DMCA.com Protection Status
title="৭

নির্বাচনের পর প্রায় সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ জাতীয় নির্বাচনের পর বাজারে স্বস্তি ফেরার আশা করলেও উল্টো বেশির ভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এরমধ্যে বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে।

বাজারে গত কয়েকদিনে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে, কেজিপ্রতি যা বেড়েছে ৬ টাকা পর্যন্ত। আবার ভোটের আগে যে গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজিতে নেমেছিল, তা এখন ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে আটা-ময়দা ও ডালের দাম একলাফে কেজিতে ১০ টাকা ও তেলের দাম লিটারপ্রতি ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে প্রায় সব ধরনের শাক-সবজি, মাছ, ব্রয়লার মুরগি, ফার্মের ডিম, আদা-রসুনসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যও। নিত্যপণ্যের হঠাৎ দাম বৃদ্ধিতে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে ক্রেতাদের মাঝে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনের পর থেকে চালের বাজার উত্তপ্ত। কেজিপ্রতি ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যদিও গত মাসে রেকর্ড পরিমাণে আমন ধান উৎপাদন হয়েছে, তাতে বাজারে সরবরাহেও কোনো টান নেই। তারপরও উৎপাদন এলাকা থেকে রাজধানীর সব জায়গায় বেড়েছে চালের দাম।

সেগুনবাগিচা বাজারে সরু মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৪ টাকা দরে, যা সপ্তাহ দুয়েক আগে ছিল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে সর্বোচ্চ ৬ টাকা বেড়েছে।

মাঝারি (বিআর-২৮, পায়জাম) চালের কেজিতে সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা। এ ছাড়া কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে সরু চালের দাম ৫.৩৮, মাঝারি চাল প্রায় ৩ এবং মোট চালের দাম প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে।
হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে তদারকি শুরু করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার ঢাকার যাত্রাবাড়ী, মালিবাগ, খিলগাঁও তালতলা বাজার ও ঠাটারীবাজারে অভিযান চালায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিম।
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. লুৎফর রহমান বলেন, চালের বাজারে আমরা বিশৃঙ্খলা পেয়েছি। কম দামে আগের কেনা চাল বাড়তি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। প্রথমবার তদারকি করে আমরা ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছি। পরে অনিয়ম পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নির্বাচনের আগে গরুর মাংসের বেঁধে দেয়া দাম ছিল ৬৫০ টাকা কেজি। ভোটের পরে তা এক দফা বেড়ে ৭০০ টাকা হয়। এখন ঢাকা শহরের অধিকাংশ বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। সেগুনবাগিচা বাজারের মাংস বিক্রেতা খোকন বলেন, আমরাও ভোটের আগে ৬৫০ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি করেছি। পরে ৭০০ করেছি। এখন গরুর দাম বেশি। ওই দামে বিক্রি করে লাভ হয় না। গত দুদিন থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।

ভোজ্য তেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন ভোজ্য তেলের দাম বাড়িয়েছে। বাজারে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৭৩ টাকা করা হয়েছে, যা ভোটের আগে বিক্রি হয়েছে ১৬৯ টাকায়। ৫ লিটারের বোতলের দাম ৮২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৪৫ টাকা করা হয়েছে।
একইসঙ্গে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা ও ময়দার দাম ১০ টাকা এবং চিনির দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটের আটার দাম এখন ৬৫ টাকা। ময়দার দাম বেড়েছে হয়েছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা।

প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি বাজারে ১৪৮ টাকা মূল্য থাকলেও বিক্রেতারা সেটা খুলে বিক্রি করছেন ১৫০-১৬০ টাকায়।
অন্যদিকে মুদি বাজারে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে অ্যাংকর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। বেড়েছে মসুর ডালের দামও। প্রতি কেজি ভালোমানের মসুর ডাল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা আগের থেকে ১০ টাকা বেশি।
মাছের বাজারও বেশ চড়া। মাছ বিক্রেতা আবু হোসেন বলেন, বিভিন্ন পদের মাছের দাম কেজিতে ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

ফার্মের মুরগির ডিমের দামও প্রতি ডজনে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। গত সপ্তাহে হুট করেই ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২২৫ টাকা। যা গত মাসে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকার মধ্যে ছিল। সোনালি জাতের মুরগির দামও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায়।
পেঁপে, মুলা ও শালগম ছাড়া প্রায় সব ধরনের সবজি কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ৪০ থেকে আকারভেদে ৬০ টাকা পর্যন্ত। ভরপুর শীতে বাজারে শিমের দামও চড়া; প্রতি কেজি ৮০ টাকা। আর মাঝারি আকারের একটি লাউয়ের দাম ৮০ টাকা, বড় হলে ১০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। দেশি পিয়াজের কেজি ৮০ টাকা। একইসঙ্গে রসুনের দাম ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং আদার দাম ২ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়েছে। বাজারে এখন প্রতি কেজি আদা এবং রসুন একই দামে ২০০ থেকে ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সবজির দাম বাড়ার পেছনে কুয়াশাকে দায়ী করেছেন কাওরান বাজারের পাইকারি বিক্রেতারা। তারা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বেশি কুয়াশা পড়ছে। এতে নির্ধারিত সময়ে পণ্যবাহী ট্রাক আসছে না। এতে ঢাকায় তুলনামূলক পণ্য কম আসছে। ফলে দাম বাড়ছে।
এদিকে কারসাজি রোধ করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের উপায় বের করতে রোববার বৈঠকে বসছেন সরকারের চার মন্ত্রীসহ উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে সভায় কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত থাকবেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.৪১ শতাংশ। ওই সময় খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.৫৮ শতাংশ। আগামী জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!