DMCA.com Protection Status
title="৭

শহীদ চেয়ারম্যানের যতকথা: ব্যাংকে লেনদেন এবং অন্যান্য অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে

Shahid Chairman১১ দিনেও কূল-কিনারা হয়নি নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারের ঘটনার। ঘটনার পর থেকে কাউন্সিলর নজরুলের শ্বশুর হাজী শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান যা বলেছেন সবই আমলে নিয়ে কাজ করছে তদন্ত টিমগুলো। প্রথমদিকে শহীদ চেয়ারম্যান নির্মোহভাবে কথাবার্তা বললেও কয়েকদিন ধরে তিনি একজন গডফাদারের শিখিয়ে দেয়া বুলিও আওড়াচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে অবসরে পাঠানো র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখেছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। শহীদ চেয়ারম্যান লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদের ব্যাংক লেনদেনের যে তথ্য দিয়েছেন এখানেও তার প্রমাণ পায়নি সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, ঘটনার রহস্য প্রায় উন্মোচন হয়ে গেছে। সত্যকে বের করার কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। আশা করছি, শিঘ্রই আশাবাদী হওয়ার মতো তথ্য জানাতে পারব। নূর হোসেন খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে।

এর পিছনে কোনও গডফাদার থাকলে তিনিও পার পাবেন না। আইন প্রয়োগকারী কোনো সংস্থার সদস্য জড়িত থাকলেও ছাড় দেয়া হবে না। র‌্যাব ডিজি মোখলেসুর রহমান  বলেন, কেবল র‌্যাব নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি তদন্ত টিম কাজ করছে। তদন্ত টিমগুলোকে স্বাধীন এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তদন্ত টিমগুলোর সদস্যকে কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে না। আমার একমাত্র চাওয়া— সত্য ও ন্যয় বের হোক।

ঘটনার পর থেকেই শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করছেন, ছয় কোটি টাকা নিয়ে র‌্যাবের সিও এবং দুই মেজর ওই সাতজনকে অপহরণের পর পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। টাকা ভাগাভাগি করেছে নারায়ণগঞ্জের র‌্যাব-১১ অধিনায়ক তারেক সাঈদ, মেজর জাহাঙ্গীর, মেজর রানা ও মেজর আরিফ এবং নারায়ণগঞ্জের সাবেক এসপি সৈয়দ নূরুল ইসলাম। এরইমধ্যে নূর হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে রক্তমাখা মাইক্রোবাস উদ্ধার ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। শহীদ চেয়ারম্যান জানান, নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণের পর পরিকল্পিতভাবে হত্যায় মেয়র সেলিনা হায়াত্ আইভী, নূর হোসেন এবং পুলিশ-র‌্যাবের কিছু সদস্য দায়ী।

আমার ভাই হাসমত আলী হাসুর অ্যাকাউন্ট থেকে দুই কোটি টাকা এক কর্মকর্তার কাছে পৌঁছানো হয়েছে। নূর হোসেনের সব টাকা হাসুর কাছে। আর বাকি চার কোটি টাকা নূর হোসেন, ইকবাল ও হাজী ইয়াসিনের মাধ্যমে তাদের কাছে পৌঁছানো হয়েছে। হাজী শহীদ বলেন, ঘটনার দিন ২৭ এপ্রিল বেলা পৌনে ২টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। ওইখানে কিছু শ্রমিক বালুর কাজ করছিলেন। তারা বলেছেন, র‌্যাব-১১ লেখা একটি গাড়ি তাদের তুলে নিয়ে গেছে। পরে আমি র‌্যাব-১১-এর কাছে যাই। র‌্যাব দেখা না করতে চাইলে বেলা সোয়া ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জ পুরাতন কোর্ট র‌্যাব-১১-এর কার্যালয় ঘেরাও করি। পরে আমার সঙ্গে থাকা ৪-৫ জনকে ভিতরে নিয়ে সব মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ও সেগুলো বন্ধ করে দেয়।

শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদের নামে খারাপ ব্যবহার। টানা ৬ ঘণ্টা আমাদের সেখানে আটকে রাখা হয়। মঙ্গলবার একটি জাতীয় দৈনিক জানায়, চাঞ্চল্যকর সেভেন মার্ডার মামলাটি মামা-ভাগ্নের কবলে পড়েছে। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল আউয়াল মামলার প্রধান আসামি পলাতক নূর হোসেনকে ‘মামা’ বলে সম্বোধন করতেন। সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত থাকাকালে নূর হোসেনের কার্যালয়ে ডিবির এ কর্মকর্তার অবাধ যাতায়াতের খবর সিদ্ধিরগঞ্জের প্রায় সবারই জানা।

