তন প্রয়োজন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিতে এই পরিবর্তনের ডাক ইতিবাচক। এই পরিবর্তনের ডাকে যদি ইতিবাচক ফল আসে তবে দল বাঁচবে না হয় মরবে। এখন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র শক্তিশালী তারা জাতীয় পার্টিকে গুনবে কেন?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নেতা বলেন, দলের মধ্যে একটা দলাদলি চলছে। এগুলো নিয়ে আমাদের চেয়ারম্যানের কোনো মাথাব্যথা নাই। এখন তিনি অপেক্ষায় আছেন ওনার (চেয়ারম্যানের স্ত্রী) জন্য সংরক্ষিত আসনে একটা সিট। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এই একজনের জন্য আর কতো নিচে নামাবেন দলকে?

বরিশাল-২ ও ৫ আসন থেকে লাঙ্গল পেয়েছিলেন চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ইকবাল হোসেন তাপস। নির্বাচনের পূর্বেই সরে দাঁড়ানো এই নেতা বলেন, তাদের তো তৃণমূলের সঙ্গে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নাই। তারা দলটাকে তামাশার দলে পরিণত করেছেন।
সদ্য বহিষ্কার হওয়া জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আমার রাজনীতি ছাড়াও অনেক কাজ আছে। এটাই আমার একমাত্র প্রফেশন নয়। তারা যেটা ভালো মনে করেছে, করেছে। এটাতে আমার কোনো প্রতিক্রিয়া নাই। সভা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, এই বৈঠক কারও বিপক্ষে নয়। সারা দেশের নেতাদের মন ভেঙে গেছে তাদের ওপর ক্ষোভ আছে। এই ক্ষোভের কথা জানাতেই এই আয়োজন।

দলটির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু গতকাল গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে একজন কো-চেয়ারম্যান ও একজন প্রেসিডিয়াম মেম্বারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের দেয়া ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম হাস্যকর ও অযৌক্তিক। কার্যালয়ের সামনে তাদের বিক্ষোভ মন থেকে নয়, রাগ- ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তাদের রাগ-ক্ষোভ যৌক্তিক, কিন্তু তারা যেভাবে তা প্রকাশ করেছেন তা অযৌক্তিক। বহিষ্কৃতদের

আচরণ নমনীয় হলে, দলের চেয়ারম্যান চাইলে, তাদেরকে আবার ফেরাতে পারবেন।
রোববারের সভার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি জাতীয় পার্টির কোনো সভা নয়।  কিন্তু তারা কেন ডেকেছেন দেখি কী বলা হয়। সভার পরই এই বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমন তো হতে পারে তারা বলছেন, সেদিনের বিক্ষোভ ঠিক হয় নাই।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!