নিহত নজরুলের শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের জানান, নূর হোসেন ও তদন্ত কর্মকর্তার সম্পর্ক এলাকার সবাই জানে। এমন একজনকে দিয়ে তদন্ত কাজ চালানো ঠিক হবে কি না তা ভেবে দেখা দরকার। অভিযোগ রয়েছে— পরিদর্শক আউয়ালকে চাঁদা না দেয়ার পর তার হুমকিতে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান সিদ্ধিরগঞ্জের তেল ব্যবসায়ী রহিম বাদশা। এ ছাড়া সোনারগাঁওয়ের ফোর মার্ডার, ডিবির কনস্টেবল মফিজ হত্যাকাণ্ড, সিদ্ধিরগঞ্জে হেফাজতের তাণ্ডবে বিজিবি হত্যা মামলার তদন্তভার ন্যস্ত ছিল ডিবির এই কর্মকর্তার ওপর। গুরুত্বপূর্ণ এসব মামলায় বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। এমনকি চাঞ্চল্যকর ত্বকী হত্যায় রিফাত বিন ওসমানকে আটকের পর এই কর্মকর্তা প্রায় নয়দিন তাকে ডিবি অফিসে আটক রেখে নির্মম নির্যাতন করেছেন।

ত্বকী হত্যায় একটি পক্ষের হয়ে কাজ করে অন্য পক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে রিফাতকে তিনি ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে পেটান ও মুখে পিস্তলের নল ঢুকিয়ে দেন। গত ৬ মে অপর একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ক্যাম্পে গিয়ে র‌্যাব-১১ অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেকের পা জড়িয়ে ধরে শহীদ চেয়ারম্যান বলেছিলেন, দুই কোটি টাকা দেব, নজরুলকে ভিক্ষা দেন। ব্যাব-১১-এর অধিনায়ক বললেন, আমার কাছে এসেছেন কেন? শামীম ওসমানের কাছে যান। সে-ই আপনার জামাইকে গুম করেছে। শহীদ চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বলেন, আমি যখন পাগলের মতো নজরুলকে খুঁজে বেড়াচ্ছি তখন আমার কাছে একটা ফোন আসে।

ফোনটি করেছিল হাসমত আলী হাসুর বন্ধু জসিম। জসিম ফোনে বলেছিল, নূর হোসেন র‌্যাবকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে নজরুলকে অপহরণ করিয়েছে। শহীদ চেয়ারম্যান বলেন, ঘটনার পরপরই এমপি শামীম ওসমানকে ফোন করে এ বিষয়টি জানাই। তখন শামীম ওসমান বলেন, তার কথা প্রশাসন শুনছে না। শামীম ওসমান তখনই আবদুল মালেক নামের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তাকে ফোন করে বিষয়টি জানান।

এর কিছুক্ষণ পরই ‘কথা আছে’ বলে র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ আমাকে ফোন করে র‌্যাবের ক্যাম্পে যেতে বলেন। এরপর পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে র‌্যাবের ক্যাম্পে যাই। ক্যাম্পে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সবার মোবাইল ফোন কেড়ে নেন র‌্যাব সদস্যরা। র‌্যাবের কয়েক অফিসার আমাদের সঙ্গে ফাও প্যাচাল শরু করে। একবার ধমক দেয়। আরেকবার গ্রেপ্তারের হুমকি দেয়। কয়েক ঘণ্টা পর কর্নেল তারেক দেখা দেন। দেখা হওয়ার পর তিনি আমাকে ও এমপি শামীম ওসমানকে গালি দিতে শুরু করেন। হত্যাকাণ্ডের পিছনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দীনের জড়িত থাকার অভিযোগ করে শহীদ চেয়ারম্যান বলেন, অপহরণের পরদিন গিয়াসের লোকজন ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে নজরুলের মালিকানাধীন মার্কেট দখল করে নেয়। শহীদ বলেন, এর আগে এ মার্কেট দখলের জন্য সন্ত্রাসীদের দুই কোটি টাকা দিতে চেয়েছিল গিয়াস। নজরুল অপহরণের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সে মার্কেটটি দখল করে নিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই। তাকে সব খুলে বলতে চাই। শহীদ চেয়ারম্যানের দাবি— নূর হোসেন পালিয়ে যায়নি। সে ঢাকায় এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর ছেলের শেল্টারে আছে। ওই মন্ত্রীর ছেলের সঙ্গে যৌথভাবে নূর হোসেন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ চার লেন রাস্তা নির্মাণের সামগ্রী সরবরাহ করছে। এদিকে অপহরণ ও খুনের নেপথ্যে ছয় কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগটির তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রধান সন্দেহভাজন ও টাকা গ্রহীতা হিসেবে তিন র‌্যাব কর্মকর্তা, প্রভাবশালী এক মন্ত্রীপুত্র ও নূর হোসেনকে টার্গেট করেই এগোচ্ছে টাকা লেনদেনের তদন্ত কার্যক্রম। পর্যায়ক্রমে র‌্যাব কর্মকর্তাদের স্ত্রী ও তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা হিসাব নম্বর তদন্ত করে দেখা হবে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না— মর্মে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর সন্দেহভাজন সবার দিকেই গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করা হয়েছে। অন্যদিকে মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে গ্রেপ্তারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার গাফিলতির দিকে ইঙ্গিত করেছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, সীমান্তসহ সবকটি বন্দরে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। অথচ নূর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। তাহলে নূর হোসেন কি হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন? নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি জানান, প্রশাসনের লোকজন জড়িত না থাকলে নূর হোসেন ও তার সহযোগীদের পক্ষে এত বড় ঘটনা ঘটানো সম্ভব হতো না। নূর হোসেন ও তার সহযোগীরা গ্রেপ্তার না হলে সিদ্ধিরগঞ্জে কেউ নিরাপদ নয়। আমার স্বামীর লাশ পাওয়ার পর দুদিন হুমকি এসেছিল।

এখন হুমকি না এলেও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া-আসা বন্ধ করে দিয়েছি। মামলার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত ওদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছি। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে একেকজন একেক কথা বলছেন। এসব বলে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা চলছে। শহীদ চেয়ারম্যান জানান, প্রতিদিন মোবাইল ফোনে হুমকি পাই। ওই নম্বরগুলো দেখা যায় না। হেরা কয়, ‘র‌্যাব নিয়ে কথা বললে পরিবারের আরও লোকরে কিন্তু হারাইবি।

তোরে ক্রসফায়ারে নিমু।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ডিআইজিরে (গোলাম ফারুক খান) কইছি, এখনো ফতুল্লার ওসি আক্তার ও সিদ্ধিরগঞ্জের ওসি আবদুল মতিনরে থানায় দেখতাছি। হেরা প্রত্যাহার হওয়ার পরও থাকে কীভাবে? তারা তো অভিযানের আগেই খবর দিয়া দেয়। তাদের এ মুহূর্তে প্রত্যাহার করেন।’ তিনি বলেন, প্রশাসন নূর হোসেনের কথায় চলত। নূর হোসেন তার অবৈধ যাত্রাপালা, মেলা, ফেনসিডিল, হেরোইন, নারী ব্যবসা, চুন ফ্যাক্টরি, অটোরিকশা ও কাঁচপুরে বাস থেকে প্রতিদিন ৫০ লাখ টাকা আয় হতো। এর ভাগ প্রশাসনও পেত।

তিনি বলেন, আড়াইহাজারে শামীম ওসমানকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভামঞ্চে থাকতে দেয়া হয়নি। কত টাকা আর কত ক্ষমতাবান হলে নূর হোসেন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সময় তার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকে? তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কত টাকার মালিক বলে তাকে এতগুলো অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হলো? সেই অস্ত্র দিয়েই তো সে শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, সারাদেশে দাপট দেখিয়েছে। মুন্সীগঞ্জে মৃৃণালকান্তির নির্বাচনে নূর হোসেনের লোক গিয়ে নির্বাচন করে। সেখানে গুলিতে মারা যান এক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, অপহরণের ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে শামীম ওসমান নূর হোসেনকে ক্লাবে ডেকে বলেছিলেন— নূর হোসেন তুই নজরুলকে ফিরিয়ে দে। তখন নূর হোসেন শামীম ওসমানের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে।

নাসিক মেয়র সেলিনা হায়াত্ আইভী জানান, অপহরণের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের এক গডফাদার জড়িত। র‌্যাবকে ইঙ্গিত করে শামীম ওসমান অভিযোগ করেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু কোনো সদস্য অপহরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন। শহীদুল ইসলাম শহীদ জানান, র‌্যাবের সিও তারেক ও দুই কর্মকর্তাসহ ১৩ জনের নামে মামলা করতে চেয়েছিলাম। ফতুল্লা থানার ওসি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের আসামি করলে অনুমতি লাগবে। এর পর বিষয়টি এসপিকে জানাই। এসপি উত্তরে বলেন, ওসির নির্দেশমতো কাজ করেন। পুলিশের চাপে তিন সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শাহজাহান, সেলিম, নূরউদ্দিন (নূর হোসেনের ভাই), হাসানকে আসামি করতে পারেননি। এ ছাড়া সন্দেহের তালিকায় থাকা জামাল উদ্দিন, আলিম, মোহাম্মদ সানাউল্লাহর নাম এজাহারে রাখা যায়নি।

শহীদ চেয়ারম্যান জানান, ২০০০ সাল থেকে নজরুলের সঙ্গে নূর হোসেনের বিরোধ। নজরুলকে কয়েকবার হত্যার চেষ্টা চালিয়ে সে ব্যর্থ হয়। তাদের দফায় দফায় হামলায় নজরুলের বন্ধু আব্দুল মতিন ও রিকশাচালক শুকুর আলী নিহত হন। বেঁচে যান নজরুল। আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা ও এক উপদেষ্টার সঙ্গে নূর হোসেনের আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক রয়েছে। তাদের ছত্রছায়ায় নূর হোসেন দোর্দণ্ড প্রতাপে চলত। এর আগে হত্যার হুমকি পেয়ে নজরুল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করতে যান।

গত ৫ মে ইত্তেফাকের খবরে বলা হয়েছে, গত ২৪ এপ্রিল হত্যা মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন কাঁচপুর ব্রিজের দক্ষিণ পাশে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর তৈরি তার ‘জল সাগর’ নামের প্রমোদ ঘরে বসে নজরুলকে হত্যার বিষয়টি চূড়ান্ত করে। সেখানে কিলার ও পরিকল্পনাকারীরা উপস্থিত ছিল। নজরুলকে অপহরণ করার সঙ্গে সঙ্গে তার সঙ্গে থাকা দলীয় কর্মী, গাড়িচালককেও অপহরণ করা হয়। আর এগুলো দেখে ফেলায় আইনজীবী চন্দন সরকারকেও তুলে নেয়া হয়— যাতে এ ঘটনার কোনো সাক্ষী-প্রমাণ না থাকে। নজরুলকে অপহরণের পর হত্যার বিষয়টি যাতে ধামাচাপা পড়ে সেজন্য বাকি ৬ জনকেও হত্যা করা হয়। গত ৫ মে একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের মধ্যে বিদেশে পালিয়ে গেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়া ও আমিনুল হক রাজু। প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় নূর হোসেনও পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। অন্য আসামিরাও গা-ঢাকা দিয়েছে। শহীদ চেয়ারম্যান জানান, র‌্যাব-১১-র ভিতরে নিয়ে মারা হয়েছে ওদের।

ওইদিন মানবজমিনে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, অপহরণের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেয়া পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অপহৃতদের জীবিত উদ্ধারে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পরও নিহতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ আমলে নেয়নি পুলিশ। এ কারণে এজাহারভুক্ত আসামিরাও পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সাতদিন পর এজাহারভুক্ত আসামিদের বাড়িতে পুলিশের তল্লাশিকে সবাই বলছে ‘আইওয়াশ’।

সাতজনকে ধরে নেয়ার দৃশ্য অনেকেই দেখেছেন। তবে ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। ঘটনার পরপরই পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানতে পারে, নজরুলসহ অন্যদের সরকারের একটি বিশেষ বাহিনী আটক করেছে। এ কারণে উদ্ধারেও তেমন তত্পরতা দেখাননি তারা। তিনদিন পর তাদের লাশ উদ্ধার হলে টনক নড়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের; কিন্তু তখন তাদের কিছুই করার ছিল না। নূর হোসেনের নিজের মালিকানাধীন তিনটি মাইক্রোবাস ও চারটি প্রাইভেট কার রয়েছে। অন্য গাড়িগুলো সরিয়ে রেখে কথিত রক্তমাখা মাইক্রোবাসটি কেন বাসায় রাখতে যাবে? মূল অভিযুক্ত নূর হোসেন প্রথম তিনদিন এলাকায় অবস্থান করলেও তাকে ধরতে অভিযান চালায়নি পুলিশ। লাশ উদ্ধারের দিন নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে আত্মগোপনে চলে যায়।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!